Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুরে পানিবদ্ধতায় শতাধিক পরিবারের দুর্বিষহ জীবনযাপন

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার বেগুনবাড়ী এলাকার পানি নিষ্কাষনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় প্রায় ১’শটি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ছে। চলাচলের সড়কে পানি থাকায় সড়কে উপর সাঁকো তৈরী করা হয়েছে। সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে আবদ্ধ অবস্থায় পানি জমে বিষাক্ত হয়ে উঠায় চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। কয়েকটি বাড়ির রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্না বন্ধ রয়েছে। হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে ইফতার, সেহরী ও রাতের খাবার খেতে হচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন পানিবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার নিকট ওই এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে আসলেও শ্রীপুর পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরের কাছ থেকে শুধুই আশ্বাস পেয়েছেন। আর এই আশ্বাসেই বছরের পর বছর কাটিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে তারা।
জানা যায়, ২০১৬-১৭অর্থবছরে ওই এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য পৌরসভা থেকে প্রায় ১৯ লাখ টাকার টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় তা ২৫ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। যা কার্যাদেশ পায় চুন্নু এন্ড কোম্পানী। কিন্তু চলতি অর্থবছরের কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও কাজ শুরুই করেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে কাজের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন, সারাদেশে যখন উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে তখন পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমরা পানিবদ্ধতায় পড়ে রয়েছি বছরে পর বছর। কোথাও আবেদন করে ফল পাচ্ছি না।
অপর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক বলেন, আমরা পৌরসভার যাবতীয় ট্যাক্স পরিশোধ করলেও পৌরসভা থেকে আমরা কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়েই রাখা হয়েছে।
শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইয়াসমিন বলেন, আমার বাড়িতে প্রায় ৮টি রুম ভাড়া দেয়া আছে। পানিবদ্ধতার কারণে ৫টি কক্ষের ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন এবং ওই এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবদ্ধতার জন্য দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে পুরো সড়ক জুড়েই একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সাঁকো ব্যবহার করেই এখন চলাচল করতে হচ্ছে। গৃহিনী হামিদা আকতার বলেন, পানিতে চলাচল করায় পায়ের মধ্যে ঘাঁ হয়ে গিয়েছে। এখন অন্যত্র বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। মুদি দোকানী হোসেন মিয়া বলেন, প্রতিদিন আমার দোকানে প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার মুদি মালামাল বিক্রি হতো। কিন্তু পানিবদ্ধতার কারণে এখন তার প্রায় শূণ্যে নেমে এসেছে। বাড়ির মালিক শরিফ আহমেদ বলেন, বাড়ি ভাড়ায় চলে সংসার বাড়ির আশপাশে, ঘরে ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় অন্যত্র গিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছে ভাড়াটিয়ারা। কেওয়া তমির উদ্দিন আলিম মাদ্রাসার ছাত্র আবদুল্লাহ্ বলেন, পানিবদ্ধতার কারণে মাদ্রাসায় যাওয়া আসার সময় কাপড় ভিজে যায়। মাদ্রাসার কাপড় ব্যাগে নিয়ে বাসা থেকে লুঙ্গী পড়ে বের হই। পরে মাদ্রাসায় গিয়ে কাপড় পাল্টাই।
বেগুনবাড়ী এলাকার সিদ্দিক মিয়া বলেন, বেগুনবাড়ী কতটা যে অবহেলিত তা বর্ষার সময় আসলেই বোঝা যায়। ভোটের সময় নানা ধরনের প্রতিশ্রæতি মিললেও পরে প্রতিশ্রæতির বিন্দুমাত্র লক্ষ্য করা যায় না। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার কাছে আবেদন করে কোন ফল না হওয়ায় এই এলাকায় চলাচলের জন্য কয়েকটি নৌকার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
এব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স চুন্নু এন্ড কোম্পানীর স্বত্ত¡াধিকারী ফরিদ হাসান চুন্নু বলেন, ১৯লাখ টাকার দরপত্র হওয়ায় পর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে কাজের পরিধি বৃদ্ধি করায় কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে। সেই সাথে বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্ষা শেষ হলে দ্রæত কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইজ্জত আলী ফকির বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। কার্যাদেশ পাওয়ার পর আমরা একাধিকবার চলতি বর্ষার কথা বিবেচনা করে তাকে কাজ শুরু করার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু, কাজ না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সাময়িক ভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মোল্ল্যা বলেন, উক্ত কাজের দরপত্র হওয়ার পর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজের পরিধি বৃদ্ধি করায় কিছু সময় ব্যয় হয়েছে। তবে ঠিকাদার যদি কাজ শুরু করতে আরো দেরি করে, তাহলে তার কার্যাদেশ বাতিল করে, শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে। শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ