Inqilab Logo

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঘাটতি ৩ হাজার কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস
রফিকুল ইসলাম সেলিম : এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অর্থ বছরের শেষে এসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ২ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। আজ শুক্রবার অর্থ বছরের শেষ দিনেও কাস্টম হাউস খোলা থাকছে। ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম শুরু হয়। ওইদিন ২২৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৪২ কোটি টাকা। গতকালও (বৃহস্পতিবার) কাস্টম হাউস খোলা ছিল। তবে রাজস্ব আদায় হয়েছে সামান্য। ফলে অর্থ বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ তেমন কমবে না বলে ধারণা করছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
তবে গত অর্থ বছরের তুলনায় বুধবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার এ সময়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণ হিসেবে অর্ধশতাধিক পণ্যের আমদানি কমে যাওয়া, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি বেড়ে যাওয়া বকেয়া রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ার কথাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। কারণ এ ক্ষেত্র থেকে প্রতি বছর কাস্টমসের কাছে জমা হয় বড় অংকের রাজস্ব। রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে পড়ার জন্য কাস্টম হাউসের জনবল সংকটকেও কারণ হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর খাতের বেশিরভাগ রাজস্ব আদায় হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। বিগত কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত অর্থ বছর থেকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শওকত আলী সাদী গতকাল এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ের হার বেড়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটিকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতো বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের মূল্য এবং আমদানির পরিমাণ সবসময় একইরকম থাকে না। তাছাড়া বেশকিছু পণ্যের দামও পড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ে। লক্ষ্যামাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লোকবল সংকট কিছুটা দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত লোকবল থাকলে রাজস্ব আদায় আরও বাড়তো। শুল্কফাঁকির প্রবণতা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরে এ ধরনের অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে। পর্যাপ্ত লোকবল থাকলে শুল্কফাঁকির চেষ্টা আরও বেশি কমিয়ে আনা যেত।
সাম্প্রতিককালে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বেশ কয়েকটি চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। যে পরিমাণ চালান আটক হয়েছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে চলে গেছে। নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বছরের শুরু থেকে শুল্ক ফাঁকি রোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কারণে অনেক ফাঁকির ঘটনা ধরাও পড়ে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হতে পারে এমন এইচএস কোড ভুক্ত পণ্যের তালিকা তৈরি করে আমদানিকৃত পণ্য নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হয়। এ কারণে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাকালে অনেক চালান ধরা পড়ছে। মামলার কারণে আটকে আছে মোটা অংকের রাজস্ব আদায়। শুল্ক আদায় করতে আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ২৮ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থ বছরের শেষ দিনগুলোতে প্রতি বছর অধিকহারে রাজস্ব আদায় হতো। কিন্তু এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটি পড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। চলতি জুন মাসে ৪ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। প্রতি বছর অর্থ বছরের শেষ দিনে রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। আর এবার অর্থ বছরের শেষ দিন পড়েছে ঈদের লম্বা ছুটির পর সরকারি ছুটির দিন শুক্রবারে। এরপরও কাস্টম হাউস ছুটির দিনেও খোলা রাখা হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে এখনও ছুটির আমেজ চলছে। সড়ক-মহাসড়কেও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের আনাগোনা নেই। ফলে অর্থ বছরের শেষ দিনটিতে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হবে না বলে মনে করছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৬৩ শতাং ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রের্কড ছাড়িয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। একারণে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। এছাড়া আমদানি প্রবৃদ্ধিও তেমন বাড়েনি। তবে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিসহ নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার কারণেও রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ার কারণেও রাজস্ব আদায় কমেছে। গত অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। তবে অর্থ বছরের শেষদিকে এসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। রাজস্ব আদায় হয় ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। তার আগের দুই অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ