হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
তৈমূর আলম খন্দকার: গত ২৫ মে ২০১৭ দিবাগত রাত্রে সুপ্রীমকোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে বিতর্কিত মূর্তি নামান্তরে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়। বিচার বিভাগ থেকে এ মর্মে কোন মন্তব্য না পাওয়া গেলেও সরকার, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দায়িত্বশীল অনেকেই বলেছে, সুপ্রীমকোর্টের নিজস্ব সিদ্ধান্তেই এ অপসারণ। অন্যদিকে কোন কারণে মূর্তি স্থাপন হলো এবং কোন কারণে তা অপসারণ হলো এ মর্মে সুপ্রীমকোর্টের বিবৃতি জানতে চেয়ে মিটিং করেছে সরকারের শরীক দল ওয়াকার্স পার্টি। বাম দল সহ সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব মূর্তি অপসারণের বিরুদ্ধে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, এমন কি কারাবন্দী হয়েছে। বামেরা সংখ্যায় কম হলেও প্রতিবাদের ভাষা খুবই তীক্ষè। দেশের সিনিয়র আইনজীবী যিনি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ভাবেন, বামদের অভিভাবকও বটে, সেই ড. কামাল হোসেন কিন্তু কোন পক্ষেই কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আইনজীবীদের একটি সম্মেলন হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সংবিধান প্রণেতা ধর্ম নিরপেক্ষতাকে যিনি স্বাধীনতার চেতনা মনে করেন তিনিও এ মর্মে কোন কথা বলতে চাননি। কারণ কী হতে পারে? তিনি নিশ্চয় মনে করেছেন, বিষয়টি বিতর্কিত। তাই তিনি এ মুহুর্তে মন্তব্য করেননি। ২৭ মে ২০১৭ গভীর রাত্রে সুপ্রীমকোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে মূর্তিটি পুনঃ স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়েও চলছে বির্তক।
ভাস্কর নিজে বলেছেন, মূর্তি/ভাস্কর্য অপসারণ করায় বাঙালি সংস্কৃতির পরাজয় হয়েছে। ইলিশ মাছ আর পান্থা ভাত যেমন বাঙালি সংস্কৃতি নয় তেমনি মূর্তির সাথেও বাঙালি সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই। ‘ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা’ এই বাঙালির ঐতিহ্য নষ্ট করেছে বারবার বর্গীরা এ দেশকে হানা দিয়ে। সর্বশেষ লুট করেছে হানাদার পাকিস্তান ও পাকিস্তানের ২২ পরিবার। যা বর্তমানে বাংলাদেশের ২২ হাজার লুটেরা পরিবার লুটে খাচ্ছে। এ লুটেরারা দেশকে লুট করে গরিবকে আরো গরিব এবং নিজেদের ধনী থেকে আরো ধনী করার পথ খুঁজে নিয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ডাকাতি করছে কলমের সাহায্যে। তাই আজ বাঙালিকে নিয়ে এসেছে পান্তা ভাতের সংস্কৃতিতে। মূর্তি বাঙালিদের সংস্কৃতি হতে পারে না। কারণ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত। তবে তারা অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মভীরু। এই ধর্মভীরুতাকেই নাস্তিকরা ধর্মান্ধ বানিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে একপেশে করে দিয়েছে। তাদের জ্ঞান বাঙালি জাতি-স্বত্ত¡া সম্পর্কে আরো গভীর হওয়া দরকার। অহেতুক সংজ্ঞা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে নাস্তিকেরা যারা স্বাধীনতার চেতনা ও ধর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
বিচার বিভাগসহ সকলেরই দায়িত্ব বিচার বিভাগকে বির্তকের ঊর্ধ্বে রাখা। মূর্তিটি অপসারণ নয় বরং স্থানান্তরের মাধ্যমে কি বির্তকের অবসান হয়েছে? বরং বিতর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। বামদের ধারণানুযায়ী যদি হেফাজতকে খুশী রাখার জন্য এ মূর্তি সরানো হয়ে থাকে তবে একদিকে বামরা তো বিক্ষুব্ধ, অন্যদিকে হেফাজত ও ধর্মভিত্তিক দলগুলি আরো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। তাদের সাথে সরকার প্রতারণা করছে বলে হেফাজত দাবি করেছে। এদিকে সরকারি ঘরনার বাম দল (মেনন পন্থী) মূর্তি কী কারণে সরানো হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের নিকট ব্যাখ্যা চেয়ে বিবৃতি দাবি করেছে। সুপ্রীমকোর্টের যিনি অভিভাবক তিনি হলেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(২) মোতাবেক বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগ নিয়ে আজ পর্যন্ত (মূর্তির ঘটনা ছাড়া) এমন কোন বির্তকের অবতারণা হয়নি, যার জন্য কোন দল বা গোষ্ঠি দেশের প্রধান বিচারপতির নিকট কৈফিয়ৎ তলব করেছে। এ দৃশ্য অবতারণার জন্য বিচার বিভাগ তার দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।
সুপ্রীমকোর্ট সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। যাকে বির্তকের ঊর্ধ্বে রাখার প্রধান দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির উপর বর্তায়। সেখানে প্রশ্ন অবশ্যই আসে, কেন এই মূর্তিটি বসিয়ে ‘বিতর্কের’ বন্যায় সুপ্রীমকোর্টের নিরপেক্ষতাকে প্লাবিত করা হচ্ছে? উপমহাদেশের উচ্চ আদালতে যেখানে কোথাও এ ধরনের মূর্তি নেই সেখানে এটা বসানোর যৌক্তিকতা কী ছিল, তা আজ জনমনে বড় প্রশ্ন।
তথাকথিত প্রগতিশীল কতিপয় লেখক ইতোমধ্যে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে আলাদা করে দেখছেন। অথচ, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত অভিধান (প্রথম প্রকাশ সেপ্টেম্বর ১৯৯২) (পৃষ্ঠা ৪৩৬) ভাস্কর্য বলতে ‘প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের কাজ’ বলা হয়েছে। ‘ভাস্কর’ বলতে ‘প্রস্তারাদি থেকে যে মূর্তি ইত্যাদি নির্মাণ করে’ শব্দার্থ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞান কোষ বাংলা পিডিয়াতে ‘ভাস্কর্য’ সম্পর্কে নিন্মবর্ণিত মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে:
‘আদি প্রস্তর ভাস্কর্য এখন পর্যন্ত বাংলায় আবিষ্কৃত এবং খ্রিস্টীয় প্রথম তিন শতকের নির্মিত প্রস্তর ভাস্কর্য অত্যন্ত কম। সাধারণ রীতির এই ভাস্কর্যগুলি উত্তর ভারতের শিল্প জগতে কৃষাণদের উন্নত ধারার অন্তর্গত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এই শিল্পের কেন্দ্র ছিল মথুরা। এখানে সে সময়ে ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ ও জৈন- মূলত এই প্রধান তিনটি ধর্মের অনুসারীরা পূজার নিমিত্তে মূর্তি বানাতে গিয়ে এর সূচনা করেছিল। মথুরা রীতির মূর্তিগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মূর্তির সংখ্যা ও দৃঢ়তার প্রতি বাড়তি গুরুত্ব। এ যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যটি বিহারের ভাগলপুরের শাহকুন্ড থেকে আবিষ্কৃত নরসিংহ মূর্তি। বাংলার প্রথম দিককার গুপ্ত ভাস্কর্যটি সম্ভবত রাজশাহীর মাকমইল বাগমারা থেকে প্রাপ্ত ধূসর বেলে পাথরের উপর খোদিত বিষ্ণুমূর্তি। পাহাড়পুর ভাস্কর্য বাংলার গুপ্ত ভাস্কর্যগুলির বেশিরভাগই প্রতীকী এবং এগুলির আকৃতি নির্ধারিত হয়েছে মধ্যদেশ বা মধ্য ভারতের পুরোহিত কর্তৃক বর্ণিত দেবতাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণে। পাথর ও ব্রোঞ্জ নির্বিশেষে বারো শতকের মূর্তিগুলি পূর্ব ভারতীয় ভাস্কর্যের শেষ ও চূড়ান্ত পর্যায়।’
‘মূর্তি’ একটি বিশেষ জনগোষ্ঠির ধর্মীয় প্রতীক যারা মূর্তিপূজক। কোন ধর্মের প্রতি অনীহা বা কটাক্ষ করা যাবে না এটাও ইসলামের বিধান। এদেশের ৯২% মানুষ মুসলিম। তবে মুসলমান নামধারী অনেক নাস্তিক রয়েছে যারা মূর্তিকে সমর্থন করে। যদিও তাদের সংখ্যা খালি চোখে দেখা যাবে না বরং টেলিস্কোপ প্রয়োজন হবে। মুসলমানদের মসজিদের সামনে যেমন কীর্তন গাওয়া যায় না, একই কারণে হিন্দুদের মন্দিরের সামনে গরু জবাই চলবে না, ঠিক অনুরূপ সকল ধর্মের জন্য উন্মুক্ত কোন জাতীয় প্রতিষ্ঠানে কোন বিশেষ ধর্মের প্রতীক স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নষ্ট করা যাবে না। ব্যতিক্রম হলেই সেখানে বিতর্ক হবে। আর নিরপেক্ষতার স্বার্থে বিচার বিভাগকে বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা সমীচীন নয়। পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, মিটিং, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া প্রভৃতি হজম করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও আওতাধীন, প্রধান বিচারপতির নয়। কারণ নিরপেক্ষতার তিনি শেষ সোপান। বিবেক জাগ্রত হোক, বিচারালয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকুক।
সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা বা নিজেকে জাহির করার জন্য উদ্ভট কথা বলা কিছু মানুষের চিরাচারিত অভ্যাস। যা কেউ করে নাম ফুটানোর জন্য এবং কেউ করে না বুঝে। তবে সে বক্তব্য দিয়ে এটাই মনে করে যে পারিপার্শিক অবস্থা যাই হোক না কেন তার বক্তব্যই শিরোধার্য, হোক তা নৈতিকতা বা গণমানুষের চিন্তা-চেতনার বিরোধী। স্বীকৃত মতে, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ যেখানে ধর্মভীরুতা আছে, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা নেই। বাংলাদেশের ৯২% মানুষ মুসলমান হলেও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সংবিধানের ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১২ মোতাবেক ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য ৪টি নির্দেশনা রয়েছে যা নিন্মরূপ:
(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হবে।
সকল ধর্মের প্রতি সমান গুরুত্ব প্রদানের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা থাকার পরও একদল লোক দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধর্মভীরুদের সাম্প্রদায়িক বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। যে বকধার্মিকরা এ দেশের হিন্দু বা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠিকে সংখ্যালঘু বানিয়েছে তারাই বাংলাদেশের ধর্মভীরু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক বানিয়েছে। সংবিধানে সংখ্যালঘু বলতে কোন ভাষা, পরিভাষা বা অনুচ্ছেদ বা কোন প্রকার আকার ইঙ্গিত না থাকলেও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির জন্য ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে সংখ্যালঘু আখ্যায়িত করে ফয়দা লুটতে চায় অনেকে; এতে যাদের সংখ্যালঘু হিসাবে চিহ্নিত করা হয় তাদেরকেই কৌশলে হেয় করে জাতিগত বিভেদটা আরো প্রকট করা হচ্ছে। শুধুমাত্র অশ্লীল ও বেলাল্লাপূর্ণ জীবন যাপনকে বৈধতা দেয়ার জন্যই নাস্তিকেরা ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা নাস্তিক; প্রগতি ও সংস্কৃতির নামে উদ্ভট কথা আবিষ্কারের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সমাজে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এ নাস্তিকেরা ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধাচারণকে একটি পন্থা হিসাবে বেছে নিয়েছে। তাদের কথায় কবিতা, প্রবন্ধে, চেতনায় শুধু মাত্র ইসলাম ও আল্লাহবিরোধী মনোভাব। এই নাস্তিকেরা ‘রূপবান’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সমকামিতাকে উৎসাহিত করেছে, তারা উচ্ছৃংখলতাকে উৎসাহিত করে সমাজে বিপর্যয় ডেকে আনছে।
যে যার ধর্ম পালন করবে; অন্য ধর্মের অনুসারীরা বিরোধিতা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না এটাই অসাম্প্রদায়িকতা। নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করার জন্য নিজের ধর্ম-কর্ম ছেড়ে দেয়ার কোন কারণ নেই। ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ যদি ভিন্ন ধর্মের কারো অধিকার হরণ করে বা নির্যাতন নিপীড়ন করে সেটাই সাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম যেন নির্যাতন, শোষণ ও অধিকার বঞ্চিত করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত না হয়।
ইসলাম ধর্মকে আঘাত করা নাস্তিকদের একটি ফ্যাশন। নিজেদের প্রগতিশীল ও কোলকাতা মনস্ক বুদ্ধিজীবিদের আনুকূল্য পাওয়ার জন্যই এটা তারা করে। ইসলাম বিরোধিতা অতিমাত্রায় প্রকাশ করতে পারলে রবীন্দ্রভারতী বা অন্য কোথা থেকে খেতাব বা সম্মাননা পাওয়া তাদের জন্য অনেক সহজতর হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে যে যুদ্ধ হওয়া উচিৎ ছিল শোষণ ও শোষকের বিরুদ্ধে, যে বিরোধিতা হওয়া উচিৎ ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, তা না করে নাস্তিকেরা যুদ্ধ শুরু করেছে ধর্মের বিরুদ্ধে।
পৃথিবীর সেন্ট পারসেন্ট মানুষ মনে করে যে, সৃষ্টিকর্তা আছেন যার নিকট জবাবদিহিতা রয়েছে এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। রাশিয়ার আলোচিত লেখক আলেকজেন্ডার সোলঝেনিৎসিন ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করার সময় ধর্ম ও বিশ্বাস সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে, “For me faith is the foundation and support of one’s life.” মৃত্যুর জন্য তিনি ভীত কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন যে, ‘মৃত্যুর জন্য আমি ভীত নই। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা মাত্র ২৭ বছর বয়সে মারা যান। ওই সময় মৃত্যু আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে। আমার সব সময় আশঙ্কা হয়, আমার লেখার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই আমার মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু ৩০-৪০ বছরের মধ্যেই মৃত্যু সম্পর্কে শান্ত স্থির ভাব আমার মাঝে চলে আসে। আমি মনে করি, এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাই শেষ নয়।’ সোলঝেনিৎসিন এর শেষ বক্তব্য ‘এটা শেষ নয়’ এ কথাটি খুবই অর্থবহ। এতে প্রমাণ হয় যে, আরেকটি জগৎ রয়েছে যেখানে সৃষ্টিকর্তার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন গবেষক, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী মুসলমান না হয়েও পরকালের অস্থিত্ব স্বীকার করেছেন। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা University of North Caraline-এ গত ৫ নভেম্বর ২০০৮ নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তৃতা করার সময় নানীর মৃত্যুর সংবাদ শোনা মাত্র তিনি বলে উঠেন “SHE IS GONE HOME” অর্থাৎ তিনি (ওবামার নানী) নিজের দেশ বা বাড়িতে চলে গেছেন। তার এ বক্তব্যও পরজগতকে স্বীকৃতি দেয়। পন্ডিত জহরলাল নেহেরু, রবার্ট ব্রিকো, জন উইলিয়াম ড্রেপার ও হামবোন্ড প্রমুখ মনীষী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইসলাম ধর্মের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেছেন, জন্ম থেকেই আধুনিক বিজ্ঞান ইসলামের নিকট ঋণী (সূত্র: সৈয়দ আশ্রাফ আলী লিখিত আর্টিকেল যা গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত) জজ বানার্ডশ বলেছেন, ‘ইসলামই সকল যুগের সকল মানুষের ধর্ম।’ অমুসলিম অনেক মনীষী ইসলাম সম্পর্কে আরো বিজ্ঞানভিত্তিক বক্তব্য রেখেছেন যা খন্ড খন্ড বই আকারে প্রকাশ করেও সমাপ্ত করা যাবে না। অথচ মুসলমান নামধারী একশ্রেণী সুবিধাবাদী নিজেদের অতি প্রগতিশীল বানাতে যেয়ে ইসলামের ত্রæটি খুঁজে অবান্তর ও অবাস্তব কথা অহরহ বলে যাচ্ছে। সুলতানা কামালের বরাত দিয়ে বক্তব্য এসেছে যে, ‘সুপ্রীমকোর্ট মূর্তি না রাখতে দিলে মসজিদও রাখা যাবে না।’ কাকে খুশী করার জন্য এই নাস্তিক একথা বলেছেন, তা বুঝি না। তবে এর পিছনে যে একটা বড় স্বার্থ রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের কথিত অসাম্প্রদায়িক সমাজের নিকট অনেক বড় মাপের কবি। অথচ পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পঞ্চমূখী প্রশংসা করে সুফিয়া কামালের লিখিত অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সেই সুফিয়া কামাল ও তার উত্তরসুরীরাই এখন অসাম্প্রদায়িকতার রক্ষাকর্তা। কথায় বলে, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর। এ জাতীয় ভয়ঙ্কর লোকেরাই নিজেদের সাধু প্রমাণ করতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বারবার জাতিগত বিভেদের উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এখন রয়েছে দো-টানায়; শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায়।
দেশের ৯২% মানুষের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্ম ও এর অনুশাসনে বিরোধিতা করার সীমানা কতটুকু সরকার নাস্তিকদের উজাড় করে দিয়েছে তাও এখন জনমনে একটি কঠিন প্রশ্ন। বাম বা নাস্তিকেরা যতই ধর্মবিরোধী হোক না কেন, তা PUBLICLY সরকারের মদদে করছে যা মেনে নেয়া যায় না। লেলিন, স্টালিন, মাওসেতুং, চে’র নীতি-আদর্শ বাম নেতা ও মন্ত্রীরা ঘটা করে প্রচার করে যাবে, অথচ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নীতি আদর্শ নিয়ে কুটক্তি করবে, এ অবস্থা সরকার সৃষ্টি করে দিয়েছে।
কথায় বলে, লেবু বেশি চিপলে রস বের হয় না, বরং তেতো হয়ে যায়। গল্পে রয়েছে, বাঘ এলো, বাঘ এলো, বলে প্রতিদিনের চিৎকারে একদিন কিন্তু বাঘ ঠিকই লোকালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনার নামান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার রং চড়িয়ে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার উসকানি সরকারি মদদে নাস্তিক ও প্রো-নাস্তিকেরা দিয়ে যাচ্ছে তা বুমেরাং হতে পারে।
লেখক : কলামিস্ট ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।