Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকা ইতিহাস বিকৃতির শাস্তি হয়নি এক বছরেও

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়নি কোন তদন্ত
এহসান আব্দুল্লাহ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরণিকায় ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে এক বছরেও নেয়া হয়নি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। একই সময়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কমিটি চার দফা বৈঠক শেষে এপ্রিলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী শাস্তি হয়নি অভিযুক্ত কারোই। ফলে ঘটনার মূল হোতারা বহাল তবিয়তেই কর্মরত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে।
গত বছরের ঐ স্মরণিকায় প্রয়াত সেনাশাসক জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের বৃত্তান্ত তুলে ধরতে গিয়ে স্মরণিকার অষ্টাদশ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয় ‘তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংক্রান্ত আলোচনা সভায় বিষয়টি লক্ষ্য করা হলে অন্যান্যদের প্রতিবাদের মুখে সেটি প্রত্যাহার করে নেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। পরবর্তীতে সেটি ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। সাধারণ ছাত্রদের প্রতিবাদের একপর্যায়ে স্মরণিকার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিক অব্যহতি দেয়া হয়। রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়ে বর্তমানে রেজাউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সেই সময়ে সাধারণ ছাত্রদের সাথে সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবি করে এবং রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার বাসভবন ঘেড়াও করে রাখে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে দফায় দফায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটায় এবং বাসভবন সংলগ্ন রাস্তা অবরোধ করে উপাচার্য বিরোধী নানা শ্লোগান দিতে থাকে একপর্যায়ে তারা উপাচার্যের ব্যবহৃত গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ঐ সময় তারা গণমাধ্যমকর্মীদের উপরও হামলা চালায় এবং তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করে। খোদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনায় এরকম ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরী হয় সরকারের বিভিন্ন মহলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য চার সদস্য হলেন- অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, এসএম বাহালুল মজনুন চুন্নু ও অ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহউদ্দিন। এ চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য।
চার দফা বৈঠক শেষে এপ্রিলে তদন্ত কমিটি ঘটনার একটি অংশ ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও ঘটনার অন্য অংশ উপাচার্যের গাড়িতে ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে কোন প্রতিবেদন জমা দেয়নি। নিয়মানুযায়ী কোন তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে সে মাসের সিন্ডিকেট সভায় ঐ প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায় সিন্ডিকেটে এই তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যপারে কোন আলোচনা করা হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন শারীরীক অসুস্থতার কথা বলে প্রতিবেদকের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। কমিটির আরেক সদস্য এ্যাডভোকেট এ এফ এম মেজবাহউদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাজ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করে জমা দেয়া আমরা তা দিয়েছি। এখন বিষয়টি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন হলে বাকিটা দেখা যাবে।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেদন সম্পূর্ণ করে স্বাক্ষর সহ কমিটির নিকট জমা দিয়ে দিয়েছি। এখন প্রতিবেদনের আলোকে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। ছাত্রলীগের হামলা বিষয়ে তদন্ত কাজের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনো তদন্ত করা হয়নি। কবে নাগাদ এই বিষয়ে তদন্ত সম্পূর্ণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন এবিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধানই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জানার জন্য তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনকে মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলেই আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবো। তবে যার কারণে এই বিষয়টি ঘটেছে আমরা তাকে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়েছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন কেন তৈরী হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ