হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোবায়েদুর রহমান : ঈদের আগে রোজার সময় অনেক গুলি ঘটনা ঘটেছে। সে গুলির ওপর সংক্ষেপে আলোকপাত করবো। দেশে কোনো রাজনীতি নাই। রাজনীতির অঙ্গনে মনে হচ্ছে কবরের শান্তি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি রাজনীতির বাইরের বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা ছাড়া বিকল্প নাই। তবে সে গুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এক হিন্দু ভদ্র লোক ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি গিয়েছিলেন থাইল্যান্ড।এর পর কি হয়েছে, তার লেখাতেই পড়ুন,“ব্যাংকক সুবর্ণভুমি এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি লাগেজ নিবো জন্য। সামনে একটা এল ই ডি ডিসপ্লে। তাতে নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন ভেসে আসছে। হঠাৎ একটা সরকারী বিজ্ঞাপন। গৌতম বুদ্ধের মাথার একটা ছবি আর লেখা।
Disrespect to Buddha is wrong by law. Buddha is not a decoration piece he is the father of all Buddhists.
Respect is common sense.
মানে হচ্ছে, “বুদ্ধের প্রতি অশ্রদ্ধা আইনত দন্ডনীয়। বুদ্ধ কোন ডেকোরেশন পিস নয়, তিনি সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর পিতা।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন একটি সাধারণ কান্ড জ্ঞান।”
প্রিয় পাঠক, এই হিন্দু ভদ্র লোকের লেখা সম্পর্কে আমি যা কিছুই লিখছি সব কিছুর ডকুমেন্ট হাতে নিয়েই লিখছি। এয়ার পোর্টের ডিসপ্লে স্ক্রিনে যা লেখা ছিল সেটি আপনারা দেখলেন। এখন ঐ ভদ্র লোক যে মন্তব্য করেছেন সেটিও নিচে হুবহু তুলে দিচ্ছি। আমি পুনরায় বলতে চাই যে, তার মন্তব্য যা নিচে তুলে দিলাম সেটি আন কাট, আন এ্যাব্রিজড্ এবং আন এডিটেড। তিনি বলছেন, “এতে থাইল্যান্ড চৌদ্দশো বছর পিছয়ে যায়নি। বরং আধুনিক বিশ্বে ধর্ম অবমাননাকে জাতিসংঘ যে মানবাধিকার লংঘন বলে ঘোষণা দিয়েছে সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে এই বিজ্ঞাপনে। এখানে খুব স্পষ্ট ভাবে বলে দেয়া হচ্ছে তুমি যেই দেশে ঢুকতে যাচ্ছো তার সবচেয়ে মুল্যবোধটা কী সেটা জেনে এই দেশে ঢোকো। এইটারে সন্মান না জানাইতে পারলে ভাগো।
আর আমাদের দেশের সোকল্ড মুক্তমনারা নবী রসুলরে নিয়া পর্ণো গ্রাফি রচনা করে। সেইটারে বলে মুক্ত চিন্তার চর্চা। আর তারে কেন পুলিশ দিয়া পাহারা দিয়া রাখা হয় নাই সেইটা নিয়া তারা গগণ বিদীর্ণ করে।
আয় দেখি বুকের পাটা কেমন, থাইল্যান্ডে আইস্যা মুক্ত চিন্তার চর্চা কইর্যা যা। চৌদ্দ শিকের পিছনে ভইর্যা বুংগা বুংগা দিবো এরা।
বাংলাদেশের এয়ার পোর্টেও একদিন এমন লেখা থাকবে Disrespect to religion is a crime ধর্ম অবমাননা একটি অপরাধ।”
আমার আফসোস হয় যে, বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামের প্রতি যখন তখন কটাক্ষ করা হয় সেটি সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্যকেও আহত করে। অথচ, এক শ্রেণীর মুসলমান, যারা সেক্যুলারিজমের বড়াই করে,তারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল এবং মুক্তমনা জাহির করার জন্য নিজ ধর্মকে আক্রমণ করে। তবে ওরা ভুলে গেছে যে, পুচ্ছ লাগালেই দাঁড় কাঁক কোনো দিন ময়ূর হতে পারে না।
\দুই\
ধমর্, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে সেক্যুলারদের উন্মত্ততা এবং বিকারগ্রস্থতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এদের স্পর্ধা এত দূর বেড়েছে যে, এরা এখন পবিত্র অজু, আজান, রোজা, নামাজ প্রভৃতি শব্দও বদলাতে চায়। অবশ্য সব সেক্যুলার এই মানসিক বিকৃতি দেখাচ্ছে না। দেখাচ্ছে তারাই যারা বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘাড়েও বন্দুক রেখে ওরা বিগত ৭ বছর শিকার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ৮ম বছরে আওয়ামী লীগ সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ওদেরকে আংশিকভাবে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার ফলে ওরা এখন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। এদেরই কোনো কোনো নেতা টেলিভিশনে গিয়ে টক’শোতে যে সব মারাত্মক আপত্তিকর কথা বলছে সেটি অন্য কোনো সময় হলে তাদের কপালে অন্য কিছু লেখা থাকতো। আওয়ামী লীগই বলে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এই কথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বলে যাচ্ছেন। অথচ, আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করা বাম সেক্যুলাররা টেলিভিশন টক’শোতে গিয়ে শুধু গর্হিত আচরণই করছেন না, পবিত্র ইসলাম নিয়ে অমার্জনীয় কটুক্তিও করছেন। সেক্যুলার গিরি ফলাতে গিয়ে তারা এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হয় ইচ্ছা করে বিকৃত করছেন, না হয় জেনে না জানার ভান করা অর্থাৎ জ্ঞানপাপীর ভ‚মিকা নিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে বাম সেক্যুলারদের এক নেতা একটি টেলিভিশন টক’শোতে অংশ নিতে গিয়ে যে সব ফালতু কথাবার্তা বললেন তাতে মনে হলো যে, এদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশই যে মুসলমান সে কথা তারা বেমালুম ভুলে গেছেন, অথবা জেনেও চেপে গেছেন। ওরা আরো একটি কথা ভুলে যায় যে, বাংলাদেশ ওআইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র।ওআইসির যে ৫৭ টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে ৩য় বৃহত্তম। এদেশে মুসলমানরা তাদের ধর্মকে সন্মান করে, একই সাথে তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ে উদার মনোভাব পোষণ করে। বাংলাদেশের সেক্যুলাররা দেশের ইসলামী পটভ‚মিকে সন্মান করাতো দূরের কথা, সেটিকে গ্রহণ করতেও পারেনি। এসব কথা বলেছেন একজন পেশাদার ক‚টনীতিক বা ক্যারিয়ার এ্যাম্বাসেডর। তার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি কিন্তু বিএনপি-জামায়াত বা ইসলামী ঘরানার কোনো মানুষ নন। তিনি বরং সেক্যুলার ঘরানার লোক। আর এসব মন্তব্য করেছেন একটি ইংরেজি সাপ্তাহিকে যেটি সেক্যুলার মতাবলম্বী বলে চিহ্নিত।
\তিন\
টক’শোর এই বাম ঘরানার আলোচক হাতে একটি বই নিয়ে এসেছিলেন। শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের সচিত্র বই ছিল সেটি। বইটি নেড়ে চেড়ে দর্শকদের দেখিয়ে অত্যন্ত বিদ্রপাত্মকভাবে তিনি এর সমালোচনা করছিলেন। বইটির উন্নতমানের প্রকাশনার কথাও বলছিলেন। কিন্তু আলোচনা শুরু করতেই বোঝা গেল, তিনি বইটির প্রশংসা করতে আসেননি, বরং এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে এসেছেন। তিনি দেখালেন, বইটিতে স্বরে ‘অ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘অজু’। ‘আ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আজান’। ‘ন’ চেনাতে ‘নামাজ’। ‘র’ চেনাতে ‘রোজা’। তার বক্তব্য, এর উদ্দেশ্য হলো, শিশু মনের ওপর ইসলামের প্রভাব সৃষ্টি করা। আর এটা খুবই অন্যায় কাজ। ‘অ’-তে অজগর, ‘আ’-তে আম-এত দিন লেখা হয়ে আসছিল। সেটা কেন বদলানো হলো? কিন্তু মুসলমানের দেশে ‘ব’-তে যখন ‘বলি’ লেখা হলো, তখন এসব সেক্যুলারকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বললেন যে, এসব ইসলামি শব্দ ব্যবহারের কারণেই তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ এই সেক্যুলার বাংলাদেশের স্কুলে ইসলামের কোনো উপস্থিতি থাকতে পারবে না। কেন পারবে না, এর কারণ হিসেবে তিনি ক্লাসের ১২ শতাংশ অমুসলিম শিক্ষার্থীর কথা বলেননি। তদুপরি তিনি বরং বলতে চাইলেন যে, বাংলাদেশের স্কুলের শিশুদের ইসলামের কথা বলা হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক। তাদের কিছুতেই ইসলামের কথা শোনানো যাবে না। ইসলামি শব্দ শেখালে তারা জঙ্গি হয়ে যাবে। আসলে এটি আলোচকের চরম অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
ব্যাপারটি এতই আপত্তিকর, কুৎসিত এবং নোংরা যে, এ সম্পর্কে আর কোনো আলোচনা করার প্রবৃত্তি আমার হচ্ছে না। ইসলাম বিরোধীতায় এদের মন এতটাই বিদ্বিষ্ট এবং আচ্ছন্ন হয়ে গেছে যে ওরা মনে করে যে, ইসলামী শিক্ষা পেলে এবং ইসলামী শব্দ গুলো শিখলে কিশোর এবং তরুণরা নাকি সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়বে। এই যদি এদের বিদ্যা এবং জ্ঞানের দৌড় হয় তাহলে এদেরকে করুণা করা ছাড়া আর কি বা বলার আছে।
ঐ ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট বলছেন যে, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কোনো সময়ই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। তারা কোনো সময়ই তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। কারণ তাদের আন্দোলন ছিল এলিটিস্ট আন্দোলন। তারা এলিটদের অর্থাৎ অভিজাত বা বড় লোকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তারা আলোচনায় আসে তখনই যখন ক্ষমতাসীন দল তাদেরকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আন্দোলনে মাঠে নামিয়ে দেয়। তারা যে বিষয়টি ভাবতে পারেনি সেটি হলো এই যে, এখন বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটা ইউ টার্ন নিয়েছে। বাতাস ধীরে ধীরে ঘুরে যাচ্ছে। এখন রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছে ইসলাম। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সেক্যুলাররা তাদের ধর্ম নিরপেক্ষতার খোলস কিছুটা ছেড়ে দিয়ে তারা চেহারায় ইসলামী রং লাগানোর চেষ্টা করছে।
এখন বাম সেক্যুলার ঘরানা হালে আর পানি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তারা ফাঁটা বাঁশে আটকে গেছে। উদার নৈতিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এই লেখক এবং পত্রিকাটির মতে আজ যদি রাজনৈতিক রেজিমেন্টেশনকে কিছুটা রিল্যাক্স করে দেওয়া হয়, যদি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে মিটিং মিছিল করার কিছুটা হলেও সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ওরা অবাক দৃষ্টিতে দেখবেন একটি ভিন্ন চিত্র। তারা দেখবেন যে, জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রবক্তা দলগুলির ওপর দমন নীতি চালানো হলেও তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি।
\চার\
বাম ঘরানার সেক্যুলারদের শক্তির উৎস কোথায়? এব্যাপারে স¦য়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, তাঁর সমর্থনের ফলেই বাম ও সেক্যুলার ঘরানার লোকরা জিরো থেকে হিরো বনে গেছে। আজ যদি তিনি তাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন তাহলে আগামীকাল তারা জনরোষ থেকে বাঁচার কোনো জায়গা পাবে না।
তবে এসব কথা তাদের কানে ঢোকেনি। তাই এই ঘরানার অন্যতম নেতা সুলতানা কামাল বলেছেন যে, সুপ্রিম কোর্টে যদি মূর্তি না থাকতে পারে তাহলে দেশে কোনো মসজিদও থাকবে না। তিনিও জনরোষের মুখে পড়তে যাচ্ছিলেন। তবে সরকারের প্রটেকশন তাকে এখনও রক্ষা করছে। ঐ কলামে বলা হয়েছে যে, যখন গণজাগরন মঞ্চের কয়েক জন বøগার পবিত্র কুরআন, রসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং ইসলাম বিরোধী জঘন্য বøগ দিয়েছিল তখন যদি সরকার তাদেরকে রক্ষা না করতো তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নতর হতো।
আজ খোদ ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যত্র যদি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা যায় তাহলে দেখা যাবে তরুণী ও যুবতী সহ সব বয়সের মহিলাদের একটি বিশাল অংশ হিজাব করছেন। মসজিদে যুবক ছেলেদের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদার নৈতিক ঐ লেখক এবং পত্রিকা গুলোর মতে সরকার বিশেষ করে বাম ও সেক্যুলার ঘরানার লোকজনকে এসব বিষয় বিবেচনার মধ্যে নিতে হবে। যদি তারা সেটি না করে তাহলে যেদিন রাজনীতি তার বন্ধ দুয়ার থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে সেদিন. এই সব ইসলামবিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে এতিমের মতো অসহায় ভাবে ঘোরাফেরা করবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।