Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঈদকে সামনে রেখে খুলনায় বাড়ছে পুলিশি হয়রানি

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইয়াবা দিয়ে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
খুলনা ব্যুরো : ঈদকে সামনে রেখে খুলনায় পুলিশী হয়রানি বেড়েছে। অপরাধ দমনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের চলমান অভিযানে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্ধ্যার পর থেকে দেহ তল্লাশী, মোটরযান চেকিং ও মোবাইল টীমের মাধ্যমেই হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরাপরাধীরা। দাবিকৃত টাকায় না দেয়ায় প্রতিপক্ষের সাথে যোগসাজসে ব্যবসায়ীকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে। তবে পরবর্তীতে পেন্ডিং মামলায় জড়ানোর ভয়ে প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
কেএমপি’র সূত্রমতে, কেএমপি’র সদ্য সাবেক কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি থাকা অবস্থায় মহানগরীতে শুরু হয়েছিল মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী বিশেষ অভিযান। চলমান এ অভিযানে মাদক দ্রব্যসহ কয়েকজন মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হয়েছে। তবে গ্রেফতার হয়নি দাগী সন্ত্রাসী বা অস্ত্রধারী। উদ্ধার হয়নি অবৈধ অস্ত্র। গত ১৭ জুনের অভিযানে ৯৫পিচ ইয়াবা ও ১২৫গ্রাম গাঁজাসহ পৃথক অভিযানে আটক করা হয় ৪১জনকে; তার মধ্যে ১৩জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বাকীদের ছেড়ে দেয় বা কেএমপি এ্যাক্টে চালান দেয় থানা পুলিশ। এভাবে ১৫ জুনে পৃথকভাবে ৩০জনকে আটকে ৪জন, ১৪ জুনে ৩০জন আটকে ১২জন, ১৩ জুনে ২৯জন আটকে ৯জন, ১২জুনে ৪৪জনকে আটকে ৯জন, ১১ জুনে ২৫জনকে আটকে ১০জন এবং ১০ জুনে ২২জনকে আটকে ৮জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এ এক সপ্তাহে সহ¯্রাধিক পিচ ইয়াবা ৪০০ গ্রাম হেরোইন, ৮২ ফেন্সিডিল ও ৮৭৫ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। এসময়ের মধ্যে সন্দেহভাজন অন্তত ২২১জনকে আটক করা হয়েছে মহানগরী থেকে; আর মামলা দেয়া হয়েছে মাত্র ৬৫জনের বিরুদ্ধে। এ অভিযানে দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে সকালে ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান তার নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে অপরিচিত ৩-৪জন যুবক এসে তার নাম জানতে চায়। তিনি নাম বলার পর তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে চাঁদা দাবি করে। তিনি সেটা দিতে অস্বীকার করলে তার কাছে থাকা ব্যাগ ধরে টানাটানি করতে থাকে ওই যুবকরা। তখনই পুলিশ চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গেই ওই অপরিচিত যুবকরা পুলিশকে বলে ওয়াহিদুজ্জামানের ব্যাগে মাদক আছে। এরপর পুলিশ তার ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ছোট পলিথিন ব্যাগের মধ্যে পাঁচটি ইয়াবা ট্যাবলেট পায়। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে মারধর করে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তবে ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামানের দাবি- তিনি কখনও মাদকের সংস্পর্শে আসেননি। পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামানের কানাডা প্রবাসী বোন মুর্শিদা জামানের সাথে তার স্বামী মনিরুজ্জামান মোল্লার সম্পত্তি নিয়ে দ্ব›দ্ব রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্সও হয়েছে। বিদেশে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সেই বিরোধের ঢেউ এসে পড়েছে খুলনায় বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে। মনিরুজ্জামানের আত্মীয়-স্বজন মুর্শিদা জামানের নামের পৈতৃক সম্পত্তি নিজ নামে করে নিতে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিচ্ছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মনিরুজ্জামানের ভাগ্নে রিয়াজ ও বড় ভাই হারুন। ওই বিরোধের জেরধরে রাজশাহীর আদালত থেকে ভুয়া ওয়ারেন্ট বানিয়ে অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করানো হয়। রিয়াজের স্ত্রী পপসিকে কেন্দ্র করে হয়রানিমুলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে আদালতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলাও করে। এ নিয়ে মুর্শিদা জামানের দুই ভাই ওয়াহিদুজ্জামান ও আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে। বাড়ি থেকে বের হলে বিভিন্ন ধরনের লোক দিয়ে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে। এঘটনায় গত ১৭জুন খুলনা সদর থানায় হয়রানি থেকে রেহাই পেতে সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান। আর গত ১০জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী। ঘটনাটি ইতিমধ্যে খুলনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমার বোন ভগ্নিপতির মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন সাবেক ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামান আমার বোনের সম্পত্তি দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অর্থের বিনিময়ে পুলিশকে দিয়ে ভুয়া ওয়ারেন্ট, বিভিন্ন মামলা ও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ নিয়ে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ওয়াহিদুজ্জামানের ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া গেছে। আর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
গত ৭ জুন নবাগত কেএমপি কমিশনারের সাথে খুলনার সাংবাদিকদের মতবিনিময়কালে খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য সচিব ও দৈনিক দেশসংযোগ সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগ নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে পুলিশী হয়রানি রোধকল্পে দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন। তিনি বলেন, নগরীর কয়েকটি মোড়ে সন্ধ্যার পরে তল্লাশীর নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নগরীর ইকবালনগর মোড়ে সাধারণ পথচারীকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করছে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে পুলিশী ঝামেলায় না জড়াতে এসব ঘটনা প্রকাশও করেন না ভুক্তভোগীরা।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, “কোনভাবে নিরাপরাধী-সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা যাবে। কারো (কর্মকর্তার) বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ পেলেই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি দ্বারা তদন্ত করে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। হয়রানির শিকার যে কেউ সরাসরি আমার সাথে দেখা করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে পারেন।”
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিন উল আহসান বলেন, কোথাও কোন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে জরুরিভিত্তিতে পুলিশকে জানানো এবং হেল্প লাইন ৯৯৯ নম্বরটি সকলে জানা থাকা দরকার। এছাড়া কোন ধরণের হয়রানি হলে উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের জানাতে আহŸান জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ