Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রক্তাক্ত জনপদের পুরনো চিত্র ফিরে এসেছে খুলনায়

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ছাত্রদল নেতা শিপলুকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : একের পর এক হত্যাকান্ডে রক্তাক্ত জনপদের পুরানো দিনের চিত্র ফিরে এসেছে খুলনায়। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। লাগাম টানবে কে? সর্বশেষ-খুলনারবিএল কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ও মহানগর ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল শিপলু মোল্লা (৩০) কে নৃশংসভাবে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের দেয়ানাস্থ নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।নিহত শিপলু দেয়ানা এলাকার মোঃ ফারুকুজ্জামান বাবু মোল্যার ছেলে। তিনি বিএল কলেজ ছাত্রদল নেতা হলেও ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, দৌলতপুরের দেয়ানা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রদল নেতা শিপলুকে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় শিপলুর স্বজন ও সহকর্মীদের আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শিপলু হত্যার খবর শুনে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মুরাদ, শের আলম সান্টু, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তার সাথে ছিলেন। তারা এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। গত বুধবার বিকেলে দৌলতপুরে বিক্ষোভ করেছে মহানগর ছাত্রদল।
হত্যাকান্ডের বিষয়ে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। শিপলু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছেন। ময়না তদন্ত শেষে গত বুধবার দুপুরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখনো মামলা হয়নি; তবে ঘটনাস্থলের পাশের ড্রেন থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি সোরা উদ্ধার করা হয়েছে। দৌলতপুরের পূর্ব দেয়ানার বাসিন্দা মোঃ আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও ইমাদুল ইসলাম ইমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ হত্যাকান্ডে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরধরে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন ওসি।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, হত্যাকান্ডের সাথে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান এবং তার ভাই বিল্পব জড়িত বলে নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ছাত্রদল নেতার পিতা মোঃ ফারুকুজ্জামান বাবু মোল্লা জানান, হাসান ও বিল্পবরা দশ ভাই, তারা এলাকায় প্রভাবশালী। বিল্পব ও তার ভাই হাসান এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত।
তবে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলীর বলেন, এ ঘটনা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নাই। তবে কেউ জড়িত থাকলে তার বিচার হবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরা সুলতানা বলেন, দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে খুলনা ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএল) কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফয়সাল শিপলু মোল্লাকে হত্যা করেছে।
প্রসঙ্গত্ব, গত ১৪ জুন নগরীর রায়েরমহল এলাকায় সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মোল্যা (৬৫) কে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ আজমসহ আরো চারজন গুলিবিদ্ধ হন। তারআগে, গত ২ জুন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নগরীর ৫নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি ইকবাল সরোয়ারকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। এছাড়া গত ২৫ মে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের গাজীকে গুলি করে হত্যা করেছিল দুষ্কৃতকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গেল এপ্রিলে খুলনায় পাঁচটি ও মে মাসে চারহত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। আর চলতি মাসে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, গুলি ও ধারালো অস্ত্রে অন্তত পাঁচজন খুন হয়েছেন।
সূত্রমতে, একসময় চরমপন্থী অধ্যূাষিত খুলনা ছিল খুনো-খুনি,চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শিরোনাম। কুখ্যাত খুনী এরশাদ শিকদারের নিষ্ঠুরতা দেশবাসীর অজানা নয়।প ্রায় প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো খুনের খবর। এইসব চরমপন্থী, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহায় পাইনি খুলনার খ্যাতিমান রাজনৈতিক নেতা, প্রথিতযশা সাংবাদিক, ব্যবসায়ী-শিক্ষকসহ সকল পেশার মানুষ। নিরব চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ ছিল ব্যবসায়ী মহল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় সাড়াশি অভিযান; পরবর্তীতে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত চরমপন্থী/সন্ত্রাসী নেতারা ক্রসফায়ারে নিহত হলে স্বস্তি ফিরে আসে খুলনায়। অনেকে নিজেকে সুধরে নিয়ে আলোর পথে ফিরে আসে।
বর্তমান সরকারের প্রথমদিকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী দমনে বেশ পদক্ষপের কারণে চরমপন্থী-সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিতে না পারলেও সম্প্রতি আবার একেরপর এক লাশের দেখা মিলছে। সম্প্রতি জেলা বিএনপি নেতা, আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, কলেজ ছাত্রসহ কয়েকজন খুন হয়েছেন। আর কত? এখুনি লাগাম টানার আহ্বান খুলনাবাসীর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ