Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামী নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবিসিদ্দিক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে প্রস্তুতি। জনগণের কাছে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী, মপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট চাইতে শুরু করেছেন। বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও সম্প্রতি ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। বিএনপি সরকারের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ, নির্বাচনী সহায়ক সরকার দাবি করছে। বলছে, বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবে না। আর আওয়ামীলীগ বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধিনেই নির্বাচন হবে, আর বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেবে। শেষ পর্যন্ত কি হয়, সেটাই দেখার বিষয়। পৃথীবির প্রায় সব দেশেই ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের অধীনই নির্বাচন হয়ে থাকে। কারন, তারা গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ^াসী। নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দ মত সরকার ক্ষমতায় বসাবে, সেটাই নিয়ম। তারা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা ব্যক্তির ক্ষমতার চেয়ে জনগণের ক্ষমতাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে মানুষ অতীতে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সবই গণতন্ত্রের জন্য। একটি স্বাধীন দেশ হবে, সেখানে থাকবে গণতন্ত্র তথা ভোট ও ভাতের অধিকার। থাকবে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা, কথা বলার অধিকার থাকবে, ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য কথা বলার অধিকার থাকবে, থাকবে বাক-স্বাধীনতা। শেরে-ই বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নের্তৃত্¦ে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সবই স্বাধীকার-স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হতে চললো, এখনও এদেশের মানুষ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক অধিকার পায়নি। ভোটের অধিকার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোটাররা। কখনও একক শাসন, কখনও সামরিক শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র বাধাগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতায় ঠিকে থাকার লড়াইয়ে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত। রাজনৈতিক দলগুলো যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন বলে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। আর ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারা সে কথা ভুলে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছেই। আর সেই আন্দোলন-সংগ্রাম ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতায় ঠিকে থাকার। রাজপথ অবরোধ, জ¦ালাও-পোড়াও, ভাংচুর, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, রাজপথে পিঠিয়ে হত্যা- এসব চলছে। কি বিচিত্র এই দেশ! প্রসঙ্গক্রমে অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোর চিত্র তুলে ধরা হলো। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয় ৫৪.৯%। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রƒয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করে। তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয় ৫১.৩%। তৃতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। নির্বাচনে এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয়লাভ করে। মোট ভোটারের ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করে। এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই জয়ী হয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে। মোট ভোটারের মধ্যে ৫২.৫% ভোট সংগৃহীত হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রƒয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয়লাভ করে। ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয় ৫৫.৪%। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনীতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয় মাত্র ২১%। ওই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টিই লাভ করে। ওই বছর জুনে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ০.৬৭% এবং দলীয় প্রার্থীরা ৭৪.৮২% ভোট পায়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২৯ আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে বিএনপি ১৯৫টি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১৭টি, ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট ১৪টি, ইসলামী ঐক্য জোট ৩টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৬৩ আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩০টি, জাপা (২৭), জাসদ (৩), ওয়ার্কার্স (২) ও এলডিপি (১)। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনের বাস্তবতাতো সবারই জানা। এ দেশের মানুষ আর চায় না কোন বিতর্কিত নির্বাচন, চায় ভোটের অধিকার। আর চায় ২০১৮ সালের নির্বাচনটি হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সব দল অংশ নেবে, ভোটাধিকার ফিরে পাবে দেশের মানুষ, এটাই সবার আশা।
লেখকঃ সাংবাদিক



 

Show all comments
  • md. mamun or rashid ২ জুলাই, ২০১৭, ১১:২১ এএম says : 0
    N/A
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ