বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নাছিম উল আলম : আষাঢ়ী বর্ষার অমবশ্যার ভড়া কোটালে ভর করে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার মধ্যেই এবারের ঈদ উল ফিতরে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখি জন স্রোত শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। আজ (বৃস্পতিবার) ঈদপূর্ব শেষ কর্ম দিবস হলেও আষাঢ়ী ঢলের সাথে ঘরমুখী জনস্রোত শুরু হবে কাল (শুক্রবার ) থেকে। দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে এখনো আবহাওয়া যথেষ্ট দূর্যোগপূর্ণ। গতকালও বরিশালে মাত্রা আড়াই ঘন্টায় প্রায় ১১৫মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১১৫মিলিমিটা বৃষ্টিপপাতের সাথে বাতাসের গতি ছিল প্রায় ২০কিলোমিটটার। সাথে বিকট গর্জনের বজ্রপাতে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন সম্পূর্ণভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পরে। সন্ধায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।
বেসরকারী নৌযান, বাস ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো ঈদের আগে পরে সারা দেশ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত দশ লাখ মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত করতে চায়। এর সিংহভাগ মানুষই যাতায়াত করবে ঢাকা থেকে বরিশালে। বেসরকারী অন্তত ১৬টি নৌযান আগামীকাল থেকে প্রতি দিন দুটি করে ট্রিপে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা নদী বন্দরে যাত্রী পরিবহন করবে। এর বাইরেও দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৫০টি লঞ্চঘাটে ঢাকা থেকে যাত্রী আসবে। এমনকি বেসরকারী আকাশ পরিবহন সংস্থা-ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঈদের আগে ও পরে ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে তার নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি বিশেষ ফ্লাইটে যাত্রী টপরিবহন করছে। আর রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থাটি ঈদের ভীড়ের এসময়টিতে ভাড়া বাড়ানোর মধ্যেই তার যাত্রী সেবা(?) সীমাবদ্ধ রাখছে। এমনকি বরিশাল-ঢাকর প্রায় তিনগুন দুরত্বের আকাশ পথের ভাড়া বরিশালের প্রায় সমান নির্ধারন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থাটির হাতে ৬টি সচল নৌযান থাকার পরেও নিয়মিত ট্রিপের বাইরে মাত্র ৪টি করে বিশেষ ট্রিপ পরিচালনা করছে ঈদের আগে ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা নৌপথে। তবে সে সময়সূচীও যাত্রী বান্ধব নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর এসব সার্ভিসের প্রায় পুরোটাই অধিক ব্যায়বহুল দুটি স্ক্র-হুইল নৌযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। যা তার যাত্রীবাহী সেক্টরে লোকশানের পরিধীকে আরো বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। এর মধ্যে আবার অনেকটা অপ্রয়েজনীয় ভাবেই নিয়মিত ট্রিপের বাইরে আজ(বৃহস্পতিবার)সন্ধা ৬টায় ঢাকা থেকে আড়াইগুন জ্বালানী ব্যায়ের এমভি মধুমতি নৌযানটি বরিশাল পর্যন্ত চালান হচ্ছে শুধুমাত্র কেবিন যাত্রীদের জন্যই। সংস্থাটির বিশেষ ট্রিপের নৌযানগুলো ঢাকা থেকে সন্ধা ৬টায় ও নিয়মিত ট্রিপে সন্ধা সাড়ে ৬টায় পরিচালনের কারেন তাতে যাত্রীদের ভ্রমনে আগ্রহ কতটা থাকবে সে ব্যাপারে সন্দিহান ওয়াকিবাহাল মহল। ফলে বিপুল জ্বালানী ব্যায়ের এসব নৌযান দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন যাত্রীদের কতটা সহায়ক হবে তা নিয়েও সন্দিহান মহলটি।
অথচ আষাঢ়ী বর্ষনের সাথে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এবারের ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঘরে পৌছতে নিরাপদ নৌযানের কোন বিকল্প নেই। অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী বহনের ক্ষমতা না থাকায় বেসরকারী নৌযানগুলোতে ধারন ক্ষমতার কয়েকগুন যাত্রী বহনের বিষয়টি এড়ানোর কোন পথ নেই বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। সেক্ষেত্রে আবহাওয়া বিভাগের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রেখে নিরাপদ নৌযান চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি তার নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসের অতিরিক্ত আজ(বৃহস্পতিবার)থেকে শণিবার পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল ও পিরোজপুর পর্যন্ত ৩টি বিশেষ স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করছে। শুক্রবারে সংস্থাটির কোন নৌযান ঢাকা থেকে নিয়মিত সিডিউল না থাকায় সেদিন ‘পিএস অস্ট্রিচ’ অতিরিক্ত একটি বিশেষ ট্রিপ নিয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত যাবে। শণিবারে নিয়মিত ট্রিপের অতিরিক্ত ‘এমভি মধুমতি ঢাকা থেকে ছেড়ে চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে পিরোজপুরের হুলারহাটে যাত্রী নামিয়ে আবার ঢাকায় ফিরবে। কিন্তু সংস্থাটির বিশেষ ট্রিপের এসব নৌযানই ঢাকা থেকে সন্ধা ৬টায় যাত্রা করার কারনে তাতে ডেক যাত্রীদের ভ্রমণে কতটুকু আগ্রহ থাকবে সে বিষয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। যেখানে বেসরকারী নৌযানগুলো রাত ৮টা থেকে ৯টায় ঢাকা নদী বন্দর ত্যাগ করবে, সেখানে সরকারী নৌযানগুলো সন্ধা ৬টায় বন্দর ছাড়ার তফসিল নির্ধারন করাকে অযৌক্তিক ও অবাস্তব বলছেন যাত্রী সাধারন। এতকরে বিপুল জ্বালানী পুড়ে সরকারী নিরাপদ নৌযানগুলো মেঘনা পাড়ী দিলেও দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলে।
ঈদের পরেও সংস্থাটি ২৯জুন থেকে ২জুলাই পর্যন্ত নিয়মিত ট্রিপের অতিরিক্ত একটি করে বিশেষ নৌযান পরিচালনা করছে বরিশাল-চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল থেকে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলে ফেরার ভীড় অব্যাহত থাকবে ৮জুলাই পর্যন্ত। এমনকি বিগত দিনে ঈদের পরবর্তি অন্তত এক সপ্তাহ বিআইডবিøউটিসি’র ঢাকামুখি নিয়মিত ট্রিপের কোন নৌযানই বরিশাল বন্দরে ভিড়তেই পারেনি অতিরিক্ত বোঝাই-এর কারনে। ফলে প্রতিবারই বরিশাল বন্দরে বিপুল সংখ্যক যাত্রী আটকা পড়লেও সংস্থাটির নৌযান মাঝ নদী থেকেই ঢাকা চলে যায়।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দীর্ঘ প্রায় ৯মাস পরে বিআইডবিøউটিসি’র নির্ভরযোগ্য প্যাডেল স্টিমার ‘অস্ট্রিচ’ যাত্রী পরিবহনে ফিরছে আগামীকাল। গতবছর অক্টোবর থেকেই নৌযানটিকে নানা অজুহাতে ঢাকা ঘাটে বসিয়ে রাখা হয়। এর পরে মেরামতের নামে গত ২৬জানুয়ারী সংস্থার ১নম্বর ডকইয়ার্ডে নেয়া হলেও তা ডকিং করা হয় গত ১৩মার্চ। তলা মেরামত শেষে গত ১জুন অষ্ট্রিচ’কে পানিতে ভাসানোর পারে এর উপরী কাঠামো সহ আরো আনুষাঙ্গিক মেরামত শেষে গত মঙ্গলবার সন্ধায় নৌযানটি ঢাকা ঘাটে পৌছেছে। এখনো নৌযানটির নানা জরুরী মেরামতি চলছে ঢাকা ঘাটে। দীর্ঘ ৯মাসের বেশী সময় পরে আগামীকাল (শুক্রবার) পিএস অস্ট্রিচ একটি বিশেষ ট্রিপের যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জর উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে।
সংস্থার অপর প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ জাহাজগুলোও নিয়মিত ট্রিপে চলাচল করবে। তবে পরিচালন ব্যয়বহুল স্ক্র-হুইল এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী ঈদের আগ পরে বিশেষ ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। এসব ব্যায়বহুল নৌযান অধিক পরিচালনের ফলে সংস্থাটির লোকাশানের পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করার আশংকাও রয়েছে।
এব্যপারে গতকাল বিআইডবিøউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, যাত্রী চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে সব কিছু করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদেক সামনে রেখে শুধুমাত্র ঢাকা-বরিশাল রুটেই বেসরকারী ১৬টি নৌযানের টিকেট বিক্রী শেষ হয়ে গেছে আরো এক সপ্তাহ। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন অন্তত ৫০টি নৌযান যাত্রী পরিবহন করবে। এত অধীক সংখ্যক নৌযান রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চালচল করলেও যাত্রী ভীড়ের সুযোগে বেসরকারী নৌযান মালিকগন ভাড়াও বৃদ্ধি করছেন। তবে নৌযান মালিকগন এটাকে ভাড়া বৃদ্ধি না বলে সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় বলে দাবী করছেন। তাদের মতে, সারা বছর তারা সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে কমমূল্যে যাত্রী ভাড়া আদায় করে থাকেন। ঈদকে সামনে রেখে সরকার নির্ধারিত হারেই ভাড়া আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন একাধীক বেসরকারী নৌযান মালিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।