Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে ভাঙা হচ্ছে মওদুদের সেই বাড়ি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ৩:২৬ পিএম | আপডেট : ৩:২৭ পিএম, ২৫ জুন, ২০১৭

অনলাইন ডেস্ক : আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়া বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ১৮ দিনের মাথায় ওই বাড়ি ভেঙে ফেলছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

গুলশান থানার এসআই খান নুরুল ইসলাম জানান, রোববার সকাল ৮টার পর রাজউক কর্মীরা গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওই বাড়ি ভাঙা শুরু করেন।

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ালিউর রহমান বেলা পৌনে ১টার দিকে টেলিফোনে বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের পর বাড়ির দখল নিয়েছি। এখন ভেঙে ফেলছি। সকাল থেকে অর্ধেকের মতো ভাঙা হয়েছে।”

রাজউক কর্মীরা চারটি বুলডোজার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে একতলা ওই ভবন ভাঙার কাজ করছেন। জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ট্রাকও রাখা হয়েছে সেখানে।

বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন বেশ কিছু পুলিশ সদস্য। বেলা ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও বাইরের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর গত ৭ জুন অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক জমির ওপর ওই সম্পত্তির দাম রাজউক কর্মকর্তাদের হিসাবে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা।

রাজউক কর্মীরা কাজ শুরুর ঘণ্টা দুই পর ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াও ঘটনাস্থল ঘুরে যান। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মীরা আছেন। তারা কাজ করছেন। আমরা এসেছি নিরাপত্তার জন্য।”
বাড়ি ভাঙা শুরুর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলছেন, এভাবে বাড়ি ভাঙা ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’।
তিনি বলেন, “আদালতের কোনো নির্দেশ নাই এবং কোনো নোটিশও নাই। যা করছে, সবই তারা গায়ের জোরে করছে। আইনের চাইতে এখন শক্তি বেশি কার্যকর।”

পরে ওই বাড়ির ঠিক পেছনে গুলশানের ৫১ নম্বর হোল্ডিংয়ে নিজের ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের সামনে আসেন মওদুদ। তিনি ৪৩টি জিনিসপত্রের একটি তালিকা দেখান, যেগুলো বাড়ি ভাঙার সময়ও ভেতরে ছিল বলে তার দাবি। বাড়ির ব্যালকনি থেকে ভবন ভাঙার দৃশ্যও তিনি সাংবাদিকদের দেখান।

অন্যদিকে রাজউক কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান ডটকমকে বলেন, “মওদুদ সাহেব নিজেই বলেছেন, তিনি এই বাড়ির মালিক নন, ভাড়াটে। তার মানে এই বাড়ির মালিক তিনি নন। আবার এই বাড়ির কোনো নকশাও আমরা রাজউকে পাই নাই। অনুমোদনহীন বাড়ি আমরা ভেঙে ফেলছি।”

মওদুদের দেখানো জিনিসপত্রের তালিকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “আমরা ওইদিন (৭ জুন) সবকিছু সরিয়ে নিয়েছি। এখন ওখানে বিল্ডিং ছাড়া আর কিছু নেই। সব জিনিস তিনি বুঝে নিয়েছেন, তার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ৫১ নম্বর ও ৮৪ নম্বরের দুই বাড়িতে।”

গুলশান এভিনিউয়ের ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান।

১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই।

মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। তিনি আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও ৪ জুন তা খারিজ হয়ে যায়; ফলে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।
রায়ের দুই দিনের মাথায় ৭ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ির দখল বুঝে নেয়। সেদিন মওদুদের সামনেই ওই বাড়ি থেকে রাজউকের ট্রাকে করে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয় গুলশানের দুটি বাড়িতে। মওদুদ নিজে পরে ৫১ নম্বর বাড়িতে নিজের ফ্ল্যাটে ওঠেন।
কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।

অবশ্য পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মওদুদ বিএনপিতে ফেরেন এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা ফোরামের এক আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, “আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। কিন্তু তার মধ্যে একটা অন্যতম ভুল হল যে, আমি ক্ষমতার ব্যবহার করি নাই।”



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ