Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজনীতির কাছে অর্থনীতির পরাজয়

বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সংসদে পাস হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে আগামী দুই বছরের জন্য নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক হার। বুধবার জাতীয় সংসদে এসব পরিবর্তন এনে পাস হয় অর্থবিল। বাজেটের অর্থবিলে এই পরিবর্তনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দেশের অর্থনীতিবিদেরা। অর্থনীতিবিদদের কেউ মনে করছেন জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, ভোটের রাজনীতির কাছে হার হয়েছে অর্থমন্ত্রীর।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, কর আদায়ের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত অর্থবিল পাসের সময় যে দুটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে বড় কথা হচ্ছে এর ফলে রাজস্ব আদায়ে কী পরিবর্তন আসবে? সংসদে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বাজেটের আকার ও বরাদ্দে কোনো পরিবর্তনের কথা শুনিনি। তবে এটা নিশ্চিত, এই পরিবর্তনে রাজস্ব আদায় কমবে। রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ভ্যাট ও আয়কর স¤প্রসারণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, করের আওতা বাড়িয়ে ও আদায়ের সক্ষমতা তৈরি করে আহরণে যে হ্রাস হচ্ছে, তা পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া দুই বছর পর যখন থেকে এই আইন কার্যকর করা হবে, তখন আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে একক হারে এটা বাস্তবায়ন হবে কি না। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ব্যবসায়ী স¤প্রদায়ের কাছে নতি স্বীকার করল সরকার। যে বড় সংস্কারের লক্ষ্য ছিল, তা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে নিতে পারল না। এটা সরকারের ব্যর্থতা। এ ঘটনাকে রাজনীতির কাছে অর্থমন্ত্রীর হার হিসেবে অবিহিত করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এই বাজেটে চমক বলতে ভ্যাট আইনটিই ছিল। রাজস্ব আদায় এই পরিবর্তনের জন্য কমে যাবে। সরকার এখন কোন দিকে সমঝোতা করবে, এটা ঠিক করতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী সমঝোতা হবে? ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে এ পরিবর্তন অর্থনীতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটের জন্য এমনটা করার প্রয়োজন হলে সরকার তা আগেই ভাবতে পারত। তাহলে নতি স্বীকার করে পরিবর্তন করতে হয়েছে এমনটা মনে হতো না। এর ফলে রাজনীতির কাছে অর্থমন্ত্রী নতজানু হলেন; অর্থনীতির পরাজয় হলো। আবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করায় এলোমেলো পরিস্থিতিতে বাজেট কাঠামো থেকে যাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বাজেটের ঘাটতিজনিত প্রতিক্রিয়ার সমন্বয় এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। বাজেটে রাজস্ব আদায়ে আয়কর থেকে ৩৬ শতাংশ ও ভ্যাট থেকে ৩৩ শতাংশ লক্ষ রাখা হয়েছিল। এই জায়গায় এখন একটা চাপ তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট অনেক কিছুর ওপর রাখা হয়নি। প্রচলিত উৎসের ওপর নির্ভর করেই ছিল। বাস্তবায়ন না হলে এখন ঘাটতির চাপ পড়বে। এখন সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়ন করতে হবে। যা অর্থনীতির জন্য দুর্বলতা তৈরি করবে। অর্থমন্ত্রী যদি ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট কাঠামো না করে একটু ছাড় দিয়ে বাজেট কাঠামো করতেন, তাহলে ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে চাপ কম পড়তো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ