Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যানজট এবং কিছু প্রস্তাবনা

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মীর আব্দুল আলীম : সংসদীয় কমিটি রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ১১টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। সরকার যানজট নিয়ে ভাবছে তাতেই খুশি আমরা। এখন ঢাকাকে বলা হয় যানজটের শহর। বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার মতো আর কোথাও বিরক্তিকর যানজটের আবির্ভাব হয় কিনা আমাদের জানা নেই। বর্তমান সরকার ঢাকাতে বেশ ক’টি ফ্লাইওভার চালু করেছে; চালুর অপেক্ষায় আছে কিছু। অনেক রাস্তা ইতোমধ্যে হকারমুক্ত করা হয়েছে। তাহলে কেন যানজট?
যানজটের অনেকগুলো কারণ আছে। অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা, প্রাইভেট কারের আধিক্য যানজটে নগরজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে। যানজটে এমনই অবস্থা যে, আধা ঘণ্টা দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করতে গড়ে সাত-আটগুণ পর্যন্ত সময় লাগছে। সম্প্রতিকালে চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাডে গিয়ে তাদের সড়ক ব্যবস্থা অবলোকন করে যা বুঝেছি তাতে রাজধানী ঢাকাতে ট্রাফিক জ্যাম থাকবে কিন্তু যানজট থাকবে না। আমাদের পাশের কলকাতায় এখন আর আগেরমত যানজট নেই। এসব অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকার যানজট নিরসনে যা করা উচিৎ বলে মনে করি- (১) ঢাকা বিভিন্ন সড়ক থেকে একে এক রিক্সা তুলে দিতে হবে। শুরুতেই এ আলোচনাটি আনলাম এ কারনে যে আমরা যে যাই বলি, ধীরগতির এ যানটি রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারন। বিশ্বের কোথাও এজাতীয় যান দেখিনি; আছে বলে মনেও হয় না। রাজধানী থেকে রিক্সা হঠালে, এতে যানজট কমাতেই সহায়ক হবে না সাথে আরও কিছু সুফলও মিলবে। কি সেই সুফল? রাজধানী ঢাকাতেই মানুষের হাঁটার প্রবণতা কম। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সামান্য দুরত্বে যেতেও মানুষ রিক্সা ব্যবহার করে। রিক্সা উঠে গেলে মানুষ কিছুটা পথ হেঁটে চলতে বাধ্য হবে। আমি চীনে মানুষকে মাইলের পর মাইল হাঁটতে দেখেছি। একমুখী রাস্তার কারনে কলকাতায়, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডেও অনেক পথ হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়। তাতে যানজট আর স্বাস্থ্য উপকারিতা দুইই মেলে। ঢাকার রিক্সা উঠে গেলে বেকারত্ব বাড়বে বলে অনেকে মনে করেন। সম্ভবত তা হবে না মোটেও। আমাদের দেশের অনেক জমি এখন অব্যবহৃত পড়ে থাকে, বিশেষ করে রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলোতে এ চিত্র ভয়াবহ। বেকার রিক্সা চালকগন এসব জমি চাষ এবং বর্গা নিয়ে অনেকে জীবন ধারন করতে পারবে। তাতে কৃষি পণ্যেও উৎপাদন বাড়বে। এ ছাড়া আমরা বেকারত্বের কথা বলি, অন্য দিকে রাজধানীর আশে পাশের শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিক সংকট রয়েছে। রিক্সা উঠে গেলে শ্রমিক সংকট কাটিয়ে শিল্পকারখানাগুলেতে উৎপাদন বাড়বে (২) কলকাতার অনেক রাস্ত আমাদের চেয়ে প্রশস্ত, তা কিন্তু নয়। এরা সময় অনুসারে রাস্তা একমুখী করে সুফল পেয়েছে; সে চেষ্টাও আমরা করে দেখতে পারি (৩) রাজধানীতে নতুন করে প্রাইভেট কার রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে একজনকে বেশ ক’টি যানের রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ করে দিতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে গণ পরিবহনের দিকে (৪) কোম্পানী বা কনসোটিয়ামের মাধ্যমে রাজধানীর বাস/গণপরিবহনগুলো পরিচালনা করতে হব। অনিযন্ত্রীত ব্যক্তি মালিকানাধিন পরিবহনগুলো অনেক ক্ষেত্রে যানজটের কারন (৫) কেন্দ্রিয় কারাগারের ন্যায় পুরনো ঢাকা থেকে কোর্ট-কাচারি সরিয়ে ফেলতে হবে (৬) রাজধানীর ভেতরে অবস্থিত সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একে এক সরিয়ে ফেলতে হবে।
ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা স্পুটনিক গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। তবে সা¤প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে- সেখানে পার্কিং, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো ইত্যাকার সমস্যা তো বহু পুরনো। কিছুতেই রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যানজট পরিস্থিতি দিনই দিনই জটিল হচ্ছে। রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে বাণিজ্যিক ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন এর পরিমাণ ৮৩ কোটি। এছাড়া প্রতি কর্মদিবসে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা, যা একজন মানুষের ক্ষেত্রে তিন ঘণ্টা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে রাজস্ব গচ্চা যাচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এ মধ্যে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। আগামী ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি। এই প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই।
আমাদের যতটুকু সড়কপথ আছে তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানাবিধ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বের বড় বড় শহর এমনকি হজকালীন সময় মক্কা মদিনা, অলিম্পিক গেমসহ নানা বড় আসরের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সে সময় কত সহজেই না যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। অলিম্পিকের মতো আসরে দিন গুনে জোড়-বেজোর নাম্বারের প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করতে দিচ্ছে। একদিন জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় চলার অনুমতি পাচ্ছে তো পরদিন পাচ্ছে বেজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো। বিশেষ মুহূর্তগুলোতে বাইরের শহরের গাড়িগুলো শহরে ঢোকার অনুমোতি পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ফলে দুর্ভোগ হচ্ছে না, হচ্ছে না যানজটও। জোড়-বেজোড় গাড়িগুলো রাজধানীতে চলাচলের ক্ষেত্রে দিন গুনে চলাচল করতে দেয়া যেতে পারে। ঢাকা মহানগীর যানজট, পার্কিং সমস্যা, পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগের প্রেক্ষিতে আশু করণীয় হলো পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিনামূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা, সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া, পার্কিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহনের মানোন্নয়নে ব্যয় করা। নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা, প্রাইভেটকারের লাইসেন্স সীমিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহনের ব্যবস্থা করা, প্রইভেট গাড়ি নির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিয়ের স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা। পাবলিক পরিবহন, জ্বালানিমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করা। জায়গা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ও প্রাইভেট গাড়ির পার্কিং সমস্যা সমাধানে পার্কিংয়ের জন্য সময় ও স্থান অনুসারে অর্থ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত।
রাজধানীর যানজট সহনীয় মাত্রায় আনতে স্বল্প গতির যানবাহন ও প্রাইভেটকারের সংখ্যাধিক্যের দিকে নজর দেয়া খুবই দরকার। ট্রাফিক আইন যাতে সব ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে মানা হয় সে ব্যাপারেও যতœবান হতে হবে। ফুটপাত থেকে দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রাইভেটকার চলাচল কমিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে। রাজধানীতে জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা এমনিতেই কম। তারপরও রয়েছে স্বল্পগতির রিকশা ও প্রাইভেটকারের আধিক্য। ফুটপাত দখল করে দোকানপাট চালানো কিংবা রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং এ মেগাসিটিতে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো প্রাইভেট গাড়ির অপরিকল্পিত পার্কিং। ঢাকার প্রায় সব সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে গাড়ি পার্কিং। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গা কমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আবার পার্কিংয়ে কোন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। গাড়ি বাড়ছে, বাড়ছে পার্কিং সমস্যাও। পার্কিং সমস্যা নিরসনে ইতিপূর্বে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও সমাধান মেলেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ও জায়গার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করা জরুরি। রাজধানীর যানজট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব দেখা যায়। পার্কিং সমস্যা নিরসনে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প কিছু নেই। ঢাকার রাস্তা, ফুটপাত, খেলার মাঠ, পার্ক সর্বত্রই প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের জন্য নামমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া ভবনে আবশ্যিকভাবে কার পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখা ও পার্কিংয়ের জন্য ভবন নির্মাণ করে শহরে প্রাইভেটকারকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। মতিঝিল এলাকায় নির্মিণাধীন সিটি সেন্টারে ৫০০ প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে ১০টি ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় প্রতিটি ভবনে প্রাইভেটকারের পার্কিং সুবিধা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলে ভবিষ্যতে প্রাইভেটকার বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসাব মতে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকায় প্রতিদিন প্রায় চার হাজার প্রাইভেটকার পার্কিং করা হয়। প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ না করা হলে এবং সেই সঙ্গে বিকল্প পরিবহন সুবিধা দিতে না পারলে শুধু পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি করে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জনসমাগম স্থলে গাড়ি পার্কিং করা হলে মানুষের চলাফেরা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নষ্ট হয়। আমরা চাইলেই ফুটপাত বা রাস্তায় ব্যক্তিগত জিনিস রাখতে পারি না। অথচ সর্বত্রই প্রাইভেট গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাস্তা এবং ফুটপাত ব্যবহার করা হচ্ছে। ফুটপাত ও রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করায় মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হয়, আশপাশের ব্যবসা কেন্দ্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, জনসাধারণের অবাধ বিচরণের অধিকার খর্ব হয়।
রাজধানী ঢাকায় যানবাহন বাড়ছে ব্যাপকভাবে। বিআরটিএতে প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে ৩শ’টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় কতগুলো গাড়ি নামছে। কিন্তু প্রতিদিন কি ঢাকার রাস্তা বড় হচ্ছে? তবে গাড়ি যারা নামাচ্ছে তারা প্রয়োজনেই নামাচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করছে। মানুষ এসব গাড়ি তাদের প্রয়োজনেই ব্যবহার করছে। এত গাড়ি আছে, প্রতিদিন এত নতুন নতুন গাড়ি নামছে, এরপরও পাবলিক বাসে মানুষ সিট পাচ্ছে না। ঠেলাঠেলি করে এমনকি গেটে ঝুঁলে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এ নগরে চলাফেরা করছে। আর এ ধরনের অগণিত গাড়ির বহরে ভরে যাচ্ছে নগরের রাস্তাগুলো। গাড়ির ভেতরে যেমন ভিড় মানুষের, বাইরেও তেমনি ভিড় গাড়ির। ফুটপাতগুলোয়ও কিলবিল করছে মানুষ। যানজট এবং জনজটের যেন এক অবিচ্ছেদ্য সহাবস্থান। এটিই আজ ঢাকা মহানগরীর বাস্তবতা।
যানজটের কবল থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে ঘন ঘন মেট্রো ট্রেন সার্ভিস, পাতাল রেল, ট্রানজিট সুবিধা, পার্কিং মিটার, দ্বিতল বাস সার্ভিস চালুর বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া প্রাইভেটকার, রিকশা, বেবিট্যাক্সিসহ বিভিন্ন পরিবহনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মতিঝিলকে বাণিজ্যিক জোন ঘোষণা করে বাস ছাড়া সকল পরিবহন বন্ধ করে দিতে হবে। রাজধানী ঢাকার মোট আয়তনের ৬/৭ ভাগ রাস্তা। আনর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা ২৫/৩০ ভাগ থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় তা নেই। যেটুকু রাস্তা আছে এর অনেকাংশই দখলে। ফেরিওয়ালা, যত্রতত্র পার্কিংসহ অবৈধ স্থাপনার দখলে চলে গেছে রাজধানীর অনেক রাস্তাই। এছাড়া প্রায় ৩০ ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন যার প্রত্যেকটির গড় গতিবেগ আলাদা হলেও ঢাকার রাস্তার একসঙ্গে চলে। যানজটের পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ। ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরে ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের সংখ্যা ৭২ লাখ সাত হাজার ২৮৫। ২০০৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ তিন হাজার ২১৫টি। অর্থাৎ ৯ বছরে রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে ৪২ লাখের বেশি। কারের সংখ্যা এক লাখ ৪৭ হাজার ২৮৩, জিপ পাঁচ লাখ ৮ হাজার ৬০৮, ট্যাক্সি ৬৮২টি, বাস ৮ হাজার ২১০, মিনিবাস ৮ হাজার ৩১৭, ট্রাক ৩০ হাজার ১৫টি, সিএনজি ও থ্রি গুইলার ১৪ হাজার ৮২০টি, মোটরসাইকেল ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৪৩টি, ইঞ্জিনচালিত অন্যান্য গাড়ি প্রায় ৩০ হাজার। সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগই লাইসেন্সের আওতার বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় প্রকৃত অর্থে পরিবহনের সংখ্যা কত তা নির্ধারণ করা কঠিন। এছাড়া যানজট নিরসন ও জনপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডকে (ডিটিসিবি) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ দায়িত্ব না দেয়ার কারণে বোর্ডের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
যানজট নিরসনের কথা ভাবার আগে প্রশ্ন এসে যায়, রাজধানীতে কত মানুষের নাগরিক সুবিধা দেয়া সম্ভব? ঢাকা শহরের আয়তন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারে। অর্থাৎ এই শহরে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মানুষকে নাগরিক সুবিধা দেয়া সম্ভব। তাহলে ঢাকায় জনসংখ্যা কত? এ নিয়ে আছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ২০৩০ সালে রাজধানীতে জনসংখ্যা হবে দুই কোটি। ঢাকা সিটি করপোরেশন বলছে সোয়া কোটি। জাতিসংঘের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার। বর্তমানে ঢাকায় লোকসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ। ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছয় শতাংশ। ১২ বছর পর ঢাকার জনসংখ্যা হবে প্রায় আড়াই কোটি। বিশ্বব্যাংকের মতে রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতিতে যানজট নিরসন অসম্ভব।
আসলে আমাদের দেশটার কোন গতি নেই; আছে দুর্গতি। যানজটের যে অবস্থা তাতে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ঢাকার মানুষকে মোটমাট কত বছর রাস্তায় আটকে থাকতে হয়? হিসাবে সাড়ে সাত বছর। অস্ট্রেলিয়ার যাত্রীরা যাতায়াতে সাপ্তাহিক ব্যয় করেন তিন ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। ঢাকায় প্রতিদিনই লাগে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর। এ হিসাবে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যাতায়াতের সময়ের আনুমানিক যোগফল হবে কমসে কম সাড়ে সাত বছর। এটা গায়েবি গজব না, মনুষ্যসৃষ্ট আজাব। এ আজাব থেকে আমরা মুক্তি চাই।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন