Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শিবপুরের চিনাদী বিল

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীর ২৪ লক্ষ মানুষের জন্য এটি একটি লাগসই তত্ব। স্বাধীনতার পূর্বাপর ৬০ বছরেও নরসিংদী শহর বা শহর সংলগ্ন আশেপাশের এলাকায় কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতা উত্তরকালে সাধারণ মানুষ ঈদ উৎসব, পুজা পার্বন, জাতীয় দিবসের ছুটির দিনগুলোতে একটু নির্মল আনন্দের জন্য নদ-নদীর পারে ঘুরাফেরা করতে যেতো। শহরের ধনবান ব্যক্তিরা মানুষের এই নির্মল আনন্দটুকু কেড়ে নিয়েছে। আগে নদীর পাড়ে গিয়ে মানুষ বুক ভরে মুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস নিতে পারতো। কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই। হাড়িধোয়া, আড়িয়ালখাঁ, শীতলক্ষা, পুরনো ব্রহ্মপুত্র এমনকি মেঘনার পানি পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন এই নদীর পাড়গুলোতে গেলে মানুষের নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ধনবান মানুষেরা টাকার বিনিময়ে বানিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্রগুলো থেকে আনন্দ কিনে উপভোগ করে। এসব বানিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্রগুলো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বানিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দ কিনতে গেলে সাধারণ মানুষের বছরের খোরাকির টাকা ফুরিয়ে যায়। আর এই অবস্থায় ঈদ এলে মানুষ একটু আনন্দের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বেড়ায়। গত ২/৩ বছর যাবৎ ঈদ এলে মানুষ ছুটে যায় শিবপুরের অজপাড়া গাঁ বিল চিনাদী গ্রামে। সেখানে রয়েছে স্বচ্ছ টলমলে পানির এক বিশাল প্রকৃতিক জলাশয়। কমবেশী ৩ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় সমপরিমান প্রস্ত এই চিনাদী বিল ছিল এক সময়ে মাছের জন্য বিখ্যাত। এই বিলের মাছ ছিল খুবই সুস্বাদু। নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ ও নরসিংদীর বাজারগুলোতে মাছ কিনতে গেলে জেলেরা বলতো চিনাদী বিলের মাছ। চিনাদী বিলের মাছের নাম শুনলেই ক্রেতারা বিনা দর কষাকষিতেই মাছ কিনে নিতো। কিন্তু আজকে মানুষের বিনোদনের প্রয়োজনে চিনাদী বিল হয়ে উঠেছে এক নতুন পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি ঈদের দিন বিকেল থেকেই শুরু হয় চিনাদী বিলের কিনারে কিনারে মানুষের আনাগোনা। ঈদের পর কয়েকদিন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের পদভারে চিনাদী বিল এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। নারী,শিশু, আবাল, বৃদ্ধ বনিতা সকলেই বিষাদময় জীবন থেকে একটু নি®কৃতির জন্য ছুটে যায় চিনাদী বিলের ধারে। সেখানে দেখার মত ঐতিহাসিক কোন স্থাপনা বা খেলাধুলার কোন অবলম্বন না থাকলেও রয়েছে চিনাদী বিলের এক মায়াময় নৈসর্গিক দৃশ্য। যা মানুষকে মায়াপুরীর মতই আকর্ষণ করে। স্বচ্ছ টলটলে পানিতে ভাসমান কচুরিপানা, শাপলা, শালুক, পদ্মপাতা, শিংরাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ফাঁকে ফাঁকে মাছেদের খেলা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারনা ঘটায়। এছাড়া এ বিলের চারদিকে রয়েছে জেলেপাড়া, যারা এই বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই জেলেদের বাড়ীগুলোতে রয়েছে যুগযুগের আবহমান বাংলার এক প্রাকৃতিক গেয়ো দৃশ্য। যা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সচেতন মানুষ সেখানে গিয়ে আবহমান বাংলার সেই চিরায়ত দৃশ্যকে অবলোকন করার সুযোগ পায়। মানুষ ক্ষনিকের জন্য হলেও হারিয়ে যায় মূল শিকড়ে।
চিনাদী বিলে ভ্রমন করতে যাওয়া কয়েকজন পর্যটকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ঘর থেকে বেরিয়ে একটু স্বচ্ছ টলমলে পানি দেখার আনন্দ অনেক। কারণ নরসিংদী শহর ও আশেপাশের এলাকায় কোথাও কোনে স্বচ্ছ পানির জলাশয় নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যে নদীটি সামনে পড়ে তার নাম হাড়িধোয়া। এই নদীর পানি কলকারখানার বর্জ্যে কালো বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই নদীর পানিতে দিকে তাকানো যায় না। নদীর পাড়ে দাড়িয়ে শ্বাস নিয়ে সাথে সাথেই উল্টি আসে। মেঘনার পানি ছিল স্বচ্ছ আয়নার মত। হাড়িধোয়া এবং পুরনো ব্রহ্মপুত্রের বিষাক্ত পানি মেঘনায় পতিত হয়ে মেঘনার পানিও দুষিত হয়ে গেছে। পানির দুর্গন্ধে মেঘনার পাড়ে হাটা যায় না। এই অবস্থায় এখন চিনাদী বিলে টলমলে পানি দেখা, স্বচ্ছ পানির নিচে গজিয়ে উঠা জলজ উদ্ভিদ ও এর ফাঁকে ফাঁকে মাছেদের ঝাকে আনাগোনা দেখা কম আনন্দের ব্যাপার নয়। যেভাবে নদী দুষন হচ্ছে অদূর ভবষ্যতে টলমলে স্বচ্ছ পানি দেখা আর সুযোগ নাও হতে পারে। তারা জানিয়েছে, বছর দুয়েক পূর্বে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সাধারণ মানুষের বিনোদনের সুবিধার জন্য চিনাদী বিলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেখানে পর্যটকদের জন্য এখনো কোনো স্থাপনা তৈরী করা হয়নি। একটি ডাকবাংলো দীর্ঘদিন ধরে নির্মানাধীন অবস্থায় পরে রয়েছে। সেখানে কোন হোটেল মোটেলও নেই। নেই খেলাধূলার কোন সুযোগও। প্রচন্ড রোদ, বৃষ্টি বা কোন প্রকৃতিক দুর্যোগের সময় পর্যটকদের আশ্রয়েরও কোন জায়গা নেই। বে সরকারী উদ্যোগে সেখানে কয়েকটি স্পীডবোট এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা রয়েছে। মানুষ এতে চড়েই আনন্দ লাভ করে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বা শিবপুর উপজেলা প্রশাসন যদি চিনাদী বিলকে একটি স্থায়ী পর্যটন এলাকা ঘোষনা করে সেখানে উল্লেখিত সুবিধাদীর ব্যবস্থা করে দেয়, তবে নরসিংদীর সাধারণ মানুষ তথা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসবে। এতে জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের একটি আয়ের পথও উন্মুক্ত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ