পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : টানা বৃষ্টিতে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। চলতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো মহাসড়কে ২০/২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি যাত্রীর চাপ, বেপরোয়া চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা, বিপত্তির ঘটনা তো আছেই। সব মিলে এবারের ঈদে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছেই। সড়কপথের এই শঙ্কায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে রেলের উপর। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, ঈদ উপলক্ষে এবার প্রায় ২ কোটি মানুষ নাড়ির টানে ছুটবে গ্রামের পথে। এক সাথে এতো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রতি বছরই ভোগান্তির সীমা থাকে না। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদ যাত্রায় দেশের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও মহাসড়ক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ শঙ্কা থেকেই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এসব পয়েন্টে যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন মতে, প্রতিবছরই ঈদে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় মহাসড়কসহ ৪টি এলাকায়। এগুলো হলো, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশন ও আশুলিয়া। এবার ঢাকার অদূরে আরও ১০টি পয়েন্টে যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এগুলো হলো, আশুলিয়ার জিরাবো বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে, সাভার বাইপাইল মোড়, গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর, কাঁচপুর, ভুলতা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই প্রান্ত।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত মাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজটের পরিসংখ্যান তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। মে মাসের প্রায় প্রতিদিনই এ মহাসড়কে যানজট ছিল। কখনো কখনো এ যানজট ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর সাথে আরও কিছু কারনে এ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মতে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ যথেষ্ট। কিছু কিছু স্থানে ভাঙাচোরা সড়ক, নির্মাণসামগ্রীর স্তুপ, হাটবাজার, নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল, লোকাল গাড়ির আধিক্য, অবৈধ পার্কিং ও বাজারসহ নানা কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আড়াই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে অন্তত ৫ ঘণ্টা। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের ভোগান্তির মূল জায়গা এখন টঙ্গী-গাজীপুর-টাঙ্গাইল অংশ। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২১ জেলার যানবাহন নিয়মিত চলাচল করছে। বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। ঈদ উপলক্ষে এর সংখ্যা আরও বাড়বে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পথচারীদের অবাধ চলাচলের কারণে যানবাহনের গতি বাড়ানো যায় না। পদে পদে থামতে হয়। এ ছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের অবরোধ ও দুর্ঘটনার পরে অবরোধ, ফিটনেসহীন গাড়ি অকেজো হয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশন থেকে কালিহাতী উপজেলা এবং মির্জাপুর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই এলাকাতেও যানজট লেগেই থাকে। এবার ঈদ যাত্রায়ও ওইসব এলাকায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মির্জাপুরের ইচাইল, ডুবাইল, মিয়াপুর ও সোহাগপাড়া, কালিহাতীর চরভাবনা, বাসাইলের বাইখোলা, ঘাটাইলের কালিদাসপাড়া এবং সদর উপজেলার করটিয়া দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও গত কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা। চার লেনের এই মহাসড়কের বিষফোঁড়া হয়ে আছে মেঘনা ও গোমতী সেতু। এই দুই সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। রমজানের শুরু থেকে আবার এই মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৮ লেনের অংশে যানজটে আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়কের দুদিক থেকে দুটি করে লেন বেদখল হয়ে গেছে। মহাসড়কের উপরেই তৈরী করা দোকান-পাট আর গাড়ির গ্যারেজে ৮ লেনের মহাসড়ক ৬ লেনে পরিণত হয়েছে। তার উপর রিকশা, অবৈধ থ্রি-হুইলার ও সিএনজি অটোরিকশার কারনে এ মহাসড়কে কোনো যানবাহনই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের দিক থেকে ঢাকার প্রবেশ মুখে যানবাহনের জন্য বড় বাধা হলো মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। মহাসড়কের ৮ লেনের মধ্যে ৭ লেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে এই ফ্লাইওভার। বাকী ১ লেন সমান রাস্তা দিয়ে কোনোমতে ধীরলয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে ফ্লাইওভারের মুখে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। গতকাল বুধবার দুপুরে ফ্লাইওভারের উপরেও যানজট দেখা গেছে। ঈদে এ চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবেবলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই মহাসড়কেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ভোগড়া বাইপাস হলো যানজটের দিক থেকে বিষফোঁড়া। আবার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সমস্যাও কম নয়। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো জয়দেবপুর চৌরাস্তার ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার আগে থেকেই যানজটে আটকা পড়ে। এই সামান্য রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে কখনো দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি। অথচ মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যেতে এখন সময় লাগে দুই ঘণ্টা। পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অভিযোগ, জয়দেবপুর চৌরাস্তার চারপাশজুড়েই পরিবহনের অরাজকতা। সিটি সার্ভিসগুলো এখানে ঘুরানো হয়। রাখা হয় এলোপাতাড়ি করে। এরপর লেগুনা, অটোরিকশা, ম্যাক্সি, ব্যাটারিচালিক রিকশার অবৈধ টার্মিনাল বানানো হয়েছে চৌরাস্তার স্কুলের সামনে। পণ্যবাহী পরিবহনগুলো রাখা হয় রাস্তার ওপর। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লোকাল বাসগুলোও রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। সব মিলিয়ে গোটা মহাসড়কজুড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঈদে মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কের এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি ঈদ সেবার জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার সদস্যের পাশাপাশি সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করবে রোভার স্কাউটের সদস্যরা। এসব সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা শিফট অনুযায়ী কাজ করবে। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে এসব যানজটপ্রবণ এলাকার পাশে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করবে সড়ক ও মহাসড়ক অধিদফতর। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, যানজটমুক্ত মহাসড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ১৪টি প্রবেশ পয়েন্টে যানজটপ্রবণ এলাকায় মোতায়েন থাকবে স্বেচ্ছাসেবক। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দ্রæত সরিয়ে নিতে মহাসড়কে থাকবে রেকার। মন্ত্রী বলেন, ঈদে মানুষ যাতে নির্বিঘেœ, নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য সব ধরণের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।