Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডায়রিয়া চিকিৎসায় আইসিডিডিআরবি’র সাফল্য অব্যাহত

এক বছরে দুই লাখ ২শ’ ৯জন রোগীকে সেবা প্রদান, শিশুই এক লাখ ১৯ হাজার ১৪

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় অভূতপূর্ব সাফল্য ধরে রেখেছে আইসিডিডিআর,বি। ২০১৬ সালে এক লাখ ১৯ হাজার ১৪ শিশু ডায়রিয়া রোগীকে সেবা দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত হাসপাতালগুলো। এই সময়ে দুই লাখ ২শ’ ৯জন ডায়রিয়া রোগীর সেবা দেয়া হয়েছে। এসব রোগীদের মধ্যে ৫৪ ভাগ পুরুষ এবং ৪৬ ভাগ নারী। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬’র বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইসিডিডিআর,বি গত ৮জুন তার সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করেছে। যেখানে মাতৃমৃত্যু এবং নবজাতকের মৃত্যু, অপুষ্টি, এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণ, উদ্ভ‚ত ও পুনঃসম্পর্কিত রোগ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক প্রতিবেদনে, আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তণজনিত কারনে মাইক্রোবিয়াল সম্প্রদায়ের কতটা বিস্তার লাভ করে, কলেরার ভ্যাক্সিনের কার্যকরিতা এবং কোন অসংক্রামকরোগগুলো জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এসব বিষয়ে গবেষণা লব্ধ ফলাফল নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে আইসিডিডিআর’বির ঢাকা হাসপাতালে এক লাখ ৩৬ হাজার ৫৩২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৫৮ ভাগ পুরুষ এবং ৪২ ভাগ নারী। তবে বয়সের হিসেবে মোট রোগীল ৬১ ভাগই রোগীই ৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৩৯ ভাগ ৫ বছরের বেশি বয়সী। এছাড়া মতলব হাসপাতালে গত বছর ৪৮ হাজার ৯১১ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ৪৪ ভাগ, নারী ৫৬ ভাগ। ৫ বছরের কম বয়সী রোগী সংখ্যা ৬০ ভাগ। এছাড়া ঢাকার মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে গত বছর ১৪ হাজার ৭৬৬ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। যার মধ্যে পুরুষ ৫৫ ভাগ এবং নারী ৪৫ ভাগ।
বিগত বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি মোট আয় করেছে ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যারমধ্যে ৫০ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে উপার্জন করতে হয়েছে। ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার এসছে নিয়মিত দাতাদের কাছ থেকে। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে আরও ৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে আইসিডিডিআর,বির ঢাকা হাসপাতালে ৭২৯টি ক্লিনিক্যাল গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। ৩১৭টি গবেষণা পত্র প্রকাশ হয়েছে। যারমধ্যে ১১ হাজার ৯৯৪টি পৃথক বিষয় অন্তভর্‚ক্ত ছিল। এই কাজগুলো সম্পাদনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন ২২২জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৫০টি প্রকল্প চলমান আছে। ১২০টি প্রকল্প নতুন করে যুক্ত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর জন ডি ক্লেমনস বলেন, বিগত ৫ দশক ধরে আইসিডিডিআর,বি বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সমস্যার সমধান করে আসছে এবং অনেক জীবন বাঁচিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নবজাতক, শিশু এবং মাতৃ রোধে এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
প্রসঙ্গত ১৯৬০ সালে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরী নামে যাত্রা শুরু করে আজকের আইসিডিডিআর,বি। পরে ১৯৭৮ সালে জারীকৃত একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হলেও মূলত বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি স্বায়ত্বশাসীত প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি ডায়রিয়া ও সংশ্লিষ্ট জীবন বিপন্নকারী রোগ ব্যাধির বিরুদ্ধে গবেষণা করে সফলতা অর্জন করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইন বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্ভাবন। বিগত ৩০ বছরে খাবার স্যালাইন ব্যবহারে ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুহার অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে এবং রক্ষা করেছে বিশ্বের ৫ কোটিরও বেশী শিশুর জীবন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন, অপুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্যসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ