পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেও গত এক বছরে তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ঘটনা। জঙ্গি হামলায় জড়িত আটজন পরে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হলেও পাঁচ জঙ্গি এখনও ধরা পড়েনি। তাদের মধ্যে তিনজনকে বিপজ্জনক ও জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আজ ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। আজ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হলি আর্টিজান চার ঘন্টা খোলা থাকবে। সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত। হামলার এক বছর পরও কূটনীতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত ঢাকার অভিজাত এলাকাটি নিয়ে তৈরি হওয়া আতঙ্কের রেশ পুরোপুরি কাটেনি। আতঙ্কের সাথে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে ভাড়াটিয়া সঙ্কটে ভুগছে ওই এলাকার বহু ভবনের মালিকরা। তবে জড়িতদের গ্রেফতার, মদদদাতা ও অর্থের যোগানদাতাসহ সংশ্লিষ্ট্র জঙ্গীদের গ্রেফতারে সক্রিয় রয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা। গোয়েন্দারা বলছেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তামিম চৌধুরী, মেজর (অব.) জাহিদ, হাসনাত করিম ও রাজীব গান্ধীসহ কয়েকজন এবং সরাসরি হামলাকারীরা ছাড়াও পাঁচ জঙ্গির বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। তারা হচ্ছে: সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, ডাক্তার রোকন ও ছোট মিজান। বিদায়ী অর্থ বছরের এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য গুলশান হামলাকেই দায়ী করে আসছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলছেন, অনেক বিদেশি চলে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পিছিয়ে যায়। গত ২৮ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, শিগগিরই গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার নির্ভুল ও নিখুঁত অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হামলায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল তাদের কেউ বেঁচে নেই। হামলা সংঘটনে নানাভাবে ভূমিকা রাখা আটজন এই এক বছরে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। মামলাটিতে গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। আমরা এখনো পাঁচজনকে খুঁজছি এবং তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এই মামলার তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসামি। মামলটির তদন্ত করছে সিটি ইউনিট। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা গত এক বছরে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ওই ঘটনায় সরাসরি যারা জড়িত ছিল অর্থাৎ যারা হামলা করেছিল তারা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। এর বাইরে ওই ঘটনার পরিকল্পনা, সহযোগিতা করা বা নানা ভাবে ভূমিকা রেখেছে এ রকম অনেককে আমরা চিহ্নিত করেছি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গি সোহেল মাহফুজ হলো গুলশান হামলার অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহের মূলহোতা। সে জেএমবির মূলধারার সঙ্গে যুক্ত ছিল। জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমির হয় সাইদুর রহমান। ওই সময় জেএমবির শুরা (নীতি নির্ধারণী) কমিটির সদস্যপদ পায় মাহফুজ। ২০১০ সালের দিকে সাইদুর রহমান গ্রেফতার হয়। এরপর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মাহফুজ। নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। পরে সে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়। এরপর থেকে সে নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহসহ আইটি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আরেক জঙ্গি রাশেদ পরিকল্পনাকারীদের একজন। হামলাকারী ৫ জঙ্গিকে হামলার আগে রাজধানীর বসুন্ধরার যে বাসায় রাখা হয়েছিল ওই বাসায় রাশেদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট গুলশান হামলায় দুবাই থেকে আসা ১৪ লাখ টাকা বাংলাদেশে গ্রহণ করে বলে তথ্য রয়েছে তদন্ত সংস্থার কাছে। দুবাইয়ে পলাতক মুফতি শফিকুর রহমান নব্য জেএমবিকে নিয়মিত অর্থ সহায়তা করতো। বাশারুজ্জামান ওই অর্থ সংগ্রহ করে মূল সমন্বয়ক তামিমের কাছে পৌঁছে দিতো। ডাক্তার রোকন সপরিবার সিরিয়ায় পলাতক রয়েছে। গুলশানে জঙ্গি হামলার আগে নিউ জেএমবির তহবিলে টাকা দেয় ডাক্তার রোকন। সংগঠনটির শুরা বোর্ডের এক সদস্য টাকা গ্রহণ করে। দুই দেশ ঘুরে হাত বদল হয়ে এ টাকা বাংলাদেশে পৌঁছায়। আরেক জঙ্গি ছোট মিজান গুলশান হামলাসহ নব্য জেএমবির দেশব্যাপী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেডের যোগানদাতা। পুলিশ জানায়, দুই মিজানের নেতৃত্বে গুলশান হামলার অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়। তাদের দুইজনের বাড়িই চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তাদের একজন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান যাকে এরইমধ্যে গুলশান হামলার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন ছোট মিজানকে খুঁজছে পুলিশ।
সূত্র আরো জানায়, তদন্ত শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে গুলশান হামলার ছক নিয়ে একটি মোটামুটি ধারণা পান তদন্তকারীরা। তার সঙ্গে আরও কিছু গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে জানতে পারেন, ওই হামলার পরিকল্পনা হয় গতবছর এপ্রিলের শেষ দিকে। পরিকল্পনা হয়, তারা ঢাকায় বড় ধরনের একটা কিছু করবে, যাতে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া কাভারেজ পাবে, পাশাপাশি বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে সেটি তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে। এ্ই লক্ষ্যে ঢাকায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য ঢাকার ছেলেদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গিরা। ঘটনার সময় ছবিগুলো তারা তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজানের কাছে পাঠিয়েছিল। তারা তখন ছিল শেওড়াপাড়ার একটি বাসায়। তামিম ও মারজান পরে কাকে, কোথায় সেসব ছবি পাঠিয়েছে সেটা জানা যায়নি। তাদের জীবিত ধরতে পারলে হয়ত সেসব জানা যেত। জঙ্গিরা ওখানে অস্ত্র এবং যেসব বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে, পাশাপাশি অপারেশনাল যেসব সামগ্রী, টিশার্ট, কেডস তারা কিনেছিল, সব মিলিয়ে এটি একটি ‘লো কস্ট’ টেররিজমের ঘটনা। এখানে খুব বেশি টাকা খরচ হয়নি। ৮-৯ লাখ টাকার বেশি লাগেনি। ওদের ভেতরেই মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেরা ছিল, তারাও টাকার যোগাড় করেছিল। হলি আর্টিজানের একেবারে লাগোয়া পশ্চিম পাশের ২১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভবনটির নাম সুবাস্তুু সেতারা। এই ভবনের ১৯টি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে এখন মাত্র ছয়টিতে ভাড়াটিয়া রয়েছে বলে জানান বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাইয়ুম। হলি আর্টিজান হামলার আগে সবগুলো অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়াটিয়া ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার পর যে আতঙ্ক শুরু হয়েছিল, তা মানুষের মন থেকে এখনও যায়নি। হলি আর্টিজানের ঘটনার কারণে এখন আগের মতো মানুষ বাড়ি ভাড়া নিতে আসছে না। এমনকি এই ঘটনার পর বহু ভাড়াটিয়া এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বাড়ি ভাড়াও অর্ধেক কমে যাওয়ার কথা জানান কাইয়ুম। আগে প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া ছিল দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বর্তমানে এক থেকে দেড় লাখ টাকায়ও নতুন ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। হলি আর্টিজান বেকারি যে বাড়িতে ছিল, তার উল্টোপাশে একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘লেকভিউ ক্লিনিক’। জঙ্গি হামলার সময় বুলেটে এই হাসপাতালটির একটি কাচ ভেঙেছিল। ক্লিনিকটির চিকিৎসক মাহবুব উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর পুরো এলাকায় নিরাপত্তাসহ নিয়মিত তল্লাশিরর কারণে ক্লিনিকে রোগী আসা কমে গেছে।
গুলশান পুলিশের ডিসি মোস্তাক আহম্মেদ খান বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর ৭৯ নম্বর সড়কের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে বেশ কিছুদিন। আতঙ্কের কারণে ভাড়াটিয়া না পাওয়ার ঘটনা ঠিক নয়। হলি অটিজেনে হামলার পর নিরাপত্তার বিষয়টিতে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে দেশে প্রচুর বিদেশি আসছে। পাশপাশি গুলশান বারিধারা এলাকার হোটেল-গেস্ট হাউজগুলোতে বিদেশিদের ভিড় লেগেই আছে। অধিকাংশ সময় সিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
দুর্বিষহ স্মৃতি
হলি আর্টিজান ঘিরে সেনা কমান্ডোদের অভিযানহলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সেই রাতটি ছিল বিভীষিকাময়। জঙ্গিরা রাতভর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছিল ২৫ জনকে। এর মধ্যে রেস্তোরাঁর স্টাফ ছিলেন ১৪ জন। হলি আর্টিজান বেকারির পাস্তা শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন শিশির সরকার। তিনি বলেন, রাত পৌনে ৯ টার দিকে হঠাৎ গেস্টদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে উঁকি দিয়ে অস্ত্রধারী জঙ্গিদের দেখতে পাই। এরপর জাপানি নাগরিকসহ কোল্ড রুমে ঢুকে পড়ি। আমি ভাবি, হয়তো ডাকাত বা বড় সন্ত্রাসী ঢুকেছে, তারা টাকা পয়সা নিয়ে চলে যাবে। আমরা দুজনই চিলে কোঠা বা কোল্ড রুমের দরজার রাবারের অংশটা ধরে রাখছিলাম। যেন বাইরে থেকে টেনে খুলতে না পারে। আমি কান পেতে আল্লাহ আকবর’ আর ফায়ারিংয়ের শব্দ শুনেছি। কিছুক্ষণ পর ফায়ারিংয়ের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২ টার দিকে চিলার বা কোল্ড রুমের বাইরে থেকে দরজা টানে জঙ্গিরা, খোলার জন্য। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা টেনে ধরে ছিলাম আমরা। কোল্ড রুমে ঠান্ডায় আমরা কাঁপতে ছিলাম। হঠাৎ দরজাটা খুলে যায়। দরজা খোলার পর আমি জঙ্গি রোহানকে দেখতে পাই। পরে পেপারে দেখে ওকে চিনেছি। এরপর আমাকে নিচে যেতে বললে, আমি সামনে গিয়ে বসি। গেস্টদের লাশ ও রক্ত ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছিল না।
সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে চিহ্নিত জড়িতরা হলেন, নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, অর্থদাতা সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, জাহিদুল ইসলাম, তারেক, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, খায়রুল ইসলাম পায়েল, আবদুল্লাহ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ। এছাড়া গ্রেফতার হয়েছে- রাজিব গান্ধি, রিগ্যান, বড় মিজান ও আবুল কাশেম। আর পলাতক রয়েছে- সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ, চকলেট, ছোট মিজান, মামুন, মুসা ও ডাঃ রোকন। এ ছাড়াও ওই হামলার পরদিন (২ জুলাই) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের আগে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে প্রথমে আটক করা হয় এবং পরে এ মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত ছিল এ রকম ৮জন গত এক বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত চার জনের মধ্যে তিনজন নিজেদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, মামলার তদন্ত কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। হলি আর্টিজানে হামলায় ভিকটিম যারা মারা গিয়েছে গত ১৯ জুন আমরা তাদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। হামলাকারীদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি, সেটি প্রক্রিয়াধীন। পলাতক পাঁচজনকে অথবা তাদের মধ্যে দুই একজনকে গ্রেফতার করতে পারলেই তদন্ত কাজ শেষ করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করার চেষ্টা করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
হলি আর্টিজান এখন
গুলশান দুই থেকে এক শ’ গজ উত্তরে সড়কে এগোতেই হাতের বায়ে র্যাংগস আর্কেড ভবন। এই ভবনের দোতলায় পাঁচশ বর্গফুট জায়গায় ছোট আকারে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি চালু করা হয়েছে বেকারি। ১০টি টেবিলে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা। নতুন এই হলি আর্টিজানের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শাহরিয়ার আহমেদ বলছিলেন, বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যনমঢ় ভিড় হয় বেশি। আগের মতোই বিদেশিরা ভিড় করেন বেশি। তবে আগের তো সেই পরিবেশ নেই। সবুজ লন নেই। তবু আমরা আমাদের সাধ্য মতো সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করি। হলি আর্টিজান এখন গত বছরের ১ জুলাই আগের হলি আর্টিজান বেকারিতে যখন জঙ্গিরা হামলা করে, তখন রেস্তোরাঁর ভেতরেই ছিলেন শাহরিয়ার আহমেদ। সারারাত জিম্মি অবস্থায় থেকে সকালে বেরিয়ে আসেন অন্যদের সঙ্গে, সেনা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর। শাহরিয়ার বলছিলেন, সেদিনের স্মৃতি মনে করতে চাই না। এত ভয়াবহ স্মৃতি যে এখনও তা তাড়া করে ফেরে। ভেবেছিলাম বাঁচবো না। নতুন জীবন পেয়েছি। আল্লাহর কছে হাজার শুকরিয়া। উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় তিন বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২০ জন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের এবং একজন ভারতীয়। এছাড়া জঙ্গিদের হামলার শুরুতেই তাদের আক্রমণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। রেঁস্তোরার ভেতরে রাতভর জিম্মি ছিলেন অন্তত ২৫ জন, যাদের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের সময় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাতের বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয় আরও অন্ত ৭ জনকে। অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর রেঁস্তোরা থেকে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পালাতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক রেস্তোরাঁকর্মী। এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।