Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অধিকাংশ ট্রেন চলছে সময় মেনে : বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না : মহাসড়কে যানজট ভোগান্তির প্রধান কারণ : সওজের অবহেলার খেসারত দিচ্ছে যাত্রীরা
নূরুল ইসলাম : সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। বাস লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পরা ভিড়। পথে পথে সীমাহীন ভোগান্তি-বিড়ম্বনা। তারপরেও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। গত বুধবার থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল শুরু হয়েছে। আজও অব্যাহত থাকবে শেষ মুহূর্তের ঢল। ভুক্তভোগিদের মতে, এবার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো থাকলে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হতো না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অবহেলার খেসারত দিতে হচ্ছে ঘরমুখি মানুষকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের কবলে পড়ে ঘরমুখি মানুষদেরকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার টার্মিনালগুলোতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি যাত্রীদের। উপচে পরা ভিড় থাকলেও অধিকাংশ ট্রেন চলছে সময় মেনেই।
আগামী ২৬ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাবে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। এজন্য ঘরমুখি যাত্রীদের যাত্রা শুরু হয়েছে মূলত গতকাল থেকেই। অফিস শেষ করেই অনেকেই রওনা করেছেন গ্রামের পথে। এজন্য সকাল থেকে রাজধানীর বাস, লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল স্টেশনে ছিল উপচে পরা ভিড়। গাবতলী বাস টার্মিনালে খবর নিয়ে জানা গেছে, আগে থেকে অগ্রিম টিকিট কাটার কারনে গাবতলীতে এবার যাত্রীদের হুড়োহুড়ি নেই। গাবতলী টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের এক নেতা জানান, এখনও পর্যাপ্ত বাসের টিকিট রয়েছে। যারা অগ্রিম টিকিট পাননি তারা টার্মিনালে এসে অনায়াসে টিকিট নিয়ে রওনা করতে পারছে। মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালেও যাত্রীদের ভিড় থাকলেও টিকিটের জন্য কোনো হাহাকার ছিল না। এজন্য যাত্রীদেরকে বেশ উৎফুল্লই দেখা গেছে। তবে সেই আনন্দ ক্রমে ম্লান হয়ে গেছে টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ার পরে। সায়েদাবাদ টার্মিনালের এক বাস মালিক জানান, টার্মিনাল থেকে বাসগুলো ছেড়ে যাত্রাবাড়ী মোড় পার হয়ে ৮ লেনের মহাসড়কে উঠতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। কাঁচপুর সেতুতে দীর্ঘ যানজট যাত্রীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কাঁচপুর সেতু পার হওয়ার পর কিছুক্ষণ চলার পর মেঘনা সেতুতে গিয়ে আবারও যানজট। জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কি.মি. দীর্ঘ যানজট ছিল। এতে করে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। বিকালে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হাসেম আলী মুন্সী জানান, সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কি.মি. যানজট সৃষ্টি হয়। মেঘনা সেতু থেকে গোমতী সেতু পর্যন্ত এই যানজট ক্রমে দীর্ঘ হতে থাকে। চট্টগ্রামগামী যাত্রী আসাদ শিকদার বলেন, রোজা রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে আটকে থাকা সত্যি খুবই কষ্টকর।  আমার মতো শত শত যাত্রী এমনকি নারী ও শিশুরা গরমে কষ্ট করছে। তিনি বলেন, প্রতিবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হয়। এবার তো বহু আগেই ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল সকাল থেকে অনেকটা ধীরগতিতে চলেছে যানবাহন। মহাসড়কে মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ যানজটের জন্য ভাঙাচোরা মহাসড়ককে দায়ী করেছেন বাস চালকরা। তাদের ভাষ্য, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আগে থেকে একটু দায়িত্বশীল হলে এরকম ভয়াবহ অবস্থা হতো না। তারা সময়মতো সংস্কার না করায় মহাসড়কের এই বেহাল দশা। অন্যদিকে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়ককে ৬টি ভাগে বিভক্ত করে আট শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ৪৫টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করছে। একই সাথে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন দ্রুত অপসারণের জন্যে তিনটি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও গতকাল যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের এক চালক জানান, সকাল থেকে থেমে থেমে যানজট ছিল। পুলিশের প্রচেষ্টায় যানজট কিছু সময়ের জন্য না থাকলেও আবার গাড়ির চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গাউসিয়া এলাকায় ভোর থেকে যানজটে বহু গাড়ি আটকা পড়ে। ভুক্তভোগিরা জানান, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারনে এই অংশের যানজট একেবারে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। যার প্রভাব পড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কেও।
সময় মেনে চলছে অধিকাংশ ট্রেন
ঘরমুখো যাত্রীদের একটা বড় অংশ ট্রেনের যাত্রী। তারাও ছুটছেন ট্রেনের বগিতে, ছাদে। গতকাল দিনাজপুরের এক যাত্রী বলেন, স্টেশনে এতো মানুষ আগে কখনও দেখিনি। এতো মানুষ কিভাবে যাবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার) ভিড় অনেক বেশি। ঈদকে কেন্দ্র করে এবার ট্রেনের বড় ধরণের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল সকালে দিনাজপুর থেকে আগত নীলসাগর, দ্রুতযান, চট্টগ্রামের সোনার বাংলা, মহানগর, সুবর্ণসহ অধিকাংশ ট্রেন চলেছে সময় মেনে। রাতে কমলাপুর স্টেশন থেকে দিনাজপুরগামী দ্রুতযানও সঠিক সময়ের মাত্র কয়েক মিনিট পরে ছেড়ে গেছে। সকালে রংপুর এক্সপ্রেসে ছেড়েছে মাত্র তিন মিনিট দেরিতে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক ইনকিলাবকে বলেন, এবারও ট্রেনের সিডিউলের কোনো সমস্যা হবে না ইনশাল্লাহ। জানা গেছে, মঙ্গলবার যান্ত্রিক ত্রুটিতে সুইচ কেবিনের কিছু সমস্যার কারনে কয়েকটি ট্রেন দেরিতে কমলাপুর ছাড়ে। সেটাকে একটি পত্রিকা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় বলে প্রচার করে। রেলমন্ত্রী জানান, ঈদের যাত্রীদের সঠিক সময়ে পরিবহন করার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া আছে। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এবার প্রতিদিন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেল। এজন্য বাড়তি কোচ সংযোজন করা হয়েছে প্রতিটি ট্রেনে। চলছে ঈদ স্পেশাল ট্রেন। সব মিলে এবার ট্রেনের যাত্রীরা অনেকটাই আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করছেন।
অন্যদিকে, গতকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী  লঞ্চের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিআইডবিøউটিএ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল প্রতিটি লঞ্চে ভিড় থাকলেও আজ থেকে ভিড় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সদরঘাট টার্মিনালের বন্দর কর্মকর্তা জানান, এবারও আগে থেকেই লঞ্চের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়েছিল। তবে সাধারণ যাত্রীরা অগ্রিম টিকিটের চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে টিকিট কেটেই লঞ্চে ওঠে বেশি।



 

Show all comments
  • মাহমুদা ২৩ জুন, ২০১৭, ২:০৭ এএম says : 0
    সওজের অবহেলার জন্য যাত্রীরা আর কত খেসারত দিবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ