Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছিল গাঁও গেরাম

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : আনন্দ ও উৎসবের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে এসেছিল ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশির দিন। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে মানুষ ছুটে এসেছিল গ্রামে। যেন শহর গ্রামে ফিরে এসেছে। ঈদের কটাদিন সারাদেশ মেতে উঠেছিল। বিশেষ করে ঈদের দিন নামাজ শেষে কোলাকুলি আর ঈদ মোবারক ধ্বনিতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাঝে সব আত্মা যেন এক হয়ে গিয়েছিল। ফিরে পেয়েছিল আত্মার আত্মীয়র সান্নিধ্য। ঈদে শহর নগরের চেয়ে গাঁও গেরাম যেন বেশী জেগে উঠেছিল। সেজেছিল অন্যরকম সাজে। কেউ বলে নাড়ির টানে। কারো ভাষা শেকড়ের কাছাকাছি আবার কারো কথা হলো মাটির টানে সবাই ছুটে আসে নিজ গ্রামে। স্বজনদের কাছে। যেখানকার কাদামাটি গায়ে লেপ্টে আছে। শিশুকাল শৈশবকাল আর তারুন্যভরা দিনগুলো কেটেছে। কত স্মৃতি কত কথা। যার শেষ নেই। লেখাপড়[া ব্যবসা কিংবা চাকুরি। জীবন জীবিকার টানে গ্রাম ছেড়ে শহর নগরে ঘরবসতি গড়া। কংক্রিটের দালান কোঠা আর যান্ত্রিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া। দম বন্ধ অবস্থাকে মানিয়ে নিয়ে অবিরাম ছুটে চলা। ব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় ভুলে যাওয়া সেই গ্রাম। সবুজ প্রান্তর। যেখানে অপেক্ষায় আছে স্বজনরা। তাদের সান্নিধ্য পেতে মনটা আকুলি বিকুলি করে। কিন্তু জীবন জীবিকার টানে আর হয়ে উঠে না। শুধু অপেক্ষার প্রহর গোনা। এই দিনটার জন্য। কবে আসবে ঈদ। ছুটে যাবে সেই নাড়ি পোতা গ্রামে। যেখানে প্রহর গুনছে স্বজনরা। এগারো মাস বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হলে ঈদের কটাদিন আর কোন মাধ্যম নয়। একেবারে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরা। কি যে অনাবিল অনুভুতি। আবেগে আপ্লুত হওয়া। সবার মুখে ছোটে কথার ফুলঝুরি। ভুলে যায় পথের সব ক্লান্তি আর বিড়ম্বনা। কোথায় যেন সব উবে যায়। বরাবরের মত এবারো ওরা এসেছে গ্রামে। কে আমলা কে বড় কর্তা কার কি পদবি সব ভুলে কটাদিনের জন্য একাকার হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের বিড়ম্ব^না আর টিকিট নামক যন্ত্রনা যাতে ঈদের আনন্দ মাটি না করে দেয় সে জন্য বেশ ক’দিন আগে পরিবার পরিজনদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। রমজান মাসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি হওয়ায় ফলে এ প্রজম্মের তরুণ তরুণীদের বাড়তি কটাদিন বেশি থাকার সুযোগ ঘটেছে। কর্তা ব্যক্তিটি ঈদের দু’একদিন আগে এসে ফের ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ কর্মস্থলে। ভিড় কমলে পরিবার পরিজন ফিরে যাবে। কেউ কেউ সাথেও নিয়ে ফিরছে। ঈদ উপলক্ষে যে কটাদিন গ্রামে অবস্থান ছিল সে কটাদিন কিভাবে যে পার হয়ে গেল অনেকে তা বুঝতে পারেনি। ঘর গেরস্থালি খোঁজ খবর নেয়া আতœীয় স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধু বান্ধবদের সাথে হৈ হুল্লোড় কুশল বিনিময় বিয়ে শাদিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া এমনকি ঝগড়া ফ্যাসাদ মেটানো জমি-জমা ভাগাভাগি ক্রয় বিক্রয়ের পাকাপাকি কথাবার্তা করতে করতে ফের কখন যে যান্ত্রিক জীবনে ফেরার তাড়ায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়েছে টের পাওয়া যায়নি। আবার হবে গো দেখা এ দেখাই শেষ দেখা নয় গো গানের কড়ি আওড়িয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়েছেন। কর্তারা নানান কাজে ব্যস্ত থাকরেও বউঝি গিন্নিদের ব্যস্ততা কম ছিলনা। বাবা মা শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ দাদা দাদি নানা নানি চাচা খালু ফুপা ফুপু সবাইকে সময় দিতে হয়েছে। সুখ দু:খের কথার ভাগী হতে হয়েছে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বনিবনা না হলেও চিরচেনা টান পোড়নের মাঝে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে আনা উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছে তাদের হাতে। মুরব্বীদের দোয়া আর অন্যদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে। শহুরে জীবনে আধুনিকতার সাথে মিশে গেলেও গ্রামে এসে সেই গৃহবধু লাজুক হয়েছে। ধন্য ধন্য পড়েছে। সবচেয়ে বেশী আনন্দে ছিল এ প্রজম্মের তরুন তরুনীরা। শহুরে ইট পাথরের পাষাণে বন্দী হয়ে বেড়ে ওঠা ছকে বাধা জীবন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোচিং সেন্টার আর কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রাখতে হাপিয়ে ওঠা ওসবের বালাই ছিলনা কটাদিন। মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটে বেড়িয়েছে সবুজ ক্ষেত। লাউ, শশা, করল্লার মাচার নীচে দিয়ে ছুটতে গিয়ে শিহরিত হয়েছে। স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ছবির পর ছবি তুলেছে। মেঠো পথে চলতে গিয়ে কারো অবস্থা হয়ে পা পিছলে আলুর দমের মত। এমন দৃশ্য কেউ মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করে অন্যদের দেখিয়েছে। এখনতো সেলফি আর ফেসবুকের সময়। কত ভঙ্গিতেই যে সেলফি তুলেছে তার ইয়াত্তা নেই। সাথে সাথে পোস্টও দিয়েছে। কমেন্ট এসেছে। পা পিছলে যাওয়া তরুণটি হয়েছে লজ্জায় লাল। মুক্ত বাতাসে সবাই বুক ভরে শ্বাস নিয়েছে। ফুসফুসটা যেন কদিনে বেশ সতেজ হয়েছে। বর্ষনে খাল বিল ভরে যাওয়ায় নৌকায় চেপে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে। মাছ ধরা দেখছে। তাদের আগমন উপলক্ষে আগে থেকে পুকুর দিঘীতে পুষে রাখা বড় বড় রুই কাতলাসহ নানা জাতের মাছ ধরা ও মজা করে খেয়ে তৃপ্ত হয়েছে। ফরমালিন দেয়া শাক সবজি বা মাছ নয়। একেবারে টাটকা। এসবের স্বাদ ছিল ভিন্ন রকমের। ওরা আসবে বলে দাদী নানী ফুফু চাচীরা অনেক কিছু যোগাড় করে রেখেছিল। সকাল বা বিকেলের নাস্তায় স্যান্ডউইচ পিজা সমুচা সিঙ্গারা নয় একেবারে গ্রামীন খাবার ছিল মেনুতে। পিঠা পাটিসাপটা পাস্তা পায়েস নারিকেল মুড়ি মাখাসহ আরো কত কি। আর এখনতো পাকা আমের মওসুম। গাছ পাকা আমের স্বাদ নিয়েছে। সারাদিন দস্যিপনা করে সময় পার করলেও রাতটা ছিল অন্যরকমের। বাইরে ঝি ঝি পোকার অবিরাম ডাক আর থোকায় থোকায় জোনাকিগুলো আলো জ্বালালেও শহুরে তরুন তরুনীরা বাইরে এসেছে কম। মাটি কিংবা টিনের শোবার ঘরে খাট পালং ফোমের বিছানা নয়। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে তার উপর তোষক কাঁথা পেতে শয্যা নিয়েছে। সারা বছরের কত জমানো কথা যেন ফুরাতে চায় না। শহুরে জীবনের কথা গ্রামের কথা সবমিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এভাবে কটাদিন কিভাবে যে পার হয়ে গেল টেরই পাওয়া যায়নি। ঈদের পরের দিনটা পার হতে না হতে ফের বাক্স পেটরা গুছানোর পালা। ফিরে যাবার প্রস্তুতি। বেজে ওঠে বিষাদের সুর। গ্রামের স্বজনদের আকুতি আর কটাদিন থেকে গেলে হতো না। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে হরহামেশা যোগাযোগ ঘটছে। কিন্তু সশরীরে এমনভাবে তো আর কাছে পাওয়া যায় না। তাই মন সায় দেয় না এত তাড়াতাড়ি বিদায় জানাতে। কিন্তু উপায় নেই। চাকরি ব্যবসা লেখাপড়ার সেই জীবনতো শুরু হয়ে যাবে। ফিরে যেতেই হবে যান্ত্রিকতা ভরা জীবনে। যন্ত্রদানবের পেটে ঢুকে ঠাসাঠাসি গাদাগাদি করে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে যেমন ফিরে এসেছিল শেকড়ের কাছে। আবার তেমনি ভাবে ছল ছল চোখে ফেরা। এমনিভাবে প্রতি বছর গাঁও গেরামে ঈদ আসে আর যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ