Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা ফিরছে মানুষ

বাস ও লঞ্চে স্বাভাবিক তবে ট্রেনে ভিড়

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঈদের ছুটি শেষ। ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। বাস ও লঞ্চে স্বাভাবিক হলেও গতকাল বুধবার ঢাকামুখী ট্রেনে ছিল ভিড়। ঈদের পর গতকাল সচিবালয়, ব্যাংকসহ অফিস আদালত খুলছে। ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তারা সবেমাত্র ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে ভিড় উপেক্ষা করতে ঈদের একদিন পর  রওনা করেছেন। বাস ও লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদের পর এখনও সেরকম ভিড় দেখা যাচ্ছে না। আগামী শনিবার থেকে ভিড় হবে। তবে ট্রেনে গতকালও ভিড় দেখা গেছে। সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে ঢাকামুখি প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড়। আলাপকালে রংপুর এক্সপ্রেসের এক রানিং স্টাফ জানান, মঙ্গলবার রাতে রংপুর থেকে ঢাকার দিকে আসার সময় ট্রেনের ছাদেও যাত্রী ছিল। তারপরেও ব্যস্ত রাজধানী এখনও ফাঁকা। ব্যস্ত এলাকাগুলোতেও নেই চিরচেনা যানজট। অনেকের কাছে ফাঁকা ঢাকা এখন বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।   
আজ বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কম থাকবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ অনেকে ঈদের পরে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছেন। তারা কর্মস্থলে যোগ দিবেন আগামী রোববার। যানজট আর জনজটের নগরীর সেই চিরচেনা রূপ পেতে সময় লাগতে পারে আরো তিন দিন।
 ঈদের একদিন আগে থেকেই ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। রাস্তায় যানবাহন খুব একটা ছিল না। মার্কেট, বিপনীবিতানসহ পাড়া মহল্লার অধিকাংশ দোকানই ছিল বন্ধ। গতকাল অফিসপাড়ার প্রথম দিন ছিল ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের দিন। একইভাবে ব্যাংকপাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লেনদেনও খুব একটা হবে না বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ ট্রেন ছাড়াও ৬৮টি ট্রেন ঢাকায় আসছে। ঈদের ছুটি শেষে প্রতিটি ট্রেনেই ক্রমেই ভিড় বাড়ছে। ফিরতি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কমলাপুরে এখনও নিরাপত্তা বেস্টনি রয়েছে। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদে শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ছাড়া  উল্লেখযোগ্য কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। ঈদ যাত্রার শুরুর দিন থেকেই রংপুর এক্সপ্রেসের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে কতিপয় কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে। একইভাবে লালমনি এক্সপ্রেসও বেহাল দশায় পড়ে। ঈদের আগে উত্তরবঙ্গের এই ট্রেন ১৬ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে। ভুক্তভোগিদের মতে, দেশের সবচেয়ে দূরত্বে চলাচলকারী এই ট্রেনের প্রতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। একদিকে, অতি পুরাতন মেরামত করা কোচ দিয়ে চালানো হচ্ছে এই ট্রেনটি। তার উপর ট্রেনটি সঠিক সময়ে চলানো হয় না। বরং নানা অজুহাতে বিলম্বের খড়গ এসে পড়ে এই ট্রেনের উপর। এতে করে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার জেলার হাজার হাজার যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এই দুই ট্রেন ছাড়া বাকী সবগুলো ট্রেন ঈদের আগে পরে মোটামুটি সময় মেনে চলাচল করেছে। যারা ঈদের আগে ট্রেনে রওনা করেছেন তারা আনন্দ ও স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। তবে সড়ক পথে এবারও ভোগান্তি ছিল। প্রচন্ড গরমে মহাসড়কে যানজটে পড়ে লাখ লাখ ঘরমুখি যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এবার ঘরমুখি যাত্রীদের তেমন কোনো ভোগান্তি হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। বাস চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টটরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগের দুদিন ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট ছিল। ওই দিন দিন বাদে দেশের যে কোনো গন্তব্যে যেতে দ্বিগুণ, তিনগুণ বা তারও বেশি সময় লেগেছে। ভুক্তভোগি কয়েকজনও জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও যেতে ২০/২২ ঘণ্টা সময় লগেছে। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লগেছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।
এদিকে, গতকাল বুধবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকামুখি প্রতিটি ট্রেনই যাত্রীপূর্ণ করে ঢাকায় আসছে। গাইবান্ধা থেকে আসা মামুন নামে এক যাত্রী বলেন, এখন আবহাওয়াও অনেকটা ভালো। গ্রাম থেকে আসতে ইচ্ছা করে না। ছেলেমেয়েরাও আসতে চায় না। কিন্তু সামনে ওদের পরীক্ষা। আর আজ থেকে আমার চাকরি। এজন্য আসতে হলো। ওই যাত্রী জানান, তার পরিচিত অনেকেই আসবে আগামী শনিবার।
নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দু সামাদ জানান, সামনের কয়েক দিন ভিড় বাড়বে। সেজন্য আগেভাগেই চলে এলাম। ট্রেনে আসতে পথিমধ্যে কোনো ভোগান্তির শিকার হতে হয় নি বলে জানান তিনি। সিলেট থেকে আসা রাইসুল জানান, পরিবার নিয়ে ঈদে করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। প্রতি বছর বাসে যাতায়াত করতেন। এবার করেছেন ট্রেনে। এবার ট্রেনে আসা-যাওয়া করে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। যানজট বা কোনো ধরণের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ শেষে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। বরিশালের হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের আগে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সে তুলনায় ফিরতে পেরেছেন ভোগান্তি ছাড়াই। অনেকটা আরামেই ঢাকা ফিরতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিটি বাস ভর্তি যাত্রী আসছে। তবে তা অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। পথিমধ্যে খুব একটা যানজট নেই বলে জানান নোয়াখালী থেকে আসা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, চার লেনের মহাসড়কের পরেও এবার বাড়ি যাওয়ার সময়ও যানজটে পড়তে হয়েছে। অন্যদিকে, গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালেও বাসভর্তি যাত্রী আসছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। আসফাক হোসেন  নামে এক যাত্রী জানান, তিনি ঈদের ৪দিন আগে গাবতলী টার্মিনাল থেকে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে ১৩ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছেছেন। তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেলিভিশনের খবরগুলোতে যানজটমুক্ত রাস্তা দেখানো হয়েছে। ঈদে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ ঘরে ফিরছে বলে একাধিক টেলিভিশনে খবর প্রচার করা হয়েছে। যা মোটেও সত্য ছিল না। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ