বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ছাগলনাইয়া থেকে : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম) আসনে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জাসদ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ট্রুথ পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে আগাম মরিয়া হয়ে মাঠে নামছে। এসব দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর মাঠে ময়দানে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারণার ঢেউ শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামের বাজারেও লেগেছে। সামনে ঈদুল ফিতর। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ, দানখয়রাত এবং কৌশলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের যোগযোগ রক্ষা ও গণসংযোগ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এতে করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কদর বেড়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইফতার কেন্দ্রীক রাজনৈতিতে সভা, সমাবেশে প্রতিটি দলের নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করছেন।
চা দোকান, হোটেল, রেস্তোরা, স্কুল, মাদরাসা, কলেজসহ সবত্রই প্রার্থীদের আলোচনা চলছে। কে হবেন এ আসনের কর্ণধার। ফেনী-১ আসন ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত। এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে চলতি গত ৯ম সংসদ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার পৈত্রিক বাড়ী এ এলাকা থেকে নির্বাচন করে জয় লাভ করে করেন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার রয়েছে। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ইফতার মাহফিল ও দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনেও বেগম খালেদা জিয়াকে এ আসন থেকে নির্বাচন করার জোর দাবী জানান। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে একক কেউ ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন করেনি।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ আসনে দলীয় প্রার্থী চান। মহাজোট থেকে অন্য দলের প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই প্রার্থীর হয়ে ভোট যুদ্ধে নামবেন না বলে তারা স্পষ্ট করেই বলছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আসনে বিজয়ী হতে হলে তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী দিতে হবে। যদিও বর্তমানে ফেনী-১ আসনের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি রয়েছেন। তিনি জোটের মনোনয়ন পেলে আবারও এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ বর্তমান এমপি তাদের সাথে সমন্বয় করেন না। যার ফলে জাসদ নেত্রীর বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও ইফতার মাহফিলে তারা অংশগ্রহণ করেন না। গত ১৩-১৪ বছর যাবত ফেনী আওয়ামী লীগের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ৯৬-এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম পর্দার অন্তরালে থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে এবং কেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর প্রভাব রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নিলে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন নেবেন এবং কোন ঝুঁকি ছাড়া জয়লাভ করবেন। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে চাইলেও তিনি সবসময় পর্দার অন্তরালে থাকতে চান। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ খোলেননি।
এছাড়া একসময়ের বিএনপি, জাপার মন্ত্রী লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব) ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত এ আসনের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বেগম জিয়ার সঙ্গে হেরে যান। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে হয়ত আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন। এছাড়াও আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া ও পরবর্তীতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ণ প্রত্যাহার করে নেয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বশর মজুমদার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। এদিকে ট্রুথ পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে নামবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা নাজমা আক্তার, জামায়াত ইসলাম থেকে দলের ফেনী জেলা আমীর একেএম সামছুদ্দিন আহাম্মদ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলম মজুমদারের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এমএ কাসেম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এর সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নেওয়াজ সেলিম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নাম শোনা গেলেও তারা নির্বাচন করার অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, বিগত দিনগুলোতে ফেনী-১ আসন ছিল বেগম খালেদা জিয়ার। গত নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষ থেকে শিরীন আখতারকে মহাজোট থেকে মনোনয়ণ দেয়া হয়। শিরীন আখতার বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের স্বপ্ন ছিল নিপীড়িত ও নির্যাতিত ফেনী-১ আসনের সকল আওয়ামী পরিবারের ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু শিরীন আখতার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কথা চিন্তা না করে বিতাড়িত বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে জাসদকে শক্তিশালী করার হীনচেষ্টায় লিপ্ত হন এবং আমরা যে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীদের রাজপথ থেকে হটিয়েছি, শিরীন আখতার তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে জাসদের নেতা বানাতে লাগলেন। এ যেন ঘরের শত্রæ বিভীষণ। আগামীতে ফেনী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে হলে সেখানে জোটের কোন প্রার্থী দিলে বিজয়ী হবেনা। কারণ সেখানে আমাদের প্রতিদ্বন্ধীতা করতে হবে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। বেগম খালেদা জিয়াকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করতে হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ণ দেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহাম্মদ মজুমদার জানান, বেগম খালেদা জিয়া জীবদ্দশায় থাকা অবস্থায় অন্য কোন প্রার্থী চিন্তা ও করা যায়না। এটি খালেদা জিয়ার পারিবারিক সিট। খালেদা জিয়ার রাজনীতির শুরু থেকেই এ সিটে নির্বাচন করছেন। তিনি আমাদের গর্ভের ব্যাপার। ফেনী জেলা জাসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী আবদুল বারী জানান, দেশ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাপ্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের এ জোট অটুট থাকবে। এবং জাসদ ১৪ দলীয় এ জোটে থাকবে। জোটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে প্রধান্য দিয়ে তার পক্ষে জাসদ কাজ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।