পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরের পবিত্র রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে রাজনীতি ও ভোটের রাজনীতিতে চাঙা হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। এ দুটি ধর্মীয় উৎসবকে দলের নেতাকর্মীরা জেগে উঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। নেতাকর্মীদের বক্তব্য, সরকার ও সরকার দলীয় নেতাকর্র্মীদের ‘ঠেলায়’ বিগত সময়গুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেখানে নিজ বাসা-বাড়িতেই বসবাস করতে পারছেন না, সেখানে এবারের রমজান ও ঈদ অনেকটা বিএনপির ‘দুর্গত’ নেতাকর্মীদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। এর কারণ হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়াকেও অনেকটা ধন্যবাদ দিচ্ছেন। এবারের রোজা ও ঈদের পাশাপাশি দেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আবহ দেখা দেয়ায় নেতাকর্মীরাও নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি অংশ নিতে পারছেন।
অনেকেই রোজার মাসে ইফতার পার্টির আড়ালে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চার করতে পেরেছেন। ঈদকে সামনে রেখে দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকেট প্রার্থীরা দীর্ঘদিন পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের দেখা দিচ্ছেন। আর দীর্ঘদিন পর দলের প্রভাবশালী ও সামর্থবান নেতাদের পাশে পেয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরাও কিছুটা চাঙাভাব ফিরে পাচ্ছেন। তাদের মধ্যেও বইছে ঈদের খুশির পাশাপাশি ভোটের হাওয়া। জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে অতীতের মতোই বিএনপিতে দুই ধারার রাজনীতি এবারও চলমান। যেসব নেতারা রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক রাজনীতি করেন তারা ঢাকাতেই ঈদ উদযাপন করবেন। রাজধানীতে থেকে তারা দলের হাই কমান্ডের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আর মাঠের রাজনীতির বিশেষ করে ভোটের রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া নেতারা ছুটে যাবেন যেসব এলাকা থেকে তারা জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন সেসব এলাকায়। দলটির অনেক নেতাই চেয়ারপারসনের নেক নজরে থাকার চেষ্টা হিসেবে ঢাকা থাকাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা ঈদের জামায়াত শেষে ছুটে যাবেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের দিকে। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নেতাকর্মী এবং সমাজের সর্বস্তুরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার ও বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন তিনি। এরপর গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় কাছের কিছু আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এদিকে, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও একমাত্র মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে ইংল্যান্ডে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এবার তার সঙ্গে ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়ে তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অস্ট্রেলিয়ায় তার প্রবাসী বড় মেয়ে মির্জা শামারু সঙ্গে ঈদ করবেন। মির্জা ফখরুল গত ২০ জুন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেছেন।
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র, মাঝারি ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাই এবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। যারা যেতে পারবেন না, তারা ইতিমধ্যে এলাকায় গিয়ে ঘুরে এসেছেন।
সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য তরিকুল ইসলাম বরাবরের মতোই নিজ শহর যশোরে, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ রাজধানী ঢাকাতে, ড. আবদুল মঈন খান নরসিংদী ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। ওমরা থেকে ফিরে মির্জা আব্বাস ঢাকার শাহজাহানপুরে ঈদ উদযাপন করবেন। নজরুল ইসলাম খান ঢাকাতে ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন সকালে তার নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঢাকায় চেয়ারপারসনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার। নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ করবেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাজধানী ঢাকাতে ঈদ করবেন যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা সিটি দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেল। ল²ীপুরে ঈদ করবেন প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান এনাম আহমেদ চৌধুরী সিলেটে, ইকবাল হাসান মাহমদ টুকু ঢাকাতে, শওকত মাহমুদ ঢাকা ও কুমিল্লায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশাল, হারুনুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ঢাকাতে, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাটে, মশিউর রহমান চাপাইনবাবগঞ্জে, এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে ঈদ করবেন।
এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টাদের মধ্যে এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাতে, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন ঢাকাতে ঈদ করবেন।
অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ঢাকাতে ঈদের নামাজ পরে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরদিন টুকু টাঙ্গাইল যাবেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ঢাকায় ঈদ করবেন। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ঢাকাতে ঈদ করবেন। দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন ঈদের দিন চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।
এসব নেতা ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবারও কারাবন্দিদের সঙ্গে কারাগারেই ঈদ করছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীও কারাগারে ঈদ করবেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ইনকিলাবকে বলেন, শুধু ঈদ কেন্দ্রীক না, রাজনীতি করি সার্বক্ষণিক। তাই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও সব সময় থাকে। তবে সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের গুঞ্জন বা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাই এবারের ঈদটিও একটু অন্যরকম আবহ নিয়েই আসছে।
দুলু বলেন, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য দুঃখের কথা হচ্ছে ভোটারবিহীন আওয়ামী বাকশালী সরকারের কারণে আমি আমার নির্বাচনী এলাকা তথা জেলা নাটোরে যেতে পারছি না। সেখানে আমার যাওয়ার প্রতি এরা হুলিয়া জারি করে রেখেছে। গেলেই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকেরা ঝামেলা তৈরি করে। নতুন করে হামলা-মামলা দেয়। সে কারণে এবারের ঈদে যেমন নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে পারছি না তেমনি আমার মরহুম মা-বাবার কবরটাও আমি জিয়ারত করতে পারব না। এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।