হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আফতাব চৌধুরী : মর্মান্তিক পাহাড় ধসে রাঙামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ছড়িয়ে পড়ে কান্নার রোল। মর্মান্তিক এ পাহাড় ধসে সেনা সদস্যসহ ১৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক এবং নিখোঁজ রয়েছে বেশ কিছু মানুষ। এভাবে প্রতি বছরই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে যান-মালের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। সিলেটেও পাহাড় ধসে প্রতি বছরই দু’চার জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ এবং সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর ও বগুড়া অঞ্চলে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল উজাড় এবং পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে, তাতে প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে পাহাড় ধস নেমে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন সংস্থা, সরকার এবং পরিবেশবিদদের বারবার সতর্ক করা সত্তে¡ও অবিরাম গতিতে চলছে পাহাড় নিধন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে প্রতিটি পাহাড়ী এলাকায় প্রভাবশালী মহল পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বন নিধন করছে সারা বছর ধরে। পাহাড় ও টিলাগুলোর বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে। বিপরীতে বৃক্ষচারা রোপন করে বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস সফল হচ্ছে না।
২০০৭ সালে চট্টগ্রামে টিলা ও পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় দেশের সরকার শুধু দুঃখ প্রকাশ না করে টিলা ও পাহাড় কাটার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও আর যাতে কোন টিলা বা পাহাড়ের অংশ বিশেষ কাটা না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। সরকারের কড়া নির্দেশে চট্টগ্রামে পাহাড় ও টিলা কাটা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও ক’দিন পরই আবার শুরু হয়ে যায়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে বলে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ।
টিলা ও পাহাড় ঘেরা আমাদের এ সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাসমূহ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এ অঞ্চলসমূহের প্রচুর সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। এক সময় সিলেটে আসতেন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক যারা সিলেটের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে একে শ্রী ভ‚মি উপাধি দেয়া হয়েছিল। পরিতাপের বিষয়, সিলেটের সে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আগের মত আজ আর নেই। সিলেটের চার পাশে যে সমস্ত টিলা ও পাহাড় ছিল সেগুলো গেল ক’বছরে কেটে সাফ করা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধে জেল জরিমানাসহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সরকারের টিলা কাটা আর বন-উজাড়ের আইন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
আমরা যদি চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার বা সিলেটের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, পাহাড়ের জায়গায় পাহাড় নেই, টিলার জায়গায় টিলা নেই। পাহাড় টিলা হয়ে গেছে সমতল ভূমি। গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পবিত্র কুরআনে পাহাড়কে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাকারী পেরক হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানীরাও একই কথা বলেছেন।
বাংলাদেশে খুব সহজ একটি কথায় বলা হয় পাহাড় কাটা আইনে নিষিদ্ধ, তবে কোথাও এ নিষিদ্ধের বালাই নেই। অহরহ পাহাড় টিলা কাটা হচ্ছে, চলছে দখল বেদখলের ভয়ানক কানামাছি খেলা। বুক ফুলিয়ে তৎপর ভূমিদস্যু অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। মাঝে মধ্যে ২/১ টি ট্রাক আটকানো হয়। অনেকেই বলে থাকেন, এটা নাকি রেইট বাড়ানোর একটা পদ্ধতি।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন পাহাড়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পাহাড়গুলো পৃথিবীর ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড়/টিলা নির্মূল করা হলে ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। একে ধ্বংস হতে দেয়া হলে যেভাবে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে পরিণতি তার চেয়েও অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। পাহাড়ের অবস্থান না থাকলে ভূমিকম্পের প্রকোপ বাড়বে জীবন ও সম্পদ বিনষ্ট হবে। তাই প্রকৃতি বা পাহাড়কে প্রাকৃতিকভাবেই থাকতে দিতে হবে।
এদিকে পাহাড় কাটার আইন লংঘনের জন্য সর্ব্বোচ ১০ বছর কারাদন্ড, এক কোটি টাকা অর্থদন্ড, পাহাড় কাটলে হাতে নাতে আটক যন্ত্র সামগ্রী জব্দ, নিষেধাজ্ঞা, পাহাড়কে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিধি বিধান রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সীমিত ও পরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ রয়েছে। আর সেই সুবাদে ভূমিদস্যুরা কাটছে পাহাড়। দেখা গেছে কোথাও একটি পাহাড়ের অংশ কাটার অনুমতি থাকলে তাকে পুঁজি করে আরও ৫/৭টি পাহাড়/টিলা কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেশী পাহাড়, পর্বত হিমালয় কন্যা খ্যাত অতুলনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর নেপাল সার্কভুক্ত একটি দেশ। এদেশের সরকার ও জনগণ টিলারাশি পাহাড় পর্বত রক্ষায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সে দেশের সরকার তথা প্রতিটি নাগরিক পর্বত ও পাহাড় রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা তাদের দেশকে গড়ে তুলছেন। সে দেশে প্রচুর পরিমাণে ধানসহ মৌসুমী ফল ফসল উৎপাদন হচ্ছে। পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছে তাদের দেশকে। ফলে সারা বছরই সেখানে পর্যটকদের বিচরণ থাকে আর এ খাত থেকে তারা প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে থাকে। সে দেশে এমনভাবে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়ে থাকে যাতে কোথাও ঝড় বৃষ্টি বা বর্ষায় বাড়িঘর ধসে পড়ার কথা শুনা যায় না।
আমাদের বাংলাদেশ। খুব বড় না হলেও ছোট ছোট অনেক পাহাড় ও টিলা বেষ্টিত দেশ ছিল মাত্র ক’বছর আগেও। কিন্তু আমরা এর অধিবাসীরাই এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করছি; যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ বলা যায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, আন্তর্জাতিক পাহাড় বিশেষজ্ঞরা গভীর আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা পরিদর্শন করে পাহাড় টিলা কাটার নমুনা দেখে হতবাক হয়ে যান। তারা গভীর দুঃখ ভরা মনে বলেন, এদেশে যেভাবে পাহাড় টিলা কেটে সমতল করা হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিবে তাতে সন্দেহ নেই।
কোনো কোনো মানুষের স^ভাবই হচ্ছে ঘাস কাটা কিংবা গাছ কাটা। ঘাস কাটা অনেক সময় তুচ্ছার্থে ব্যবহার হয়। গাছ কাটা নিয়ে কথা উঠলে বলা যায়, গাছতো রোপণ করা হয় কোন না কোন এক সময় কাটার জন্যই। ঘাস কাটলে সে স্থানে ঘাস আবার গজায়। গাছ রোপণ করে তা সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষন করলে সে গাছ বেড়ে উঠে। উজাড় বন হয়ত কিছুদিন না কাটলে সে স্থান ঘন বনে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ অগ্রপশ্চাৎ বিচার বিবেচনা না করে কোন সংগঠন, প্রভাব অথবা খুঁটির জোরে বা অর্থের বিনিময়ে টিলার পর টিলা কেটে চলেছেন। তারা কি ভেবে দেখেছেন যে ঐ পাহাড় বা টিলা কেউ রোপণ করেনি। টিলা বা পাহাড় কাটলে তা শুধু কাটাই হয় আর নতুনভাবে গজায় না। এটা প্রকৃতির অমূল্য দান।
আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন, সৃষ্টিকর্তা পাহাড়-পর্বত-নদী-সাগরময় ভূ-প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন এমন একটা ভারসাম্য সহকারে যে এর কোন রকম ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম ঘটালে তা গোটা পরিবেশেই সৃষ্টি করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গঙ্গা নদীর যে স্রোতধারা পদ¥া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, ভারতীয় অংশে ফারাক্কা বাঁধ সে মূল স্রোতধারা বন্ধ করায় আজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে মরু ভ‚মির আলামত। গ্রীষ্মে দারুণ গরম আর শীতকালে নিদারুণ শীত। হিমালয় এলাকার ঘন বনরাজি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যায় বলে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। সিলেটের বুকে ভ‚-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী টিলা/পাহাড়গুলো যারা একের পর এক নিধন করে চলেছেন তারা হয়ত জানতে বা বুঝতেও পারছেন না যে প্রকৃতির কি নিদারুণ ক্ষয়-ক্ষতি তারা সাধন করে চলেছেন। কিন্তু আজ না হোক কাল কিংবা অদূর অথবা সুদূর ভবিষ্যতে প্রকৃতি যখন এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করবে, তখন ঐ প্রতিশোধ যারা পাহাড় কেটে চলেছেন শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং প্রকৃতির প্রতিশোধের কুফল পোহাতে হবে সারা দেশবাসীকে। অন্য কথায় জনা কয়েকের অবিমৃষ্যকারিতার মূল্য দিতে হবে গোটা জাতিকেই। সুতরাং আর কাল বিলম্ব না করে এ মুহুর্ত থেকে যে কোনভাবে যে কোন উপায়ে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলাসমূহের টিলা/পাহাড় নিধন বন্ধ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকল মহলকে তৎপর হতেই হবে।
আমরা বলি নিজের বুঝ পাগলেও বোঝে। আর ব্যাপারটি মোটেই পাগলামির ব্যাপার নয়। এটা জেনে শুনে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার মত। এটা যদি কারো গোয়ার্তুমির কারণে হয় তাহলে বুঝতে হবে সেটা নিরেট আহম্মকের গোয়ার্তুমি। শুধু কাগজে-কলমে বিধি-নিষেধ দিয়ে অথবা কোন মহলের নিছক গায়ের জোরের নিকট অসহায়ভাবে নতি স্বীকার করে প্রকৃতি ও পরিবেশের এ ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির এ বোকামী উপভোগ করার বিলাসিতা আমাদের মত হতদরিদ্র দেশের শোভা পায় না। ১৯৮৩ সালে সরকার পাহাড়/টিলা কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালের সংশোধিত আইনের আওতায় অনুমতি সাপেক্ষে পাহাড় ছাঁটার অনুমোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু আইনের ফাঁক দিয়ে টিলা ছাঁটার নামে বড় বড় টিলা কেটে সমতল করা হচ্ছে। এটা দেখার বা বাধা যাদের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা তারা অর্থের লোভে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমনও জানা যায় যে, সিলেটের কোথাও টিলা বা পাহাড় কাটার খবর আইনশৃংখলা প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হলে তারা হয়ত তদন্তে যান কিন্তু তাদের যাওয়ার পূর্বেই টিলা বা পাহাড় কাটার খবর জড়িতদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সরেজমিনে গিয়ে তাদের আর পাওয়াই যায় না। আর এতে খবরদাতাকে নাজেহাল হতে হয়। মজার ব্যাপার পাহাড় কাটা হয়ে গেলে পরে এ আইনে মামলা দিয়ে শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটা রোধ করার কোন কার্যকর, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এ আইনে নেই।
আবারও সে আগের কথাই বলতে হয়। গাছ কাটলে গাছ হতে পারে। বীজ ফেললে চারা হয় সে চারা একদিন মহীরুহে পরিণত হতে পারে। কিন্তু যে পাহাড় বা যে টিলাটি কেটে ফেলে সমান করা হলো প্রকৃতির নিয়মে প্রতিষ্ঠিত সে পাহাড়টি কিংবা সে টিলা আর মানুষের পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। লক্ষ করেছি, ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীরাই পাহাড়/টিলা কেটে ধ্বংস করার ভ‚মিকায় বেশি ভূমিকা রাখে। সিলেট শহর থেকে ৮/১০ মাইল পর্যন্ত দূরত্বের বেশিরভাগ টিলাই কেটে সাফ করা হয়েছে। এসব টিলার মাটি কেটে শহর বা শহরতলীর বিভিন্ন বসতবাড়ী আবাসিক এলাকা পুকুর ইত্যাদি ভরাট করা হচ্ছে। বিত্তবান আর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ বিভাগের লোকদের সহযোগিতায় সিলেটের হাজার হাজার একর টিলাভ‚মি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। সিলেট শহরের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ সব দিকসহ চারপাশের ঢেউখেলা পাহাড় শ্রেণী আজ আর চোখে পড়ে না। যা ছোট ছোট টিলা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এগুলোও নিধন চলছে। পাহাড়/টিলা কাটার কাজে প্রতিদিন শতশত শ্রমিক ও ট্রাক নিয়োজিত রয়েছে।
যেহেতু পাহাড়/টিলা কাটার বিরুদ্ধে আইন আছে তাই পুলিশের হয়েছে পোয়াবারা। পুলিশের নাকের ডগায় সবকিছু হচ্ছে। শোনা যায় পাহাড় কাটার সুবিধার্থে নাকি টোকেন প্রথাও চালু রয়েছে। কোন সময় পাহাড় বা টিলা কাটার দৃশ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়লে ২/১টি ট্রাক আটক করা হলেও তার পিছনে থাকে অন্য উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ বলেন পাহাড়/টিলা কাটার ব্যাপারে কড়াকড়ি যত আরোপ করা হয় তাতে নাকি ট্রাক প্রতি বখরা দেয়ার অংকটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। গেল ক’দিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে টিলা ও পাহাড় কাটার ব্যাপারে নতুন যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, একজন পরিবেশকর্মী হিসাবে এটি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি সবিনয়ে নিবেদন জানাচ্ছি। এটাতে আইনের ফাঁক ফোকর রয়েছে।
সত্য বলতে কি ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ যেখানে কাজ করে সেখানে শুধু ভালো কথা, নীতিবাক্য আর সদাচরণের মৌখিক আহবান কোন কাজে আসে না। এর জন্য নীতি ও নিয়মের পাশাপাশি কঠোর আইনের প্রয়োজন। আর সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের দরকার। যারা পাহাড় কাটছে, পাহাড় ন্যাড়া করছে এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, এসব ব্যর্থতার দায় শুধু তাদের নয়। এর দায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোরই বেশি। নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকান্ড জোরদার করার ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা এবং কারা এসবের পিছনে সক্রিয় রয়েছে- এ বিষয়গুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জননিরাপত্তা, পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা আজ অপরিহার্য। এ কাজটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা আশা করব- চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, বগুড়া, কুমিল্লাসহ সারা দেশের পাহাড়/টিলা যে টুকুই অবশিষ্ট আছে তা সংরক্ষণের জন্য কঠোর আইন প্রণীত হোক। একই সাথে সে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কঠোর মনোভাব ও ব্যবস্থা গৃহীত হোক। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এবং শহরগুলোর ঐতিহ্য বজায় রাখার প্রয়োজনে সর্বস্তরের সকল নাগরিককে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। আমি এ ব্যাপারে একজন পরিবেশকর্মী এবং প্রবীণ সাংবাদিক হিসাবে সিলেটের শুধু না সারা দেশের প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনয়ের সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এখনই এ মুহুর্ত থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ যাতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এ নিষ্ঠুর পাহাড় নিধন। আমরা চাই না শুধু সুশ্রী, সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শ্রী ভূমি সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, কুমিল্লা বা কক্সবাজারের পরিচয় স্রেফ ইতিহাসের বিষয়ে পরিণত হোক।
আমরা সুস্থ শরীর ও মন, সুন্দর পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দরতম নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ রেখে যেতে চাই। আর এটা এককভাবে সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স^র্ণপদক) প্রাপ্ত
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।