Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়ায় ৪১৬ চালমিল মালিক কালো তালিকায়

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : সময় মত সরকারকে নির্ধারিত মূল্যে চাল না দেয়ায় বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়ায় খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ৪১৬টি চালকলের মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব চালকলের মালিক আগামী চার মৌসুম অর্থ্যাৎ দুই বছর সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের কোন ধরনের চুক্তি করতে পারবে না। চলতি মৌসুমে বোরো চাল সংগ্রহে চাল সরবরাহে চুক্তি না করায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান জানান, ‘কালো তালিকাভুক্ত হওয়া চাল কল মালিকদের অচিরেই নোটিশ পাঠানো হবে। তারা ইতিমধ্যে কালো তালিকায় পড়ে গেছে। এজন্য আগামী দুই বছর ৪১৬টি চালকলের মালিক সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের জন্য কোন চুক্তি করতে পারবে না।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র বলছে, খাদ্য বিভাগ গত ১ মে থেকে জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। কুষ্টিয়ায় ১৭ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগ চুক্তি করতে জেলার তালিকাভুক্ত ৬০৯ চালকল মালিককের মধ্যে রেশিও অনুসারে বরাদ্দ দেয়। চুক্তির শেষ দিন পর্যন্ত চুক্তি করে মাত্র ১৯৩টি চালকল। সদর, মিরপুর ও দৌলতপুরের চালকর মালিকরা চুক্তি করলেও বাকি তিন উপজেলা ভেড়ামারা, খোকসা ও কুমারখালীর কোন মিল মালিক লোকসানের ভয়ে চুক্তি করেননি।
এর মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম সদর উপজেলায় ৩৭৫ চালকলের মধ্যে মাত্র ৮৪ জন চুক্তি করে। এখানে ১৩ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চুক্তি করে মাত্র ৪ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন। কুমারখালিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬৪ মেট্রিক টন। ৩১টি চালকলের কোন মালিক চুক্তি করেননি। খোকসার ১৭০ মেট্রিক টনের জন্য ১২টি চালকল মালিক কোন চুক্তিতে আসেনি। ভেড়ামারায় ১৮১ মেট্রিক টনের বিপরীতে ১৩ চালকল মালিকের কেউ চুক্তি করেনি। মিরপুরের ২ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টনের জন্য ১৩৮ মিলের মধ্যে ১ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন চাল দিতে ৮৫টি চালকল চুক্তি করেছে। আর দৌলতপুরের ৪০ চালকল মালিকের ৮৬৮ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে মাত্র ২৪ জন ৬৩৯ মেট্রিক টন চাল দিতে রাজি হয়।
খাদ্য বিভাগ বলছে, চুক্তি করা চালকল মালিকের মধ্যে সদরে মাত্র দুজন মালিক মাত্র ১৩৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছেন। বাকি দুই উপজেলার কেউ চাল দেয়নি। জেলায় মোট আটটি গুদাম রয়েছে। সেখানে কর্মকর্তা ও শ্রমকেরা চাল নিতে প্রতিদিন বসে থাকে। তারপরও কেউ যায় না। গত দেড় মাস ধরে তারা অলস সময় কাটাচ্ছে। সেখানকার ব্যস্ততা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
জেলায় আটটি গুদামে মোট চাল ধারণ ক্ষমতা ১৭ হাজার ৪০০ টন। এরমধ্যে বর্তমানে এখানে মাত্র ৩ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন চাল আছে। চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহ না হলে গুদামগুলো ফাকা থাকবে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র বলছে, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে গত ১ জুন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি আসে। তাতে উল্লেখ করা হয় যারা চলতি বোরো মৌসুমে চুক্তি করেননি তাদের আগামী ২০১৭-১৮ আমন মৌসুম থেকে চার মৌসুমের অর্থ্যাৎ দুই বছর চুক্তির বাইরে থাকবে। একইভাবে চুক্তি করার পরও যারা চাল সরবরাহ করবে না তাদের আগামী দুই মৌসুম এক বছর চুক্তির বাইরে রাখা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাজানগর এলাকার কালো তালিকার দুটি বড় মিলের মালিক বলেন, বর্তমান বাজারে মোটা চালের দাম ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। সরকার নির্ধারিত দাম ৩৪ টাকা। প্রায় ১০ টাকা লোকসানে এ মৌসুমে সরকারকে চাল দিতে হবে। বেশি লোকসানে কেউ চাল দিতে পারেন না। যাঁরা চুক্তি করেছেন, তাঁরা অনেকটা চাপে পড়েই করেছেন।
চুক্তি করা বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘ঈদের পর আমি চাল দিবো। বাকিরা কবে দেবে তা জানি না। যারা চুক্তির বাইরে তাদের ব্যাপারেও কিছু বলতে পারবো না। তবে লাখ লাখ টাকা লোকসান করে চাল দিলে মালিকেরা ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবে। এতে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে যাবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ