বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে ঃ দৃষ্টিহীনতা আটকাতে পারেনি রফিকুলের অগ্রযাত্রাকে। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে লড়াই করে গেছে অন্ধত্বের সাথে। তার ফল পেতেও দেরী হয়নি। নিরলস প্রচেষ্টা, অধ্যাবসায় আর একাগ্রতার কারণে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে আজ সে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অথচ এই পথ কখনোই মসৃন ছিল না। সহপাঠি শিশু বন্ধুদের সাথে বেড়ে ওঠার সময় লক্ষ্য করেছিল অন্যান্যদের চেয়ে সে চোখে কম দেখে। এভাবেই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সে যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। তখনই ঘটল জীবনের সবচেয়ে করুণ পরিণতি।
প্রি-টেস্ট পরীক্ষা দেয়ার পর চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিয়েছে। তখনই বুঝতে পারল তার চোখের আলো ক্ষীণ হয়ে গেছে। পরীক্ষা যখন দোড়গোড়ায় তখন একেবারে দৃষ্টিহীন হয়ে পরেছে সে। ফলে পরীক্ষা দেয়া আর হলো না। পুরো জীবনটাই যেন ঢেকে গেল অন্ধকারে। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা পারিবারিক কাজের মধ্য দিয়ে তাকে নতুনভাবে বেঁচে থাকার পরামর্শ কাজে লাগল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় রফিকুল প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে আজ একজন প্রতিষ্ঠিত সফল প্লাস্টিক ব্যবসায়ী। কুড়িগ্রাম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা (বিসিকে) তার ফ্যাক্টরীতে এখন ২০ জন শ্রমিক কাজ করছে। মাসে গড় আয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয়ের পরও ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর জন্য আরো টাকা দরকার। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ীদের লোন দিতে অনিহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। ফলে বিভিন্ন ব্যাংকে ধরণা দিয়েও সফল হতে পারেনি সে।
রফিকুল জানান, ঢাকার বিক্রমপুরের লৌহজং থানার শিমুলিয়া গ্রামে তার বাড়ী। ১৯৮০ সালে তার জন্ম। তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবা মৃত: আব্দুস সাত্তার ছিলেন একজন কাপড় ব্যবসায়ী। জন্মগতভাবে সে চোখে ঝাপসা দেখত। পরিবারের লোকজন চোখের ডাক্তারকেও দেখিয়েছিল। কিন্তু এই ভাল তো; এই খারাপ। এভাবে মেঝো ভাইয়ের ব্যবসার সূত্রে যশোরে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সম্মিলনি ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া শুরু। লেখাপড়া ও ভাইয়ের প্লাস্টিক কারখানায় কাজ নিয়ে মগ্ন ছিল সে। কিন্তু এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষার সময় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেল সে। হতাশ রফিকুল ফিরে গেল শিমুলিয়ায়। ১৯৯৭ সালে বড় ভাই শহিদুল ইসলাম রফিকুলকে লালমনিরহাটে নিয়ে আসেন। লালমনিরহাট বিসিকে তার ছিল প্লাস্টিক কারখানা। সেখানে বদনা ও সুতা তৈরীর কাজ করা হয়। সে কাজে যুক্ত হয় সে। শ্রমিকদের কাজ দেখাশুনা করার পাশাপাশি নিজেও মেশিনে বসে কাজ করে। এখানে ৭/৮ বছর কাজ করার পর নিজে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করে সে। কুড়িগ্রাম বিসিকে বড় ভাইয়ের ২১ শতক জমির একটা প্লট ছিল। সেখানে নিজেই প্লাস্টিক পণ্যের কাজ শুরু করে রফিকুল। ২০১৩ সালে মেঝো ভাই হামিদুল ইসলাম ব্যবসার জন্য তাকে ৫ লক্ষ টাকা পুঁজি দেয়। সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে বড় ভাইয়ের প্লটটি কিনে নেয় রফিকুল। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ভাংরি দোকান থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কিনে সেসব ঢালাইয়ের মাধ্যমে চিপস করে ঢাকায় বিক্রি করে। এসব চিপস দিয়েই তৈরী করা হয় প্লান্টিকের জগ, গøাস, বালতিসহ নানান পণ্য। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত রফিকুলের বড় সন্তান সাজ্জাদ ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এব ছোট সন্তান শিফাত ২য় শ্রেণিতে পড়ে।
এখানে কর্মরত শ্রমিক লক্ষণ, মাঈদুল ও আব্দুর রশিদ জানান, হামার মালিক অন্ধ হইলেও খুব ভালো মানুষ। হামার সাথে সমানতালে কাটিং, ঢালাই ও ডাট মেশিনোত কাজ করে। বেতন কখনো বাকী রাখে না। এ কারখানায় ৫ থাকি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে লোকজন কাম করে।
রফিকুল দু:খ করে বলেন, আমার প্রতিবন্ধীতার কারণে কোন ব্যাংক আমাকে সিসি লোন দিতে চায় না। উত্তরা ব্যাংকে অনেক ঘুরেছি, তারা সিসি দিতে রাজি হল না। অথচ এই ব্যবসা ভালভাবে পরিচালনা করতে হলে আমার ৩০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। সীমিত টাকায় ব্যবসা করছি। টাকা পেলে ব্যবসায় আরো উৎপাদন বাড়াতে পারতাম।
এছাড়াও রফিকুল জানান, লালমনিরহাটে কাজের সুবিধার্তে সেখানে সাপ্টিবাড়ী প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুদের সাথে তার একটা মানবিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সময় পেলেই চলে যান লালমনিরহাটে। সেখানে কোন শিক্ষার্থীর খাবার বা বেতনের টাকার সংকট দেখা দিলে নিজেই হাত বাড়িয়ে দেন। কুড়িগ্রাম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানার উপ-ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার পাশে ব্যাংকগুলো সহায়তার হাত বাড়ালে সে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে ভালবাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।