Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কোয়েল পালনে ভাগ্য বদল

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে অনেক ভাবেই আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। প্রোল্ট্রির জগতে ক্ষুদ্র পাখি কোয়েল। আগে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে খামারে বানিজ্যিকভাবে এখন পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। আমাদের দেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য বেশ উপযুক্ত। কোয়ল পাখির খামার করে এমন এক দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন মাদারীপুরের সজল নামের এক যুবক। কোয়েল পাখির খামার দিয়ে ডিম ও পাখি বিক্রি করে তিনি এলাকার বেকারদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছেন। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয় পাশাপাশি পালন করছেন সোনালি জাতের মুরগী।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনাথদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মজিবুর রহমানের ছেলে শ্রাবন হাসান সজল। সজলের বাড়ির আঙ্গিনায় পা রাখতেই দেখা গেল তার হাতে গড়া কোয়েল পাখির একটি খামার। বাড়ির পাশে নিজেদের প্রায় দুই শতাংশ জমিতে প্রশস্ত একটি ঘর তৈরি করে তার চারপাশে নেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কোয়েল পাখির খামার। খামারের পাশেই তার বসত ঘরে বসে কোয়েল পালনের নানা বিষয়ে কথা হলো সজলের সাথে। তার কাছে জানা গেলো, সজল একজন ছাত্র। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর অফ ভেটেনারী মেডিসিন (প্রাণী চিকিৎসা) বিভাগে ৩য় বর্ষে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির শুরুতে নিজের হাত খরচ ম্যানেজ করার জন্য কিছু একটা কাজ খুঁজছিলেন, যাতে করে আর্থিক সংস্থান করা যায়। হঠাৎ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোয়েল পাখি পালন সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি এবং তখন বিক্রয় ডটকম থেকে একজন কোয়েল পাখির খামারির নাম্বার সংগ্রহ করে তার কাছ থেকে ২০০ পিস ১ মাস বয়সী পাখি কিনে নিয়ে এসে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার। পাখিগুলো যখন ১ মাস পর থেকে ডিম দিতে শুরু করল তখন থেকেই সজল ভাবতে লাগলেন এটা আসলেই একটি লাভজনক ব্যবসা হবে। অবশ্য সেই সময়ে তার পিতা সৌদি প্রবাসী মজিবুর রহমানের কাছ থেকে অনেক আর্থিক সার্পোট ও সজলের মা জামিলা বেগমের সহযোগিতায় যশোর থেকে আরো এক হাজার পিছ ১ মাস বয়সী কোয়েল পাখি কিনে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করেন। ১টি স্ত্রী কোয়েল ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ডিম পাড়া শুরু করেন। এরা ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়।
সজল আরো জানান বর্তমানে তার খামারে রয়েছে প্রায় ২৫০০ কোয়েল পাখি। প্রতিদিন ডিম পাচ্ছেন গড়ে ৮০০। খামারে প্রতিদিন তিনি ডিম বিক্রি করে ১৬০০ টাকা আয় করেন। প্রতি মাসে তাদের খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। এভাবে বেকার সজল কোয়েল পাখির খামার দিয়ে বেকারত্বকে পরাজিত করে অল্প বয়সেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। কোয়েল পাখির খামার করে সজলের স্বাবলম্বী হওয়া প্রসঙ্গে মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সজল তার নিরলস চেষ্টা আর পরিশ্রম করে বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হয়েছে। সজলের এই সাফল্যকে আমি উৎসাহ প্রদান করি। প্রয়োজনে প্রানী সম্পদ বিভাগের কোন সহযোগিতা লাগলে অবশ্যই তাকে তা দেয়া হবে। কোয়েল পাখি পালনে বেশ সুবিধা রয়েছে। কোয়েল দ্রæত বর্ধনশীল, মাত্র ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে। ডিমে কোলেস্টরেল কম, প্রোটিনের ভাগ বেশী। মাত্র ১৭/১৮ দিনে কোয়েলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। হাসমুরগীর চেয়ে কোয়েলের রোগ বালাই নেই বললে চলে। এ কারনে কোয়েল পাখির খামার করতে অনেকেই আগ্রহী। দেশের বিভিন্নস্থানে যেভাবে কোয়েল পাখির খামার হচ্ছে তাতে অতিশীঘ্রই এইখাতে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে একটি বিরাট পরিবর্তন আনবে বলে এই কর্মকর্তার মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ