Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

চার বছরেও গঠন করা হয়নি আপিল ট্রাইব্যুনাল আইন সংস্কারের পরামর্শ বিচারকদের

ভ‚মি ট্রাইব্যুনালে ভোগান্তির শেষ নেই

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাগুলোতে চরম ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা। সারা দেশের ট্রাইব্যুনালগুলোতে গত বছর দু’লাখের কাছাকাছি মামলা থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় তিন লাখের মতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোরগঞ্জে ৪৪ হাজার ২২২টি। বছরের পর বছর ঘুরেও বিচার প্রার্থীরা মামলার রায় না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া আইনে ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হলেও চার বছরের তা গঠন করা হয়নি। ফলে আপিল ট্রাইব্যুনাল না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের কোনো রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে আপিল করতে পারছেন না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রতিবেদনে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের নিয়ে এক আলোচনায় বিচারপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আর অদক্ষ মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও চরম অবহেলায় ভুলে ভরা এসব ভূমি জরিপের খেসারত গুনতে হচ্ছে জমির মালিকদের। এছাড়াও ভূমি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আইন সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিচারকরা
ভূমি ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোটে জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুন্যলে সর্বপ্রথম দূনীর্তি বন্ধ করতে হবে। দূনীর্তির কারণে সেখানে বিচারপ্রার্থীরা বিভিন্নভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আপিল ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বিচারিক সেবার মান বৃদ্ধি করতে নানা বিষয় আলোচনা হয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভূমি ট্রাইব্যুনালের আইনসহ কিছু বিষয়ে উপর বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। কিন্তু চার-পাঁচটি জেলার সমন্বয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করায় দেখা দেয় মহাবিড়াম্বনা। একশ’-দেড়শ’ মাইল দূর থেকে ওইসব ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের বিচারপ্রার্থীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয়। পরবর্তীতে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার আরেকটি গেজেটের মাধ্যমে আরো ৪২টি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেন। এছাড়া ঢাকার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ পরিচালনা করবেন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক। স¤প্রতি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের গেজেট জারি হয়েছে। কিন্তু ৪ বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে ভূমি জরিপ সংক্রান্ত মামলার বিচার নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার চাপ দেখে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্র জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জেলায় জরিপের চূড়ান্ত রেকর্ড তথা খতিয়ান প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক হারে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে, যার সংখ্যা উদ্বেগজনক। ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়। ভূমি সচিব, আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী সারা দেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোর মধ্যে কিশোরগঞ্জের ট্রাইব্যুনালে সবচেয়ে বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালে ৪৪ হাজার ১৫২টি মামলা বিচারাধীন। ময়মনসিংহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৩২ হাজার ৬৭৬টি, জামালপুরের ট্রাইব্যুনালে ১৭ হাজার ৯৫১টি, ঢাকার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৭,৪৩৮টি, সাতক্ষীরায় ৬ হাজার ৯৮৩টি, চাঁদপুরে ৯ হাজার ১২৬টি, নেত্রোকোনায় ২১ হাজার ৮৬৩টি, টাঙ্গাইলে ১০ হাজার ৮০৯টি, শেরপুরের ট্রাইব্যুনালে ৬ হাজার ৪৬৭টি, বরগুনায় ৬ হাজার ২২২টি মামলা বিচারাধীন। ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালগুলোতে ২ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার জট তুলনামূলক কমতে শুরু করে। বিচারপ্রার্থীদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। শুরু হয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন হয়। গত বছর ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারকরা অংশ নেন আলোচনায়। এতে প্রধান বিচারপতি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের জবাব চান। এসময় বিচারকরা বলেন, আইন সংস্কার ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ করতে হবে। আইনে বলা হয়েছে ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধরা রায়ের তিন মাসের মধ্যে ল্যান্ডসার্ভে আপলি ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। অথচ এখনো পর্যন্ত কোন আপলি ট্রাইব্যুনালই তৈরি করা হয়নি। জনগণের দুর্ভোগ কমাতে বিচারকদের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও সব ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় সেরেস্তাদারের পদ সৃষ্টি করতেও পরামর্শ দেয়া হয়। একই সঙ্গে মানচিত্র সংশোধন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ