Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য সহায়তায় চরম অনিয়ম

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম.এ.ওয়াহিদ রুলু, কমলগঞ্জ থেকে ঃ কমলগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে চা-বাগানে খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী বিতরণে চরম নি¤œমান ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের ধারাবাহিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে নি¤œমানের এসব সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গত শনিবার বিকালে মাধবপুর চা বাগানে ১ হাজার ১৯৭টি পরিবার ও কুরমা চা বাগানে ৪ শত ৯১ পরিবারের মধ্যে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার সমপরিমাণের খাদ্য ও পণ্য সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাবেক চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ এমপি। এর মধ্যে রয়েছে ৪৫ কেজি করে চাল, ৯ কেজি ডাল, ১৫ কেজি আলু, ১৫ কেজি আটা, ৬ লিটার সোয়াবিন তেল, ৬টা সাবান, ১টা শাড়ী ও ১টা করে লুঙ্গী। খাদ্য সামগ্রী বিতরণকালে চা শ্রমিকদের অভিযোগে সত্যতা পেয়ে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ এমপি নি¤œমানের খাদ্য সামগ্রী থাকায় বিতরণ বন্ধ রাখেন। চা শ্রমিকরা বলেন, অত্যন্ত নি¤œমানের চাল, আটা, আলু বিতরণ করা হয়। যেগুলো খাবার উপযোগী নয়। কুরমা চা বাগানের মধ্য লাইনের মতি কানু বলেন, পঁচা আলু, খাবার অনুপযোগী চাল, ডাল খেয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কৃষ্ণ মোহন তেলি ও ইন্দ্র ভ‚মিজ বলেন, চা শ্রমিকদের এতই নি¤œমানের খাবার দেয়া হচ্ছে, এগুলো খেয়ে অসুস্থ হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। লুঙ্গি ও শাড়ীর মান ভাষায় প্রকাশ করার নয় বলে তারা দাবি করেন। চা বাগানের অবস্থাশালী ইউপি সদস্য ও সদস্যাও খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। এছাড়া কুরমা বাগানের কুনিলাল রজক এর সরকারি চাকুরীজীবী দুই ছেলে থাকার পরও খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। মিজান আলীর দুই ভাই বিদেশে ও পাকা ঘর, বিত্তবান চাকুরীজীবি বালক দাস পাইনকার পরিবার, ছেলে বিদেশে ভাগমনিয়ার পরিবার, ২০ কেয়ার জমির রনজিত প্রজাপতি, ব্যবসায়ী ও পাকা ঘরের মালিক গোপাল তেলি এসব সহায়তা পেলেও অসহায় দরিদ্র পরিবার সদস্যরা খাদ্য সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন। বিধানে না থাকলেও দু’বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ইকবাল মিয়া, রহিম মিয়া, মনফর আলী, কমলা ক‚র্মী, দীনেশ কানু, জয়নারায়ন লোহার খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন।
কুরমা চা বাগানের সমাজকর্মী গীতা কানু বলেন, খুবই নি¤œমানের এসব খাবার শুধু চা শ্রমিকদের ভাগ্যেই জুটে! এমপি সাহেব নি¤œমানের দেখে বন্ধ রাখার পরদিন আবার সেগুলো কৌশলে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবার সদস্যদের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে ব্যাপক অনিয়ম ঘটেছে। তাছাড়া পাঁচ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে মাথাপিছু তিন হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রীও হবে বলে মনে হয় না। কমলগঞ্জ পৌর মেয়র জুয়েল আহমদ বলেন, চা শ্রমিকদের অভিযোগ পেয়ে এমপি সাহেব প্যাকেট খুলে নি¤œমানের দেখতে পেয়ে বিতরণ বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন। পরে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। অভিযোগ বিষয়ে জুড়ির ঠিকাদার মেসার্স ঘোষ অটো রাইচ মিলের প্রোপাইটার নরেন্দ্র মোহন চঞ্চল বলেন, আসলে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধানের চাল থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে এমপি সাহেব বিতরণ বন্ধ রাখলেও রবিবার ইউএনও সাহেব দেখার পর সেগুলো পুনরায় বিতরণ করা হয়েছে। তবে বিতরণকৃত খাদ্য সামগ্রী সহ পন্য সামগ্রী নি¤œমানের নয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, খাদ্য সামগ্রী পরীক্ষা করে ও কিছু চাল পরিবর্তন করে রবিবার চা শ্রমিকদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তবে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ