পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এবারের ঈদ যাত্রায় গোটা রেলকে কলঙ্কিত করেছে রংপুর এক্সপ্রেস। ঈদ যাত্রার শুরুর দিন সঠিক সময়ে চললেও পরের দিন গত শুক্রবার দুই ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে পথিমধ্যে আরও ৪ ঘণ্টা যোগ হয়ে বিলম্বের পাল্লা ৬ ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই ট্রেনের যাত্রীদের। সেই ৬ ঘণ্টার ঝক্কি গতকালও ছিল। সবমিলে সিডিউল ভেঙ্গে পড়া ট্রেনটি নিয়ে যাত্রীদের অনেক ক্ষোভ। ঈদ যাত্রায় এই একটি মাত্র ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ে বিব্রত হয়েছেন রেলমন্ত্রী। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অথচ গত শুক্রবার সকালে রেলওয়ের ক্যারেজ ও লোকো বিভাগের প্রকৌশলীরা দায়িত্বশীল হলে এমন অবস্থা হতো না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা বরাবরের মতো দায় এড়িয়ে চলে নিজেদের রক্ষা করেছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শুক্রবার রংপুর থেকে ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৭টায়। স্বাভাবিক নিয়মে ট্রেন থেকে ইঞ্জিন খুলে চলে যায় লোকোশেডে। নতুন ইঞ্জিন (নং ২৯৩২) লাগানোর পর দেখা যায় ইঞ্জিনে ভ্যাকুয়াম (বাতাসের চাপ) সঠিকভাবে হচ্ছে না। ভ্যাকুয়াম না হলে ট্রেনের ব্রেকের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে বেশি গতিতে চলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এই ভ্যাকুয়াম না হওয়ার জন্য ক্যারেজ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মচারিরা একটি কোচকে (নং ৬২০৯) চিহ্নিত করে। কিন্তু উপস্থিত ক্যারেজ বিভাগের একজন কর্মকর্তা কোচের কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে লোকোর (ইঞ্জিন) সমস্যাকে দায়ী করেন। তার কথা মতো, আরেকটি ইঞ্জিন (নং ২৯২৩) এনে লাগানো হয়। এবার ভ্যাকুয়াম কিছুটা পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ক্যারেজ বিভাগের একজন জানান, কোচের সমস্যাটা শুরুতেই ধরা পড়েছে। কিন্তু ক্যারেজ বিভাগের কর্মকর্তারা সেটা মানতে নারাজ। তারা লোকোর ত্রæটিকে দুষছেন। আবার লোকো বিভাগের কর্মকর্তা দুষছেন কোচকে। এ নিয়ে ঠেলাঠেলিতে কেটে যায় এক ঘণ্টার বেশি সময়। এরপর ওয়াশপিটে নিয়ে ধোয়ামোছার কাজ করতে গিয়ে কেটে যায় আরও এক ঘণ্টা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলওয়ের কর্মচারীদের ভাষ্য, কমলাপুর স্টেশনে তখন কয়েক হাজার যাত্রী অপেক্ষমাণ। তাদের কথা চিন্তা করে ওই দিন ট্রেনটি ওয়াশপিটে না নিলেও চলতো। প্লাটফরমেও ধোয়ামোছার কাজ করানো যেতো। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা করেন নি। বরং রেকটি ওয়াশপিটে পাঠিয়ে দেরির তালিকা দীর্ঘ করেছেন। ঈদ উপলক্ষে তাদের এই অবহেলার তদন্ত হওয়া উচিত। ওই ট্রেনের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার পর আবার বিপত্তি ঘটে বঙ্গবন্ধু সেতুর পুর্ব পাড়ে। সেতুতে ওঠার আগে ধরা পড়ে একটি কোচের পাইপ ফেটে সব বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে। দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পরও সেটি মেরামত করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ৬২১০ ও ৬২২৬ নং কোচের মধ্যাংশে ভ্যাকুয়াম ক্লোজ করে অর্ধৈক ট্রেন নন-ভ্যাকুয়াম করে রংপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। ট্রেন চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নন-ভ্যাকুয়াম ট্রেন দ্রæতগতিতে চালানো যায় না। তাতে ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ নন-ভ্যাকুয়ামে শুধুমাত্র ইঞ্জিনের ব্রেক কাজ করে। রেকের (সবগুলো কোচ মিলে একটি রেক) ব্রেক কাজ করে না। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সেদিন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও সঠিক গতিতে চলতে পারে নি বলে আস্তে আস্তে দেরির তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা, বঙ্গবন্ধু সেতুতে দেড় ঘণ্টা মিলে চার ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ট্রেনটি ৬ ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে ওই ভ্যাকুয়ামের কারনেই। এভাবে অর্ধেক ট্রেন নন-ভ্যাকুয়ামে কাউনিয়া পর্যন্ত যায় ট্রেনটি। ওই ট্রেনের শীতাতপ শ্রেণির একজন যাত্রী জানান, চলার সময় বেশ কয়েকবার এসি বিকল হয়ে যায়। এ নিয়ে অভিযোগ দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। কারন এসি কেবিনেও বিনা টিকিটের যাত্রীতে ঠাসাঠাসি ছিল। এমনকি কেবিন থেকে বাথরুমে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। ভুক্তভোগি এক যাত্রী বলেন, টাকা খরচ করে বহু ঝক্কি ঝামেলা সহ্য করে আমরা ট্রেনের টিকিট কেটেছি। এসি বিকল হয়ে যাওয়ার পর কেবিনে আর টিকতে পারছিলাম না। শিশু বাচ্চা নিয়ে তখন বড়ই বিপদে পড়েছিলাম। এটেনডেন্টকে বার বার বলার পরেও কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না। এটা যে কতো বড় দুর্ভোগ তা ভুক্তভোগি ছাড়া কেউ বুঝবে না। প্রশ্ন হলো, রংপুর এক্সপ্রেসের রেকটি কমলাপুর স্টেশনে ও ওয়াশপিটে চার ঘণ্টা থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এসির দুর্বলতাটা ধরতে পারলেন না কেনো?
শুক্রবারের সেই রেশ গতকাল শনিবারও কাটেনি। গতকাল রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকায় আসে বেলা ১২টার পর। এরপর ঈদ যাত্রার যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যায় বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে। অথচ ভোর থেকে শত শত ঘরমুখি যাত্রী ট্রেনটির জন্য কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনের ডিসপ্লেতে দেখা যায়, ট্রেনটি ১২টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাবে। এটা দেখার পর অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু বাস্তবে এরও এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরে ছাড়ে ট্রেনটি। ক্ষোভ প্রকাশ করে নাজমা আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, মেয়েকে নিয়ে ঈদ করতে রংপুর যাবো। সেজন্যে সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশনে এসেছি। আমাদের ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো সকাল ৯ টায়। কিন্তু স্টেশনে এসে জানলাম বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারে। রোজার দিনে এভাবে স্টেশনে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। রোজা রেখে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা যায়। আরেক যাত্রী সেতারা বেগম বলেন, প্রতি ঈদে বাড়ি ফেরায় ভোগান্তির শেষ থাকে না- এটা ঠিক। সকাল থেকে এসে স্টেশনে বসে আছি। কিন্তু এখনও ট্রেনই আসলো না। যাবো কখন? এমনিতেই আমাদের গন্তব্যে ট্রেন পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগে তারমধ্যে এই সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে কখন যে বাড়ি পৌঁছাই তার ঠিক নেই। পুরো স্টেশন জুড়ে আমাদের মতো কত মানুষ এ কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস গতকাল গেছে দেরিতে, এ কারণে আজ ঢাকায় ফিরতে দেরি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সিডিউল টাইম ঠিক রাখতে। যে কারণে অন্য সব ট্রেনই সময়মতোই স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্নটা এখানেই। ঈদ যাত্রায় সব ট্রেন চলছে সময়মতো। ব্যতিক্রম শুধু রংপুর এক্সপ্রেস! অথচ গত শুক্রবার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা একটু দায়িত্বশীল হলে এরকম অবস্থা হতো না। তাতে হাজার হাজার ঘরমুখি যাত্রী সীমাহীন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেন। গর্বে বুক ফুলে রেলমন্ত্রীও বলতে পারতেন,“এবারও ট্রেনের সিডিউলের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।’’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।