রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : নীলফামারীর সৈয়দপুরের নারী শ্রমিকের তৈরী কারচুপির পোশাক যাচ্ছে ঢাকাসহ সারাদেশের ঈদবাজারে। ঈদুল ফিতরে কারচুপির শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস, ওড়নার ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর রাজধানী ঢাকার ঈদ বাজারে চাহিদা মেটাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রায় ৩০ হাজার নারী চালিয়ে যাচ্ছেন কারচুপির এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। রোজার ছুটি চলছে স্কুল-কলেজে, এ সুযোগে বাড়তি আয়ের আশায় এ উপজেলার মেয়ে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকে পড়ছে কারচুপির কাজে।
সরেজমিনে সৈয়দপুর শহরের উত্তরা আবাসন ঘুরে দেখা যায়, শত শত নারী কাপড়ে কারচুপি বসাচ্ছেন। বিশেষ ফ্রেম পেতে তাতে টান টান করে কাপড় বসিয়ে আপনমনে কারচুপি বসিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সেখানে কথা হয় উত্তরা আবাসন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কোমলের সঙ্গে। সে বলে, ‘রোজা উপলক্ষে স্কুল ছুটি। তাই বোনের সঙ্গে কারচুপির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। এতে বাড়তি কিছু আয় হবে।’ কোমলের বাবা বেঁচে নেই। তার মা বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। ঈদের কারচুপির কাজ করে ১০ হাজার টাকা আয় করবে সে। যা দিয়ে মা-ভাইবোনের জন্য কিনবে ঈদ উপহার।
আবাসন এলাকায় কথা হয় কারচুপি শিল্পী পারভিন আক্তারের (৩৫) সঙ্গে। হোটেলশ্রমিক আমিনুর রহমানের স্ত্রী তিনি। কাজ করছিলেন মেয়ে বৃষ্টি (১৭) ও ঝর্ণাকে (১৩) সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সারা বছরই কারচুপির কাজ চলে। তবে ঈদ এলে এর চাপ বেড়ে যায়। রোজার মাস। তাই স্কুল-কলেজ বন্ধ। এ সুযোগে মেয়েদেরও সঙ্গে নিয়েছি। কারচুপির কাজ করে তারাও বাড়তি আয় করবে।’
সৈয়দপুর শহরের কাজিহাট, মুন্সিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, ইসলামবাগ, গোলাহাট, রসুলপুর, বার্মাসেল প্রভৃতি মহল্লার বাড়ি বাড়িতে চলছে কারচুপি পোশাক তৈরির কাজ। এ ছাড়া উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ি, বাঙ্গালিপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতা মধুপুর ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামেও নারী শ্রমিকেরা প্রচুর কাজ করছেন।
কারচুপি শিল্পী রোশনি বলেন, এ কাজে সৈয়দপুরের শ্রমিকেরা দক্ষ। তাই ঢাকা থেকে প্রচুর অর্ডার মেলে। প্রতি মাসে হাজার হাজার শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসের অর্ডার আসে। আর ঈদ এলে তো কাজের ফুরসতই থাকে না। চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। তিনি জানান, মহাজনেরা ঢাকা থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে কাপড়, উপকরণ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। তাঁরা কেবল কারচুপির কারুকাজ করে দেন।
মহাজন আরমান আলী, মো. তারেক ঢাকা থেকে ই-মেইলে অর্ডার নিয়ে পরে নকশা (ডিজাইন) বুঝিয়ে দেন নারী শ্রমিকদের। ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আসেন জর্জেট বা শিফন কাপড়ের থান, বিভিন্ন রকম চুমকি, রেশমি সুতা, গাম ইত্যাদি। কাপড়ে চুমকি করতে এসব উপকরণের দরকার হয়। মহাজনের অর্ডার পেলেই শ্রমিকেরা রাত-দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারচুপির কাজে। তিনি বলেন, কাপড়ে কারচুপি বসিয়ে একজন নারী শ্রমিক দিনে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করেন।
মহাজন আরমান আলী বলেন, ‘কারচুপির উপকরণ চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর ভারত থেকে আনা হয় কাপড়। চাহিদা বাড়লে এসব পণ্যের দামও বাড়ে। তবু ঢাকার অর্ডার বলে কথা। ঈদ বাজারকে সামাল দিতে কম লাভ মিললেও আমাদের শ্রমিকেরা কারচুপির কাজে ব্যস্ত থাকে। আমরা সময়মতো ঢাকায় তা সরবরাহ করি।’
সৈয়দপুর কারচুপি সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকার বড় বড় শপিং মল ও মার্কেটে সৈয়দপুরের কারচুপির পোশাক বিক্রি হয়। বিয়ে, ঈদে এ পোশাকের অনেক চাহিদা। তিনি আরও জানান, এ সময় সৈয়দপুরের প্রায় ৩০ হাজার নারী শ্রমিক কারচুপির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও এখন ব্যস্ত কারচুপির কাজ নিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।