Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চরফ্যাশনের কৃষকের

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : চরফ্যাশন এবার রবি শস্যের মৌসুমে ফসলের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষাবাদ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে। শশাসহ বিভিন্ন সবজি ট্রাকযোগে টনে টনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে রফতানী হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিত চাষ, উৎপাদন পরিকল্পনা, বাজার চাহিদা নিরূপন, বাজার মনিটরিং, আধুনিক টেকনোলজীর প্রযুক্তি ব্যবহার, কমিউনিউটির মাধ্যমে পরিচানা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের খাপ খাওয়ানোর কৌশল অবলম্বলন করলেই আদর্শ কৃষক হওয়ায় সম্ভাব। দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় কৃষকের সমস্যার অন্ত নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা, বাজার ন্যয্যমূল্য, পরিবহণ, বিদ্যুত, লবন পনি, উন্নতমানের বীজ, আধুনিক যন্ত্রপাতি, সেচ, কৃষি ঋণ, অপরিকল্পিত চাষাবাদ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ কৃষি প্রশিক্ষণের সমস্যা অভাব রয়েছে। চাষাবাদের ক্ষেত্রে বর্তমানে রসায়ানিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। মাটির উর্বরতা কমে ফসল দিতে ব্যর্থ হয়। তার জন্য জৈবসার, ভার্মী কম্পোষ্ট, তরল জৈব সার, মাইক্রো অর্গানাইজম বৃদ্ধি করে বিভিন্ন উপাদান উৎপাদন মাধ্যমে মাটিতে প্রয়োগ করে উর্বর মাটিতে পরিণত করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো মানে হল বাদাম, মুগ, ভুট্টা চাষে ভেট প্লাণটার ব্যবহার, সেচ নালার ব্যবস্থা, আগাম চাষাবাদ করা, শশ্য বিন্যাস, একমুখী চাষাবাদ না করা। একমুখী চাষাবাদ কৃষকের জন্য ক্ষতিকর চাষাবাদ। একজন কৃষক তার নানান কর্মমুখী চাষাবাদ করতে হবে। ধান, সবজি, ফল, মাছ, হাসমুরগী ও গরু-ছাগল চাষাবাদ করা। তাহলে একটি ফসলে যদি লোকসান হয় তাহলে অন্যটি দিয়ে ক্ষতি দূর করা সম্ভাব হয়। চাষাবাদে আমাদের অন্যতম সমস্যা হল চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন। যেমন আমাদের উপজেলা শশার চাহিদা রয়েছে ১০০ মে.টন। উৎপাদন হয় ১০০০ হাজার মে.টন। ভোক্ত না থাকায় কৃষক ন্যয্য মূল্য পায় না। তার জন্যই কৃষক দায়। তাকে আধুনিক কৃষক হতে হবে। উপজেলার মধ্যে অন্যতম চাষাবাদ হচ্ছে সবজি। কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৭৭হাজার ৭০০ হেক্টর জমি রয়েছে চাষাবাদের জন্য। ২০১০-১১ অর্থ বছরে শাক-সবজি আবাদ ২৭৫০ হেক্টর, তরমুজ ৪৫০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ২৫০০ জন কৃষককে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে শাকসবজি আবাদ ৫২৮৫ হেক্টর, তরমুজ ১০৭০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ২৭০০ জন কৃষককে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শাকসবজি আবাদ ৮৫৮৫ হেক্টর, তরমুজ ১০৮০০ হেক্টর এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৫৫৫০ জন কৃষককে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শাকসবজি ৯৯৬০ হেক্টর, তরমুজ ৯২৫০ হেক্টর, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৫৪৬০ জন কৃষককে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শাকসবজি আবাদ হয় ১০২৫০ হেক্টর, তরমুজ ৮৫৪৫ হেক্টর এছাড়াও ১০৩৫ জন কৃষক প্রশিক্ষিত হয়ে জমিতে সবজি চাষাবাদ করছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত মোট কৃষক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৫ জন কৃষককে। সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা অর্জন করে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষকদেরকে। এই সকল কৃষকগন আজ প্রশিক্ষিত হয়ে চরফ্যাশনে সবজি চাষাবাদে বিপ্লব ঘঠিয়েছে। এছাড়াও চরফ্যাশন কৃষি অফিসের উদ্যেগে আইএফএমসি, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে উপজেলার ২৩টি আইএফএমসি স্কুলের মাধ্যমে মোট ১১৫০ জন কৃষক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তাদেরকে কৃষক প্রশিক্ষক(এফ.এফ) গন মৌসুম ব্যপী হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। এখানে নানা রকমের সবজি চাষাবাদ হয়। তার মধ্যে রয়েছে সীম, শশা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি, গাজর, কাচামরিচ, লাউ, পুঁইশাক, করল্লা, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক, ধনিয়া, মিষ্টি কুমড় ও বরবটি ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার জানান, ২০১৩ সালের ২ জুলাই তারিখে আমি যোগদান করেছি। কৃষি বিভাগের সহায়তায় আইপিএম ও আইসিএম নামক বেশ কয়েকটি কৃষক ক্লাব গঠন করা হয়। তার মধ্যে আদর্শ চাষী উন্নয়ন সমিতি, মধ্য হালিমাবাদ আইসিএম কৃষক ক্লাব এবং মূলাদীকান্দী কৃষক ক্লাব অন্যতম। কৃষি অফিসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত¡াবোধায়নে তাদেরকে সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ, বিষযুক্ত শাকসবজি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সহনীয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান করা যায় সে বিষয়েও কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এদিকে সরকার এই সকল কৃষকদের জন্য প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে সার বীজ প্রদান করেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দু’টি মৌসুমে ৩৩শ’ ৭০ জন ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এক মৌসুমে ১৬৪০ জন কৃষককে সরকারি এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সরিষা, ডাল, চিনাবাদাম, খেসারী, মুগ ও ফেলান ডাল ইত্যাদিসহ মৌসুমী রবিশস্য দেয়া হয়। সাথে সরকার সার ও সেচ সহায়তা ও আগাছা নাশকের জন্য নগদ ৪০০ টাকা ব্যংকের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। আহম্মদুপুরের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের রবিশস্য বর্ষার পানিতে নিয়ে গেছে। সাধারণ কৃষক তা শশা সহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করে তা পুশিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ