Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিভিন্ন রাইডে চড়ে উচ্ছ্বাস করছে শিশুরা
আইয়ুব আলী : ঈদের দিন থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিনোদন পিয়াসী নানা বয়সের মানুষের ঢল নামে। নগরীর চিরাচরিত চেহারা না থাকলেও বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন দর্শনার্থীতে ঠাসা। সাধারণত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন যে দর্শনার্থী থাকে ঈদকে কেন্দ্র করে এখন দর্শনার্থীর সংখ্য কয়েকগুণ বেশি। এসব বিনোদন কেন্দ্রে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে যেসব কর্মজীবী দম্পতিদের শিশুরা এতদিন একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল, সেসব শিশুরা এখন ঈদের ছুটিতে মা-বাবার সাথে বিনোদন কেন্দ্রে আসতে পেরে বেজায় খুশি। শিশুরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করছে।
নগরীর পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’স লেক ও সী-ওয়ার্ল্ড, চট্টগ্রাম শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, বহদ্দার হাটের স্বাধীনতা পার্ক, বিমানবন্দর রোডে বাটারফ্লাই পার্ক, ওয়ার সেমিট্রি, জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘর, জিয়া স্মৃতি যাদুঘর, নৌবাহিনী যাদুঘর, ডিসি হিল, লালদীঘির পার্কে এখন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। নগরীর বাইরে পর্যটন স্পটের মধ্যে রয়েছে আনোয়ারার পারকী বিচ, হিলটপ পার্ক, সীতাকুন্ডের ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মিরসরাইয়ের খৈয়াাছড়া মহামায়া লেকসহ নতুন নতুন গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে।
পাহাড় ধসের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে এবার পর্যটকরা সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য যেতে পারছেন না। সেখানকার বাসিন্দারা এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। তারা চট্টগ্রাম মহানগরীসহ আশেপাশের এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে গিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ঈদ উপলক্ষে বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলোতে বিশেষ আয়োজন থাকায় ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে আগত দর্শনার্থীদের কাছে। কনসার্টের পাশাপাশি পার্কগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। গতকাল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম শিশু পার্ক, আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশু পার্ক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক ও সি-ওয়ার্ল্ড, স্বাধীনতা পার্ক ও বাটারফ্লাই পার্কে ছিল দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়।
একইভাবে হাজারো শিশুর কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে শিশু পার্ক। চট্টগ্রাম শিশুপার্কে ছিল বিপুল দর্শনার্থীর ভিড়। শিশুদের পাশাপাশি বড়দের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন রাইডেও শিশুদের পাশাপাশি চড়ে বেড়িয়েছেন বড়রা। দর্শনার্থীর আনাগোনায় সরগরম ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। তবে দর্শনার্থীদের জন্য ঈদের বিশেষ উপহার হিসেবে ছিল বাঘ। তাই ভিড়টা একটু বেশিই ছিল বাঘের খাঁচার সামনে। সঙ্গে ৪৭ প্রজাতির প্রাণী দেখার হিড়িক। ত্রিশ টাকা মূল্যে টিকিট নিয়ে শুধু ঈদের চতুর্থ দিন পর্যন্ত ৫৫ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় এসেছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদ উপলক্ষে এবার রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় এসেছে। বিশেষ করে বাঘের খাঁচার চারদিকে দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়, চিড়িয়াখানাকে উৎসবমুখর করে তুলেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ক্রয় করে আনা বাঘ-বাঘিনী দেখতে দর্শনার্থীরা বেশি ভিড় করছে।
বহদ্দার হাট স্বাধীনতা পার্কের ভেতরে থাকা জাতীয় সংসদ ভবন, দরবার হল, আহসান মঞ্জিল, হাইকোর্ট, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হল, সোনা মসজিদ, কান্তজির মন্দির, বড়কুঠি, ছোট কুঠি, পাহাড়পুর বিহার, সেন্ট নিকোলাস চার্চ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার দেখতে শিশু থেকে নানা বয়সীরা ভিড় করছে। দর্শনার্থীরা ১শ’ টাকার টিকিটের বিনিময়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। পার্কে দেয়া হয়েছে বাড়তি আলোকসজ্জ্বা ও নিরাপত্তা।
অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ও বিনোদন কেন্দ্রের শীর্ষে থাকা ফয়’স লেক কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কের রাইডগুলোতে দর্শনার্থী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ফয়’স লেকের ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, রেড ড্রাই ইড, কফিকাপ, ইয়োলো ড্রাই দর্শনার্থীরা ভিড় করেছে। ফ্যামিলি পুল মাল্টি রাইড ও ডোম রাইড, ড্যান্সিং জোন, কৃত্রিম বৃষ্টি ও চিলড্রেন পুলে ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের রাইডে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ভিড় করছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত কনসার্ট, ডিজে, যাদু ও গেম শো’র আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্যাকেজে ছোট ও বড়দের জন্য প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রবেশের টিকিটের সঙ্গে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য রাইড ও খাবারের প্যাকেজ সুবিধা রাখা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে পতেঙ্গা সি-বিচেও দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। শিশু থেকে নানা বয়সী দর্শণার্থীরা মেতে ওঠেন জলকেলিতে। সঙ্গে ফটোসেশনের প্রতিযোগিতা। নেভালে বসে সমুদ্রের রূপ আর এয়ারপোর্ট এলাকায় সবুজের সান্নিধ্যে হারিয়ে যাওয়া উপভোগ করেছেন বিনোদন পিয়াসী মানুষ। এদিকে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। ঈদের দিন থেকে আবহাওয়া ভাল থাকায় বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিনোদনপ্রেমীরা ছুটে চলেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ