Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে এখনও ঈদের আমেজ কর্মব্যস্ত শহর এখনও ফাঁকা

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হওয়ার পর নগরী জুড়ে এখনো চলছে ঈদের আমেজ। শনিবারসহ তিন কর্মদিবসের পরেও এখনো জমেনি রাজধানী শহর ঢাকা। সড়কে নেই তেমন কোলাহল। নেই লম্বা যানজট। নেই ট্রাফিক পুলিশের ব্যস্ততা। সবাই চলছে নিজ গতিতে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত রাজধানীর সড়কগুলোর চিত্র ছিল এমনই ফাঁকা। যেখানে গুলিস্তান থেকে শ্যামলী যেতে সময় লাগতো ৩/৪ ঘণ্টা, সেখানে এখন লাগছে মাত্র ২০ মিনিট। এ যেন অবিশ্বাশ্য ব্যাপার।
যানজটের চিরচেনা এ শহরের প্রতিটি রুটে যানবাহনও চলছে কম। ফুটপাতে নেই হকার। সড়কে দেখা যায়নি বাসের জন্য সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করে থাকা মানুষ। শুধু রাস্তার দৃশ্যই ফাঁকা নয়। অফিস আদালতেও উপস্থিতি কম। তবে ব্যতিক্রম শুধু নগরীর বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কগুলোতে। এখানে সকাল থেকে রাত অবধি নারী শিশুসহ সব শ্রেণী পেশার লোকজনের ভিড় চোখে পড়ার মতো। ব্যস্ত রাজধানীর প্রাণের স্পন্দনই যেন এখন এই পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোই। গতকাল শনিবার রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ রাস্তাই এখনো অনেকটা ফাঁকা। রাস্তায় এখন রিক্সার দাপটও অনেক কমে গেছে। বেশিরভাগ চালক গ্রামের বাড়িতে ঈদের আনন্দ ভোগ করতে যাওয়ায় নগরীতে রয়েছে রিক্সারও সঙ্কট। কাউন্টার বাসের আধিক্যও আগের চেয়ে  অনেক কমে গেছে। অনেকটা ফাঁকা নগরীতে স্বস্তির সাথে রাস্তায় চলতে পারছেন নগরবাসী। রাজধানীর অনেক বিপণী বিতান এখনো খুলেনি। জমে উঠেনি নগরীর বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজারগুলো। তবে সীমিত পরিসরে বাজার বসলেও অনেক বাজারেই ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতিও অনেক কম। অনেক পাড়া মহল্লার দোকানপাটেও এখনো তালা ঝুলছে।
রাস্তায় গাড়ি চলাচল করেছে খুব কম। মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলো এখনও পুরাদমে খোলা হয়নি। সর্বত্রই এখন অনেকটাই নীরবতা। রাস্তায় কয়েকটি গণপরিবহন চলেও প্রাইভেট গাড়ি খুবই কম। অনেকে মটর সাইকেলে চড়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। রাজধানীর পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝল এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বলেন, অন্যান্য দিনের মতো ঢাকায় মানুষের ভিড় নেই। রাস্তাগুলো অনেকটাই ফাঁকা। পথে চলাচল করতে কোনো ধরনের যানজটে পড়তে হচ্ছে না কাউকে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত জামাল উদ্দিন বলেন, রাজধানী ঢাকা যে কত সুন্দর তা এখন না দেখলে বুঝা যাবে না। যানজটও নেই কোলাহলও নেই। ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। বিনোদন কেন্দ্রে যাবো। রাজধানীতে রিকশা চালান কবির। গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তিনি বলেন, মহল্লায় লোকজন দেখা গেলেও শহর পুরোই ফাঁকা। রাস্তায় যানজট নেই তাই ইনকামও একটু বেশি হয়েছে।
পরিবহন প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটিতে রমজানের শুরু থেকে ঈদ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি মানুষ রাজধানী ঢাকার বাইরে গেছেন।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের সময়ে ছুটি ভোগ করতে না পারলেও পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকরা এখন ঈদের বিলম্ব ছুটি ভোগ করছেন। ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিন তারা গাড়ি চালালেও এখন তারা আছেন ঈদের ছুটিতে। ফলে অনেক পরিবহনের গাড়ি এখনো রাস্তায় নামেনি। বিশেষ করে কাউন্টার ভিত্তিক বাসের বেশিরভাগ গাড়ি এখনো বসা রয়েছে গ্যারেজে। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, আজকালের মধ্যেই কাউন্টার ভিত্তিক সব গাড়ি রাস্তায় নামানো হবে। আর ঈদের পরে যাত্রীদের চাপ কম থাকে বলেই এ সময়টাতে ছুটিতে থাকেন অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে বিভিন্ন গন্তব্যে প্রায় দুশতাধিক কাউন্টার গাড়ি চলাচল করে। ঈদের আগে এসব পরিবহনের চালক, হেলপার এবং টিকিট বিক্রেতারা থাকেন মহাব্যস্ত। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকেন তারা। এমনকি ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিনও রাস্তায় চলে অনেক পরিবহন। তাই ঈদের পরে পরিবহন শ্রমিকরা ভোগ করেন ঈদের বিলম্ব ছুটি। আর এ সময়টাতেই কিছুটা পরিবহন সঙ্কট থাকে রাজধানীর রাস্তায়। এদিকে নগরীর বাস ট্রেন ও নৌ-টার্মিনালের দৃশ্য একেবারেই বিপরীত। এসব টার্মিনালে দেখা গেছে ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরে আসছে মানুষ। আগামী এক দু›দিনের মধ্যেই আবারো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে পুরো রাজধানী ঢাকা।
গতকাল সকাল থেকেই দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাস লঞ্চ এবং রেল স্টেশনে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড়। ঈদের আগে বাড়ি যেতে যাত্রীদের ভিড় ছিল গ্রামের দিকে যেতে আর এখন সবাই ফিরছেন ঢাকার দিকে। গ্রাম থেকে মানুষজন ঢাকায় ফিরে আসলে আজ কালের মধ্যেই ঢাকা আবারো ফিরে যাবে তার চিরচেনা সেই আগের রূপে। শুরু হবে রাস্তায় যানজট, কালোধূয়া আর যানবাহনের বিরক্তিকর হর্ণ। রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে এখন ঢাকামুখী আগতদের পদভারে মুখরিত। টার্মিনাল থেকে নিজ গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। সিএনজি কিংবা টেক্সীক্যাবে হাঁকা হচ্ছে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া। অন্য কোন উপায়ন্তর না থাকায় বাধ্য হয়ে যাত্রীদের যেতে হচ্ছে বেশি ভাড়াতে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ