বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জাতীয় নির্বাচন এখনো বেশ দূরে। তবুও যেন ভুলে মনে হবে নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে! অন্তত চাটগাঁর নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চলমান তৎপরতা দেখে তাই মনে হবে। নজর কাড়ছে সবার। সর্বত্র ‘নির্বাচন’ ‘নির্বাচন’ ভাব। আগামী নির্বাচনে নেতারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে রীতিমতো ‘আদা-জল খেয়ে’ মাঠে নেমেছেন।
দেশের প্রধান দুইটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্তমান ও সাবেক এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সিটি মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পেশাজীবী নেতারা এবার ঈদকে ঘিরে ভোটের মাঠে আগাম সরব। তারা দলীয় সমর্থন, একই সাথে জনসমর্থন পাওয়ার টার্গেট রেখে এগুচ্ছেন। সোমবার ঈদের দিন থেকেই এলাকায় এলাকায় চলছে নেতাদের ভিন্ন ধরনের এই শোডাউন। বেশ ক’জন মন্ত্রী-এমপি-নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় তারা বললেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় আপ্যায়ন আয়োজনের ডাকে সাড়াও পাচ্ছেন তাদের আশাতীত। তবে কেউই সরাসরি একথা স্বীকার করতে চাননি আগামী ভোটের মাঠ ঝালাই করার টার্গেটেই ঈদ মেজবানে তারা তৎপর কিনা।
নেতাদের নানামুখী ‘মহাতৎপরতা’য় বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরগরম রয়েছে ভোট রাজনীতি। নির্বাচনী এলাকার মানুষকে ডেকে নিয়ে নেতারা মেজবানে আপ্যায়িত করছেন। সেসব মেজবান খানাপিনার মধ্যেই সীমিত নেই। দিনমান সামাজিক মিলন মেলায় পরিণত হয়ে ভোটের এপিঠ-ওপিঠ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, হিসাব-নিকাশ চলছে আপ্যায়িত এলাকাবাসীর মাঝে। এসব নিয়ে নেতাদের যার বলয়ের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকরা আরো বেশি তৎপর। বেড়েছে কদর। ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নহানগরী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে গেছেন অন্তত ৩০ লাখ মানুষ। তাছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজ এলাকায় গেছেন আরও সমসংখ্যক। ঈদে ‘মায়ের কোলে’ ছুটে এসেছেন অগণিত প্রবাসী। তাদেরকে টার্গেটে রেখে বর্তমান ও সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের ভোট রাজনীতিমুখী ঈদ আয়োজন ও আপ্যায়ন এ মুহূর্তে তুঙ্গে। অকাতরে খরচ করছেন নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এহেন ঈদ শোডাউনের মধ্যদিয়ে। একেকটি এলাকায় একেকজন প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে চলছে ঈদ রাজনীতি। আর প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদ আনন্দের সাথে নির্বাচনমুখী রাজনীতির জোয়ারের ঢেউ।
প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নেতাদের ঘরে ঘরে ঈদ উপলক্ষে শানদার খানাপিনার আয়োজন চলছে তো চলছেই। তা এখন শুধুই ঘরবাড়িতে সীমিত নেই। কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া করে ঈদ আপ্যায়ন এবং কোলাকুলি, কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। সেসব আয়োজনে দাওয়াত পেয়ে ছুটে আসছেন যার যার দল বা জোটের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী ও অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মনোনয়ন লড়াইয়ের আশাবাদ জোরালো রেখে নেতারা স্থানীয় লোকজন, দলীয় কর্মীদের হাসিমুখে আদর-আপ্যায়নে যেন ‘আপনজন’ হয়ে উঠেছেন।
এসব আপ্যায়নে প্রধানত রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁইয়া মেজ্জান (মেজবান) আয়োজন। সেই সাথে কোরমা-পোলাও, সেমাই, ফিরনি, চা-কফি, ফল-ফলারিসহ কতকিছুই। আজ মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিনটিতে নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িঘরে তো বটেই, সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি যার যার এলাকার নেতা-কর্মী, সমর্থকদের আপ্যায়ন এবং নির্বাচনমুখী কথাবার্তা, খোশগল্প করে দিনভর সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। সেখানে এলাকাওয়ারি প্রভাবশালী সর্দার-মাতবর গোছের ব্যক্তিরাও শামিল হচ্ছেন। আগামীতে মনোনয়ন ও ভোট প্রত্যাশী নেতা-এমপিরা প্রভাবশালীদের শলা-পরামর্শ নিয়ে হাসিমুখে আর্জি জানাচ্ছেন, “বদ্দা, আঁর মিক্কা এক্কানা খেয়াল রাইক্খুন! (ভাইজান, আমার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন আর কী”।
এবার ব্যাপকমাত্রায় ‘নির্বাচনমুখী’ তৎপরতার ঈদে চট্টগ্রামের যেসব নেতা নিজ নিজ এলাকাবাসী, নেতা-কর্মীদের ঈদ মেজবান-আপ্যায়ন আয়োজনে কাটাচ্ছেন তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা তৎপর হলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম ও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগরের বন্দর-পতেঙ্গার এমপি ও সাবেক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ। এরমধ্যে বেশ ক’জন নেতা এবার মাহে রমজানে দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত ও সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে চাল, ডাল, বস্ত্র, নগদ অর্থ, গৃহনির্মাণ সামগ্রী প্রভৃতি বিতরণ করেছেন বিভিন্ন এলাকায়। তবে অনেক সাবেক ও বর্তমান এমপি, নেতার নিজ এলাকাবাসীর বিশেষত গরিব-দুস্থদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে পাশে দাঁড়ানোরও যেন সময় নেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।