Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম ছেড়ে ঘরে ফেরা বাস-ট্রেন-লঞ্চে টিকিট সঙ্কট

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


পথে পথে বিড়ম্বনা
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বাস, ট্রেনে টিকিট সংকটসহ নানা দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনাকে সঙ্গি করে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে ঈদে ঘরে ফেরা। প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্দরনগরী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ।
বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশন আর টার্মিনালে যাওয়ার পথে পড়তে হচ্ছে তীব্র যানজটে। ঘরে ফেরার আনন্দ মাটি হচ্ছে পথে পথে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশ ছাড়া বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়ছে ঘরমুখো মানুষ।
এতসব ঝক্কি-ঝামেলা আর বিড়ম্বনার পরও মাটির টানে ছুটছে মানুষ। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিটে যাত্রা। স্টেশনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। একইচিত্র দেখা গেছে নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতেও। আজ বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর শুরু ঈদের লম্বা ছুটি। ফলে আজ থেকেই ট্রেন, বাস আর লঞ্চে ঢল নামবে ঘরমুখো মানুষের। ঈদের বাকি দুই অথবা তিনদিন। এর মধ্যে মহানগরী ছাড়বে কয়েক লাখ মানুষ।
ইতোমধ্যে নগরীর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে টালমাটাল হয়ে পড়েছে। আগামী দুইদিন এ ভিড় আরও বাড়বে। টিকিটের জন্য চলছে হাহাকার। ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে অনেক আগে। ট্রেনে সিট ছাড়া যাত্রী হয়ে কিংবা বিনাটিকিটে ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। দূরপাল্লার বাসে টিকিট নেই। বাস পাওয়া গেলে টিকিট দেয়া হবে এমন আশ্বাস দিচ্ছেন কাউন্টারের কর্মকর্তারা।
স্বাভাবিকের তুলনায় ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাস সংকটে পড়েছে দূরপাল্লার বাস সার্ভিসগুলো। অতিরিক্ত যাত্রী চাপ সামাল দিতে বিভিন্ন আন্তঃজেলার বাস এনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। টিকিট ও পরিবহন সংকটের কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে বাস সার্ভিসগুলোর বিরুদ্ধে। নৌপথে যাত্রী পরিবহন চলছে সীমিত আকারে। চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ বেশ কয়েকবছর ধরে। এতে করে বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বিকল্প পথে বাড়ি যেতে হচ্ছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে দৈনিক গড়ে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। নিয়মিত ট্রেন সার্ভিসের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৮৬টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। থাকছে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও। বিশেষ ব্যবস্থায় যাত্রী পরিবহনে ২০টি আন্তঃনগর, ১০টি  মেইল ট্রেন ও চারটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস রাখা হয়েছে। নিয়মিত ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিক যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার। তবে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও অন্যান্য কোচ যুক্ত করার ফলে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঈদের আগে ২৩ জুন থেকে চট্টগ্রাম চাঁদপুর রুটে ৪টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। চাঁদপুর স্পেশাল-১ ট্রেন সকাল সাড়ে ১১টায় এবং চাঁদপুর স্পেশাল-২ বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে।
চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী ও সাগরিকা বাস টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার বাস চলাচল করছে। প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত বাস নামানো হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাস সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রী নিয়ে গেলেও গ্রাম থেকে খালি ফিরছে বাসগুলো। এ কারণে ভাড়া কিছুটা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছে দূরপাল্লার যাত্রীরা। চট্টগ্রাম থেকে বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বগুড়া, খুলনা ও বরিশাল এবং সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের পথে পথে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস সংকটের কারণে টিকিটের জন্য হাহাকার চলছে। নগরীর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলো।
বাস কাউন্টারের ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির পর আর কোন টিকিট দেয়া হচ্ছে না। কারণ বাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ বাস সার্ভিস টিকিট দিতে পারছে না। বাস পাওয়া সাপেক্ষে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কের অবস্থা ভাল হলেও বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাস চলছে ধীরগতিতে। এ কারণে সিডিউল রক্ষা করা যাচ্ছে না। দুর্যোগের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর দূরপাল্লার বাসের যাত্রী কম বলেও জানান তিনি। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা এবার গ্রামে যাচ্ছেন না। ওই অঞ্চলের যারা এ শহরে চাকরি কিংবা ব্যবসার সুবাদে বসবাস করছেন তাদের অনেকে গ্রামে স্বজনদের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়ে এখানেই ঈদ করছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে যাত্রী পরিবহনে এবারও চরম দুরবস্থা চলছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা রুটে দু’টি উপকূলীয় জাহাজ চলাচল করছে। বিআইডবিøউটিসির ডিজিএম ভূপাল চন্দ্র সরকার বলেন, এমভি মনিরুল হক ও এমভি বার আউলিয়া চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এমভি কাজল মেরামতের জন্য এখনও ডকইয়ার্ডে রয়েছে। এটি আগামীকাল শুক্রবার যাত্রী পরিবহন শুরু করতে পারে। বরিশালের সাথে সরাসরি নৌপথে যাত্রী পরিবহন এবারও হচ্ছেনা বলে জানান তিনি। স›দ্বীপ রুটে সি-ট্রাক ও বেসরকারি কিছু নৌযানে যাত্রী পরিবহন চলছে। বরিশালের সাথে নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীরা চাঁদপুর ও ল²ীপুর হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এতে করে তাদের দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে প্রায় ৬০ লাখ লোকের বসবাস। এ জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নগরীতে বসবাস করেন। ঈদ উপলক্ষে এদের বিরাট অংশ গ্রামে যাচ্ছে। এবারও মহানগরীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ ঈদ করতে গ্রামে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ