Inqilab Logo

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুড়িগ্রামে আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর কারণে বাঁধে ধস

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে ঃ কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২শত ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে চিলমারী উপজেলা রক্ষার ৬কিঃ মিঃ বাঁধ নির্মানের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বাঁধে জিও টেক্রাটাইল ফিল্টার বসানো বøক প্লেচিং, বøক ডাম্পিং ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর ফেজ-২ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়মিত তদারকি ও গোপন আতাতে ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন প্রকল্পে বিভিন্ন স্থানে বাঁধে ধস ও বাঁধ দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অথচ জুন ক্লোজিং এর নামে তড়িঘড়ি করে কাজ সম্পন্নের দুর্নীতির মহৎসব চলছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতিতে চিলমারীবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সিসি বøক তৈরী, কোন রুপ কম্পেকশন ছাড়াই জিও টেক্রাটাইল ফিল্টার বসানো ও বøক প্লেচিং এ মানা হয়নি সরকারের দেয়া নিয়মাবলী। এছাড়া ৫ ক্যাটাগরিতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সিসি বøক তৈরীর হিসাব তাদের রেজিষ্টারে থাকলেও বাস্তবে এর কোন মিল নেই। প্রকল্প গুলোর ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার সুবাদে সিন্ডিকেট করে যে যার মতো ডাম্পিংএর কাজটি রাতারাতি সেরেছেন। ফলে সরকারের চিলমারী রক্ষায় নেয়া প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, ২০১২সাল শুরু হয় উলিপুর উপজেলার বৈরাগীরহাট-চিলমারী বন্দর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প ফেজ-টু। ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ৩ দফায় ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫কি.মি. বাঁধে বøক ফেলার কাজ হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য সর্বশেষ ২০১৬সালে আরো প্রায় দেড় কি.মি. বাঁধের পরিধি বাড়িয়ে এই প্রকল্পের টাকা ধরা হয় ২৫৬ কোটি টাকা। উলিপুর উপজেলা হতে চিলমারী পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫০মিটারে বøক ডাম্পিং, বøক প্লেচিং, এবং জিওব্যাগ ডাম্পিং করার কাজ। এরমধ্যে অনন্তপুর বাঁধে ১ কি.মি., কাঁচকল বাঁধে ৩কি.মি. এবং চিলমারী বন্দরে ২কি.মি. বাঁধ ধরা হয়। ২০১৬ সালে ৯টি প্যাকেজে ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এই কাজ দেয়া হয় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলীকে শাস্তিমুলক বদলী করা হয়।
অভিযোগে জানাযায়, উৎকোচ বাণিজ্যের মাধ্যমে নেয়া চলমান কাজ গুলোর মধ্যে বেলাল হোসেনের দু’টি প্রতিষ্ঠান র‌্যাব আরসি, টিআইএসবি জেভি কে প্রায় ১৫ কোটি, সুশেনের রূপান্তর জেভি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫ কোটি, লিয়াকত আলীর এলএলটিজেভি প্রায় ৭ কোটি, আ. মান্নানের এমএ এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৮ কোটি, মাহফুজার রহমানের এমআরসি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭কোটি, খায়রুল কবির রানা প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৮ কোটি, কেএসএ ইমদাদুল হক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭কোটি এবং খন্দকার শাহিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৩ কোটি টাকার কাজ দেয়া হয়। স্ব-স্ব নামে কাজ পেলেও এইসব প্রতিষ্ঠান গুলো স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাব ঠিকাদার দিয়ে চালাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। নি¤œ দরদাতাদের কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাদের কাজ দেয়ায় সরকারে ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পগুলোর সাব ঠিকাদাররা লোকাল বালু ও ডাষ্ট পাথর এবং নাম মাত্র সিমেন্ট দিয়ে ৫ ক্যাটাগরিতে বøক তৈরীর কাজ করছেন। পানি উন্নয়ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে কর্ম এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাযনি। বাঁধের লেভেলিং শেষে কোন রুপ কম্পেকশন ছাড়াই জিও টেক্রাটাইল ফিল্টার বসানো ও নাম মাত্র ইটের খোয়া (৩য় শ্রেণীর ইট) দিয়ে বøক প্লেচিং এর কাজ চলছে। কোন হিসাব সংরক্ষন না করে বøক ডাম্পিং করা হচ্ছে নৌকার মাঝি ও লেবারদের মর্জিমাফিক। এভাবে মোট ৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে অনন্তপুর ৬টি, চিলমারী ১৪টি এবং কালিরকুড়া স্পার এর কাজ শেষ দেখানো হয়েছে। কাচকোল এলাকায় ১৭টি প্যাকেজের মধ্যে ৯টি শেষ, অনুরুপ ৮টির মধ্যে ৫টি এবং ৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান যা জুন ক্লোজিং এর মধ্যে শেষ করা হবে বলে দিনরাত চলছে। এরই মধ্যে কাচকল বাজার সংলগ্ন ¯øুইস গেট এলাকায় নির্মানাধীন বাঁধের বøক দেবে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বাঁধটি হুমকীর সম্মুখীন হয়েছে। বøক ডাম্পিং প্লেচিং এবং বøক তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সর্দার মোজাম্মেল মিয়া বলেন, ঠিকাদাররা যেভাবে কাজ করতে বলে সেভাবে কাজে করি। অনিয়ম হচ্ছে বুঝতে পারছি কিন্তু কিছুই করার নাই। অফিসের লোক মাঝে মধ্যে সাইডে দাওয়াত খেতে আসে, তারা অনিয়ম দেখলেও কিছু বলে না।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার নাছির উদ্দীন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে চিলমারী রক্ষায় নেয়া সরকারি উদ্যোগে আমরা খুবেই খুশী। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো যেভাবে কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি আশ্রয় নিয়েছেন এতে দীর্ঘমেয়াদী সুফল থেকে বঞ্চিত হবার আশংকা রয়েছে। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বøক তৈরী এবং একটি জিওব্যাগ কেটে ছোট দুইটি করে ডাম্পিং করার সময় এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে কর্মকর্তাদের অভিযোগ করেও সুফল পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ৬ কিঃ মিঃ বাঁেধর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল বা ধসের ঘটনাটি কোন ব্যাপার না। ধস ও ফাটল হলে আমরা সারা বছর মেরামত করে যাব। আর কাজে অনিয়মের অভিযোগ মোটেই সত্যি নয়। নিয়মনুযায়ী তৈরিকৃত বøক পরীক্ষা করে ফেলা হচ্ছে। ফলে শতভাগ কাজের মান নিশ্চিত করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো। সেখানে আতংক কিংবা উদ্বেগ হওয়ার কিছু নাই।

 



 

Show all comments
  • তুহিন ২২ জুন, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 1
    তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Rased Islam ২২ জুন, ২০১৭, ১২:৩১ পিএম says : 0
    Choto baccharao jane j j kono kajer jonno joto bajet hoy tar 5 vager ek vag o kaj hoya sb gulay chole jay neta kormider pocket a
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ২২ জুন, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 0
    মাত্র আড়াই শত কোটি টাকার বাঁধে অনিয়ম? এটা কোন একটা ব্যপার হলো বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য? ওটাতো বাঁধে অনিয়ম করেছে। হয়তো কিছু কাজ করেছে কিছু করে নাই। যেখানে কোন কাজ ছাড়া অনিয়ম করে দেশের তহবিল লুটে হাজার হাজার কোটি ডলার খেয়ে ফেলছে তার জন্য কি করেছে সরকার? কিছু করবে না, কারন খাদকেরা সরকারের ভেতরের লোক এবং আওয়ামী লীগেরই লোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rony Mollah ২২ জুন, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 0
    দেশটাই কি শেষ মেশ লুট করে ফেলে নাকি আল্লাই জানে
    Total Reply(0) Reply
  • Seraj Khan ২২ জুন, ২০১৭, ১২:৩৩ পিএম says : 0
    লুটপাটের মহোত্সব চলছে দেশে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ