Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলা জট কমাতে প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন

সুপ্রিম কোর্টের প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম



মালেক মল্লিক : সারা দেশের আদালতে প্রায় ৩২ লাখ মামলা বিচারাধীন। উচ্চ ও নিন্ম আদালতসহ বিভিন্নœ আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আইনজীবী জানিযেছেন, যথাসময়ে সাক্ষী হাজির না করা এবং বিচারক ও আদালত সংকটই মামলাজটের প্রধান কারণ। ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ছে এবং মামলার জটও বাড়ছে। এদিকে মামলা জট নিরসণে প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিচার বিভাগীয় সম্মেলেন এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিচারিক সেবা করতে বিচারকদেরকে সময়মতো আদালতে আসতে হবে। রায় দিতে হবে প্রকাশ্য আদালতে। আদালত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যাবলিই হচ্ছে আদালত প্রশাসন। বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মচারীদের দক্ষতাও বৃদ্ধি করতে হবে। আর এর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগের সেবা বৃদ্ধি করতে নানা বিষয় উঠে এসেছে প্রতিবেদন। বিশেষ করে আদালতের স্টাফদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি জন্য প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম। এতে করে বিচারপ্রাথীদের ভোগান্তি কমবে  এবং মামলার জটও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের (সুপ্রিম কোর্ট ও নিন্ম আদালত) আদালত সমূহে অন্তত ৩২ লাখ মামলা বিচার চলছে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা চার লাখের  বেশি। মামলার পাহাড় জমে আছে জেলা জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও। এ সংখ্যা ২৮ লক্ষাধিক। এ নিয়ে দেশে সর্বমোট বিচারাধীন মামলা দাঁড়িয়েছে ৩২ লক্ষেরও বেশি।  বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার জট তুলনামূলক কমতে শুরু করে। আদালতের বিচারপ্রার্থীদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে বিচারকদের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতেও প্রশিক্ষণ মূলক প্রোগ্রাম চালু করেন। এতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিচার কার্যক্রমে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শুরু হয় বিচার বিভাগীয় জাতীয় সম্মেলন হয়। এরপর পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন করার উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি। গত বছর ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথম দিনে সবার জন্য উম্মুক্ত থাকলেও দ্বিতীয় দিবসে শুধু মাত্র বিচারকরা অংশ নেন। এতে প্রধান বিচারপতি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের জবাব চান। আদালতের মামলা জট কমাতে এবং বিচার বিভাগের সেবা বৃদ্ধি করতে তাদের পরামর্শও নেন। বিচারকরা বলেন, আদালত প্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এবং আধুনিক আদালত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য একটি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডাটাবেস সিস্টেম এবং জেলা ওয়ারি ডাটাবেস সিস্টেম প্রয়োজন। যাতে আদালতের কজলিস্ট, রায়সহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে এবং বিচার প্রার্থীরা সহজেই সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। আর বিচার বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ওয়েব সাইট চালু হলে বিচার প্রার্থীরা আদালতে তাদের আরজি, জবাব, আবেদন, অভিযোগসমূহ সহজেই পেশ করতে পারবেন। তবে এজন্য বিদ্যমান আইনে সংশোধন আনতে হবে বলে জানান বিচারকরা।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, বিচারককে অবশ্যই নেতৃত্বের গুণাবলি মেইনটেইন ও প্রেজেন্ট করতে হবে। মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির পরিমাণ বেশি হতে হবে। এজলাস সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। সিভিল আপিল শুনতে হবে বেলা আড়াইটার পর। তিনি বলেন,বেইলবন্ড বিষয়ে মনিটর করতে হবে। ক্রিমিনাল আপিল মামলায় জামিন না দিয়ে একমাসের মধ্যে রায় দিতে হবে। এছাড়া বিচারকদের সততা ও নিষ্ঠা বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, আদালতের জন্য বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীর নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রæত পূরণ করতে হবে শূন্য পদসমূহ। এক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, যথাযথ ও হস্তক্ষেপমুক্ত হতে হবে।  বার্ষিক পরিদর্শন ও বিচারিক সম্মেলন সঠিক সময়ে সম্পন্ন হলে পরবর্তী বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সহজ হবে। আদালতের ডায়েরি, কজলিস্ট ও রেজিস্টার সমূহ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া সকল আদালতে পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও আইটি সরঞ্জাম সরবরাহসহ একজন করে আইটি কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি।  
বিচারপতি এ, এম, এন বসির উল্লাহ বলেন, প্রত্যেক  জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে পুরাতন মামলার তালিকা তৈরি করে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচারকদেরকে সময়মতো আদালতে আসতে হবে। রায় দিতে হবে প্রকাশ্য আদালতে। আর রায়ের তারিখ পরিবর্তন করা উচিত না। তিনি বলেন, আদালত প্রশাসনের দক্ষতা নির্ভর করে জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দিক নির্দেশনা এবং দক্ষতার ওপর। তাই তাদেরকে দক্ষ হতে হবে। উচ্চ আদালতে সময়মতো নথি পাঠাতে হবে এবং প্রত্যেক আদেশে কারণ থাকতে হবে।
পটুয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ আবুল কাশেম মো. মোস্তফা বলেন, জেলা জজকে অবশ্যই নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে। দুষ্টু স্টাফদের দ্রæত বদলির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তাদের কারণে কাজের কোনো সমস্যা না হয়। সেইসঙ্গে আদালতগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ নিশ্চিতের কথাও বলেন তিনি।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস.এম.কুদ্দুস জামান বলেন, আদালতে ক্রয় ও নিয়োগের জন্য বিচারকদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। আর এসব করতে গিয়ে বিচারকরা বিচারিক কাজে মনযোগ দিতে পারে না। তাই নিয়োগ ও ক্রয় সংক্রান্ত কাজের জন্য ভিন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ