Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামগঞ্জে কাউন্সিলকে ঘিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগ

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অতিথি নেতাদের ভিড়ে কোণঠাসায় প্রকৃত নেতৃবৃন্দ
এস এম বাবুল (বাবর), ল²ীপুর থেকে : জেলার রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ উপজেলার ব্যাপী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠলেও দলীয় বিভক্তির কারনে নিজেদের অভ্যন্তরে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদসহ গুরুত্বপূর্ন পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত ও অভ্যন্তরীন কোন্দল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগে শফিক-শাহাজান গ্রæপ দৃশ্যমান থাকলেও বর্তমানে আরো কয়েকটি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে আছে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগ। এখানে দলের আদর্শের চাইতে ভাইয়ের আদর্শ নিয়ে সবাই ব্যস্ত। বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিতে আসা অতিথি নেতাদের ভিড়ে কোনঠাঁসা অবস্থায় প্রকৃত আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ পনের বছর আগে গঠিত রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিকবার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারন করা হলেও রহস্যজনক কারনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্ধ সম্মেলনের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারন করেন। আগামী ১৫ জুলাই রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্তভাবে নির্ধারন করা হয়। জেলা কমিটি একাধিকবার রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনের জন্য তাগিদ দিলেও বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ জেলা কমিটির নির্দেশনাকে কোনরুপ গুরত্ব না দিয়ে নানান অজুহাতে সময় ক্ষেপন করে আসছে। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান কমিটিতে দায়িত্বরত অনেক নেতা নতুন কমিটিতে স্থান পাবেনা এমনটি নিশ্চিত হয়ে সম্মেলন নিয়ে তাল বাহানা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আ.লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানায়, আগে দলে শফিক-শাহাজান গ্রæপ দৃশ্যমান থাকলেও বর্তমানে ৫-৬ গ্রæপে বিভক্ত হয়ে আছে দল।
আগামী ১৫ জুলাইর সম্মেলনে আ.লীগের সভাপতি হিসেবে জেলা আ.লীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু, রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ মোঃ শাহাজান কন্ট্রোকটার এবং সাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাকেব চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খাঁন মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট্য শিল্পপতি আলহাজ্ব আনোয়ার খাঁন বাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে।
একদিকে প্রাথীদের দলীয় হাই কমান্ডে তদবির অন্যদিকে আবারো সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনের শঙ্কার মধ্যেও উপজেলার সর্বত্র ১৫ বছর পরে সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা বিরাজমান। কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সংঘাত-সংষর্ষ বাধিয়ে সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকরা।
দুর্নীতির সাথে সর্বদাই আপোসহীন জননেতা জাসদ থেকে নির্বাচিত সাবেক সফল উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রমশ সাংঘটনিক ভাবে দলটি সুসংঘঠিত হতে থাকে। শফিকুল ইসলাম আ.লীগে যোগদানের পর বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকম রুহুল আমিনসহ শক্তিশালী একটি গ্রæপ পর্যায় ক্রমে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগে চলে আসেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম দলীয় গ্রæপিংয়ের কারনে পরাজিত হলেও ভোটের ব্যবধান ছিলো সামান্য। ৯৬সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও দলের হাল শক্তভাবে ধরে পর্যায়ক্রমে তিনি আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে দাড় করাতে সক্ষম হন। এসময় দলীয় শৃঙ্খলা বিঘœকারী ও জনগনের সাথে আ.লীগ সরকারের দুরত্ব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থনে থাকায় দলের কয়েকজন নেতা আলহাজ্ব মোঃ শাহাজান কন্ট্রেকটারকে জাসদ থেকে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগে আনেন। মূলত তখন থেকেই রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগে দলীয় আদর্শের চেয়ে ভাইয়ের আদর্শের চর্চা শুরু হয়। শাহাজান সাহেব আ.লীগে যোগদানের পর ২০০১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে শাহাজান সাহেব আ.লীগ দলীয় প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে আসছেন।
২০০২ সালে শাহাজান সাহেবের এলাকাস্থ ভাটরা উচ্চ বিদ্যায়ল মাঠে আ.লীগের সম্মেলনে আলহাজ্ব শাহাজানকে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকম রুহুল আমিনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনিত করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে ৬৭সদস্য বিশিষ্ট্য রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। ঐ কমিটির অনেক সদস্য মৃত্যুবরণ করনে। অনেকই দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছেন।
১৯৭৬ সালে ধানমন্ডি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দয়িত্ব গ্রহণের মধ্যদিয়ে রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক কার্য-নির্বাহী সদস্য, ধানমন্ডি থানা আ.লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য, ল²ীপুর জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি, আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন উপকমিটির সাবেক সহ সম্পাদক, ১/১১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পরিচালনার জন্য আ.লীগের মনোনীত আইনজীবি প্যানেলের সক্রিয় একজন আইনজীবী এ্যাডভোকেট শফিক মাহমুদ পিন্টু। ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ল²ীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে দয়িত্বপ্রাপ্ত এমপি নাজমা আক্তারের মাধ্যমে তিনি রামগঞ্জের প্রায় দু’শতাধিক ছেলে/মেয়েকে বিনা পয়সায় বিভিন্ন স্থানে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তৃণমূলের ও দলের নির্যাতিত বৃহৎ একটি অংশ এবং তরুন প্রজ¤œ এ্যাডভোকেট শফিক মাহমুদ পিন্টুর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আসছেন ।
গত দুবছর থেকে বিএনপি দলীয় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম জিয়াউল হক জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন আক্তার হোসেন খাঁনের ভাই শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খাঁন মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট্য শিল্পপতি আলহাজ আনোয়ার হোসেন খাঁন বাবুল সামাজিক কর্মকান্ডের মাঝে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের একটি অংশ তাঁর আনুকল্য লাভে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, বর্তমানে তিনি রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সুবিধাভোগী একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আকম রুহুল আমিন, প্রবীন আ.লীগ নেতা আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনির হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসনে বাচ্চু, পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহম্মেদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া আক্তার শিউলি, আবু তাহের পাটওয়ারী, মোঃ আকবর হোসেন, নেওয়ামুল মাওলা মিরন, মোদাচ্ছের হোসেন বেলালসহ বেশ কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে আকম রুহুল আমিন জাসদ থেকে, বেলাল আহম্মেদ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে, আবু তাহের পাটওয়ারী জাতীয় পর্টি থেকে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ কিংবা আ.লীগে যোগদান করেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।
রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দলে কোন সম্মেলন না হওয়ায়- নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ তৈরী হয়নি। ছাত্রলীগ-যুবলীগের যে সব নেতাকর্মী রামগঞ্জ কিংবা ঢাকা চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-মামলা মোকাবেলা করে ৯০-র দশক পর্যন্ত আ.লীগের রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখেছেন তাদের অকেকই এখন রাজনীতির মাঠে দেখা যায় না। দুঃসমায়ের এসব পরীক্ষিত নেতা কর্মীদের দলে স্থান না হওয়ায় সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছে রামগঞ্জ উপজেলা আ.লীগ। বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতারা সব সময় দলে তাদের নিজেদের সুযোগ সুবিধার জন্য আসেন। আ.লীগের জন্য তাদের কোন টান থাকে না। তাদের কেউ আসে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান হতে কিংবা কমিটির কোন পদে থেকে গায়ে আ.লীগের স্টিকার লাগিয়ে দেশে বিদেশে তাদের সম্পদ রক্ষা ও বৃদ্ধি করার জন্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ