রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
এম. এস. এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের পর কণফূলী নদী ও ভান্ডালজুড়ি খালের ভাঙনে ২২ বসতঘর রাস্তা-ঘাট সহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরো প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও মন্দির সহ রাস্তা-ঘাট অব্যহত ভাঙ্গন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গৃহহারা পরিবারের শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ সহ প্রায় দেড়শত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রবল বর্ষণে কর্ণফূলী নদী ও পাহাড়ি ঢলে ভান্ডালজুড়ি খালে পানির শ্রোত আশংকা জনক হারে বেড়ে যায়। ফলে মাত্র কয়েক দিনের বৃষ্টি কাল হয়ে দাড়ায় ৫ শতাধিক পরিবারের শহস্্রাধিক মানুষের। গত ১১ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে গত ১২ জুন থেকে উপজেলার ভান্ডালজুড়ি খালের পাড় ও কর্ণফূলী নদীর তীরে বসবাসকারী প্রায় ২২টি পরিবার, দিন-দুপুরে বৈদ্যুতিক খুঁটি সহ বসতঘর চোখের সামনে নিমিষেই নদী চলে যায়। এ ছাড়া চলমান এ প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার নিন্মাঞ্চলও প্লাবিত হয়ে পড়ে। কয়েক দিনের ভাঙ্গনে বসতঘর হারিয়েছেন, আহসান উল্লাহর বাড়ির মোজাফফর, জলিল বক্স, আবদুর রহমান, জহুরুল হক, বুগিনি বেগম, আছিয়া খাতুন, শামসুল আলম, নাসির উদ্দিন, বড়ুয়া পাড়ার উজ্জল বড়ুয়া, কল্যাণ বড়ুয়া, ধনা বড়ুয়া, বদন বড়ুয়া, বটন বড়ুয়া, নয়ন বড়ুয়াসহ প্রায় ২২ পরিবার।
স্থানীয় জ্যৈষ্টপুরা গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রবল বর্ষণে জ্যৈষ্টপুরা পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রবল বেগে পানির শ্রোত ভান্ডালজুরি খাল দিয়ে কর্ণফুলি নদীতে গিয়ে পড়ে। জ্যৈষ্ঠপুরা মাস্টার পাড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ট্রান্সপারমার সহ খুঁটি পানির তোরে ভেসে গেছে।
জ্যৈষ্টপুরা এলাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রাপ্ত মো. মুজাম্মেল হক বকুল বলেন, শ্রোতের প্রবল বেগে ভান্ডালজুরি-গুদামঘর সড়কের গুচ্ছগ্রাম এলাকার বেইলি ব্রীজ থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে ও উত্তরে খাল পাড় ভাঙ্গছেই। ভাঙ্গনের প্রবল শ্রোতে বেইলি ব্রীজটি যেকোনো সময় ধসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। বেইলি ব্রিজের গার্ডারের নীচের অংশে পানির তোড়ে মাটি সরে গেছে। এ ছাড়া পানির সাথে মিশে গেছে জ্যৈষ্টপুরা ইসলামিয়া মাদ্রাসার পুরাতন কবরস্থান, খালে মিশে গেছে স্থানীয় অসংখ্য চাষীর সেচ প্রকল্পও।
মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদ বলেন, গত প্রায় এক দশ ধরে ভান্ডালজুড়ির খালের ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পাহাড়ী ঢলে খাল পাড়ের সাধারণ মানুষগুলো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। এখানকার ভাঙ্গন রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি, মন্ত্রি ও চেয়ারম্যান বার বার প্রতিশ্রæতি দিলেও কোন কাজ করেনি দীর্ঘ এক দশকেও। ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে স্বর্বস্ব হারাতে হচ্ছে এখানকার মেহেনতী মানুষের। অনেক জায়গায় পাহাড়ী ধস ও ভাঙ্গনে লেবু বাগান, পেয়ারা বাগানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বাগান ও ক্ষেত-খামার মাটির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে এখানকার শত শত কৃষি এবং কৃষকের ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি নিত্যই লেগে আছে।
স্থানীয়রা জানান, ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় এ পরিবারগুলো প্রতিবেশী স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এস অসহায়দের সহায়তায় সকলকে এগিয়ে আসার আহŸান জানানো হয়। এ ছাড়া কর্ণফূলী নদী ও ভান্ডালজুড়ি খালের ভাঙ্গন রোধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থার দাবী জানান এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মোকারম জানান, কর্ণফূলী নদী ও ভান্ডালজুড়ি খালের গত কয়েকদিনের ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এর আগেও মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কবরস্থান সহ অসংখ্য পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে সহায় সম্বলহীন হয়েছে। সম্প্রতি বাড়ি হারাদেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যথাসম্ভব সহযোগীতা করা হবে। এ দিকে জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে গত ২০১৩ সালে প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কর্ণফুলী নদী লাগোয়া ভান্ডালজুরি খালের কিছু অংশে বøক ফেলে ভাঙ্গণ রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু স্থায়ী না হওয়ায় এটিও এবার পাহাড়ী ঢলে উপড়ে ফেলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী ও ভান্ডাজুড়ি খালে ভাঙ্গন রোধে ২৫ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সটিক ভাবে এর ব্যবহার হলে ভাঙ্গন রোধে মোটামুটি কার্যকর ভুমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বোয়ালখালী জোনাল অফিসের উপ-ব্যবস্থাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভান্ডালজুড়ি খালের ভাঙ্গনে ১০ কেভি ট্রান্সফরমারসহ একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিরে ভেসে গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ও খুটি ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার ফলে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্যসা হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। সকলের সহযোগীতা পেলে দ্রæত সেড়ে উঠতে পারবো ইন্শা’য়াল্লাহ।
এদিকে, গত (১৩জুন) মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ টর্ণেডু আকারে তীব্র বেগে কয়েক মিনিটের ঝড়ে গাছপালা, মাদ্রাসা, মসজিদ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বৈদ্যুতিক খুঁটি সহ বিভিন্ন স্থাপনা উপড়ে ফেলে নিয়ে যায়। এসময় স্থানীয় এক মাদ্রাসার বেড়া ও টিনের চালা সহ তুলে নিয়ে প্রায় ৭০ ফুট উপরে দূরে নিয়ে যায়। এছাড়া বড় বড় অনেক গাছ নিচের অংশ ঠিক থাকলেও উপরের প্রায় অংশ ধুমড়ে-মুছড়ে অনেক দূর-দূরান্তে নিয়ে ফেলে দেয়। অনেক মানুষের ঘর-বাড়ী ও দোকান ঘর, কাচারী ঘর উড়িয়ে নিয়ে ধুমড়ে-মুছড়ে ফেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্টান, দোকন ও ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেছেন পৌর মেয়র হাজী আবুল কালাম আবুসহ স্থানীয় কাউন্সিলরগণ। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি মো. আশরাফ উদ্দিন কাজল, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বোয়ালখালী ডিজিএম মো. শাখাওয়াত হোসেনসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। পৌর মেয়র হাজী আবুল কালাম আবু, ইউনও ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা প্রদানের আস্বাস দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।