পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত রাঙ্গামাটির দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলাকারীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে। এ ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি নির্লিপ্ত পুলিশ প্রশাসন। সন্ত্রাসী হামলার তিনদিন পরও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। সরকারের হাইকমান্ড থেকে এ ঘটনা তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হলেও পুলিশ এখনও তদন্তই শুরু করেনি। এ ব্যাপারেও গা-ছাড়া ভাব পুলিশের। গত তিনদিন ধরে ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে ‘অনুসন্ধান’ করছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
রোববার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী গোচরা বাজার এলাকায় মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ৬ কেন্দ্রীয় নেতা আহত হন। হামলায় তছনছ হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বহনকারী গাড়িটিও। ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য সরকারি দলকে দায়ী করা হয়। স্থানীয় বিএনপি এ হামলার মদদদাতা হিসেবে ওই এলাকার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদকে অভিযুক্ত করেন।
হামলার সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ির বহরে থাকা বিএনপি নেতারা হামলার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। এসব ভিডিও চিত্রে দেখা যায় গাড়ির বহর ওই এলাকায় যাওয়ার পর লাঠিসোটা ও দেশী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৩০-৩৫ জনের একদল যুবক জয় বাংলা ¯েøাগান দিয়ে বহরে হামলা চালায়। হামলার পর তারা ¯েøাগান দিতে দিতে এলাকা ত্যাগ করে। .. এ সময় সেখানে পুলিশের একটি পিকআপও দেখা যায়। মিছিলের পাশ দিয়ে পুলিশকে বহনকারী পিকআপটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী এবং তারা হাছান মাহমুদের অনুসারী।
একইদিন রাঙ্গুনিয়ায় হাছান মাহমুদ নিজে মাটি কেটে রাস্তা ভরাটের কাজে অংশ নেন। সেই ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন হাছান মাহমুদের অনুসারীরা। তাতে দেখা যায় গাড়ি বহরে যারা হামলা করেছে হামলার পর তাদের অনেকে হাছান মাহমুদের সাথে গিয়ে রাস্তা ভরাটের ফটোসেশনে অংশ নিয়েছে। ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলায় অংশগ্রহণ এবং পরে হাছান মাহমুদের পাশে দাঁড়ানো যুবকদের চিহ্নিত করে ছবি আপলোড করা হয়েছে। এসব ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, হামলায় অংশগ্রহণকারী যে ৩০-৩৫ জন ছিল তাদের সবার নাম ঠিকানা তারা সংগ্রহ করেছেন। এরা সকলেই সরকারি দলের ক্যাডার এবং স্থানীয় এমপির অনুসারী। তবে ড. হাছান মাহমুদ শুরু থেকে এ ঘটনায় তিনি কিংবা তার দলের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করে আসছেন।
এদিকে বিএনপি মহাসচিবের গাড়ি বহরে হামলার তিনদিন পার হলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা এলাকাতেই আছেন। তারা সরকারি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। পুলিশের সাথে তাদের প্রতিদিনই দেখা হচ্ছে। অথচ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। হামলার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশের মহাপরিদর্শকও ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার এ বিষয়ে ঢাকায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে তদন্ত শেষ হলে বোঝা যাবে কেন এ হামলা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ এ বিষয়ে এখনো তদন্তই শুরু করেনি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনার তিনদিন পার হলেও এ ব্যাপারে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। থানায় কোন মামলাও করা হয়নি। মামলা না হওয়ায় তদন্ত শুরু করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। এক্ষেত্রে কোনরকম অবহেলা পুলিশের পক্ষ থেকে থাকবে না বলেও জানান তিনি। ঘটনার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক তাকে নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলা না হওয়ায় তদন্ত শুরু হয়নি। তবে আমরা ঘটনার ব্যাপারে ইনকোয়ারী (অনুসন্ধান) করছি। হামলাকারী কারা তা চিহ্নিত করা যাবে বলেও জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, হামলাকারী কারা তা ইতোমধ্যে মিডিয়ায় চলে এসেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও তাদের সবাইকে চেনে। তবে উপরের নির্দেশনা ছাড়া পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আসামী গ্রেফতার প্রসঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের ভিন্নমত পোষণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, মিডিয়ায় এসেছে পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে পারত। মামলা না হলেও যেহেতু পুলিশের সামনে ঘটনা ঘটেছে পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে পারে। তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায়ও আসামীদের গ্রেফতার করার বিধান রয়েছে। কিন্তু পুলিশ এক্ষেত্রে কোনকিছুই করেনি।
অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আজ বুধবার রাঙ্গুনিয়া থানা অথবা আদালতে এ মামলা দায়ের হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক ও হামলার শিকার মাহবুবুর রহমান শামীম। তিনি বলেন, ঘটনার পর বিএনপির মহাসচিব এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের জন্য তাকে দায়িত্ব দেন। তিনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করেছেন বলেও জানান। আজ এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা থানায় যাব থানায় মামলা নিলে আদালতে যাব। বিএনপির নেতারা জানান, ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও ও ধীরচিত্র থেকে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাদের নাম ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিস্তারিত নাম ঠিকানা দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।