Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দেশীয় আইসিটি পণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতির দাবি

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বা সংযোজনকৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। সেইসঙ্গে তারা দীর্ঘমেয়াদে ট্যাক্স হলিডে চেয়েছেন। তাদের মতে, ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে আমদানি পণ্যের সঙ্গে শুরুতেই পেরে উঠবে না স্থানীয় উদ্যোক্তারা। আর দীর্ঘমেয়াদে আয়কর অব্যাহতি পেলে ওই টাকা পূনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে এই শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তাদের মতে, প্রস্তাবিত কর কাঠামো বহাল থাকলে দেশে মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে উঠবে না এবং সরকারের ভিশন ২০২১ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বা সংযোজনকৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনে সরবরাহ পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো সরবরাহ ভ্যাট নেই। এ অবস্থায় কম্পিউটার এন্ড মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (প্রস্তাবিত) সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি, উদীয়মান এ শিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ১৫ বছরের জন্য আয়কর অব্যাহতির সুবিধা ঘোষণারও দাবি জানিয়েছে এসোসিয়েশনটি।
এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম রেজোয়ান আলম জানান, বাংলাদেশে আইসিটি পণ্য বিশেষত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসব পণ্যের আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ বা কাঁচামাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণের পাশাপাশি ভ্যাট প্রত্যাহারের করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ তৈরি ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। কিন্তু, দেশে তৈরি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে সরবরাহ পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে এনবিআর। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ তৈরি আমদানিকৃত এসব ডিজিটাল পণ্যকে সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এ ধরনের শুল্ক ও কর নীতি স্থানীয় আইসিটি শিল্পের বিকাশে বড় বাঁধা বলে মনে করেন তিনি।
দেরিতে হলেও এখাতে নজর দিয়েছে বলে এ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তবে তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট খাতের সুষ্ঠু বিকাশে সরকারকে আরো বিনিয়োগ বান্ধব প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা দিতে হবে। তাছাড়া এক্ষেত্রে এখনো কোনো ধরনের নীতিমালা ঘোষণা করেনি সরকার। এ সেক্টরের স্ট্যান্ডার্ড বা মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও কোনো দিক নির্দেশনা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এ বিষয়ে লক্ষ্যনীয় কোনো প্রস্তুতিও নেই।
এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ফাহিম রশিদ জানান, ভারতে মোবাইল ফোন আমদানির উপর ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে। কাঁচামাল আমদানির উপর গড় শুল্কহার দুই শতাংশেরও কম! তারা এ শিল্পের জন্য পরিকল্পিতভাবে ৩০ বছরের ট্যাক্স হলিডে ঘোষণা করেছে। ভিয়েতনামের কথা বলাই বাহুল্য। একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি বিনিয়োগ এবং পর্যাপ্ত শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়েছে অনেক দূর। মোবাইল ফোন ওইএম (অরিজিনাল ইক্যুয়েপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার) করেও তারা আয় করছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যদিকে বাংলাদেশে এ ধরনের শিল্পে বিনিয়োগ করলে আমাদের ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হবে। তাহলে আমরা দাঁড়াব কীভাবে। এ শিল্প সুরক্ষা পাবে কীভাবে। তিনি এক্ষেত্রে ভারতের মতো ট্যাক্স হলিডে দাবি করেছেন।
তারা জানান, দেশের উদীয়মান এ খাতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি, প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এ শিল্প। এতে করে, শুরুর দিকে দেশীয় আইসিটি উৎপাদন বা সংযোজন শিল্পে নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর প্রোডাকটিভিটি হবে তুলনামূলক কম। আবার, প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত বিদেশী কোম্পানির তুলনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে উপচয়ও বেশি থাকবে। অর্থাৎ, চীনের প্রতিষ্ঠিত একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে একটি ব্যাচ উৎপাদনের সময় যদি ১ শতাংশ পণ্য নষ্ট হয়, সদ্য উৎপাদনে আসা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সমপরিমান পণ্য উৎপাদনে ৭ থেকে ৮ শতাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে, প্রাথমিক পর্যায়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত বা সংযোজনকৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ