Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুকুর ইজারা দিয়েছে প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) আদেশ অমান্য করে এবারে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুকুর ইজারা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়। ইতিপূর্বে সিরাজগঞ্জে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সিরাজগঞ্জের ঘটনায় সেখানকার ডিসি, এডিসি, ইউএনও আদালতের আদেশ অবমাননার দায়ে হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা গ্রামের পৌনে একশো বছরের পুরানো ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পুকুর নিয়ে মামলা বিচারাধীন ও পুকুরের ওপর উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থাদেশ বহাল থাকার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুকুরটি ইজারা দিয়েছে। আর এঘটনায় কুমিল্লার ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড ও তহশীলদারকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হলেও গত দুইমাসে নোটিশের জবাব দিচ্ছেননা প্রশাসনের এসব কর্মকর্তারা। তবে মুরাদনগরের ইউএনও বলেছেন মামলার বিষয়টি জানা থাকলে পুকুরটি ইজারা দেয়া হতো না।  
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা মৌজার ১৪৬৩ দাগের ১ দশমিক ৩০ একরের পুকুরের মালিক মৃত আহাম্মদ আলী। ১৯৪০ সালে আদালতের মাধ্যমে নিলাম ডাকে অংশ নিয়ে যথাযথ মূল্য পরিশোধ করে পুকুরটির মালিকানা গ্রহণ করেন আহাম্মদ আলী। সত্তর বছর ধরে পুকুরটি আহাম্মদ আলীর পরিবার মৎস্য চাষে ব্যবহার করে আসছে। ২০১০ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, এসিল্যান্ড মুরাদনগর, ১৬নং ধামঘর ইউনিয়ন তহশীলদারকে বিবাদী করে কুমিল্লার (মুরাদনগর) সহকারি জজ আদালতে আহাম্মদ আলী দেওয়ানী মামলা করেন। সম্প্রতি আহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর মামলাটি তাঁর ওয়ারিশ হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম পরিচালনা করছেন। বর্তমানে মামলাটি সিভিল রিভিশন নং-৩৮৭২/২০১১ হাইকোর্টে অপ্রস্তুত অবস্থায় বিচারাধীন আছে এবং উক্ত মামলায় স্থিতাবস্থাদেশ (স্ট্যাটাসকো) বহাল রয়েছে। অথচ পুকুরটি নিয়ে মামলা চলমান এবং পুকুরের ওপর উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থাদেশ বহাল থাকার পরও গত ৫মার্চ মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা খাস তালিকার ৪৮টি পুকুর (জলমহাল) ইজারা দেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং ১৩ এপ্রিল দরপত্র খোলার তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই খাস তালিকায় পরমতলার আহাম্মদ আলীর মালিকানা দাবী করা পুকুরের নামও রয়েছে। যার ওপর উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থাদেশ বহাল রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পরমতলার ১৪৬৩ দাগের পুকুরটি মুরাদনগরের ধামঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল মোমেন তিন বছরের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়েছেন। এদিকে উল্লেখিত দাগের পুকুরের ওপর আদালতের স্থিতাবস্থাদেশ বহাল থাকার পরও কেনো ওই দাগের পুকুরটি ইজারা দেয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, এবং এটি নিয়ে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইজারা প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং ১৬নং ধামঘর ইউনিয়ন তহশীলদারের কাছে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ আবুল কালাম পাটোয়ারি গত ১১ ও ১২ এপ্রিল লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন। নোটিশ পাঠানোর পরও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিতর্কিত পুকুরটির ইজারা কাজ সম্পন্ন করেন। কেবল তাই নয়, প্রায় দুইমাস অতিবাহিত হলেও লিগ্যাল নোটিশের কোন জবাব দেয়নি।
জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের বলেন, ‘পরমতলার ১৪৬৩ দাগের পুকুরটি নিয়ে মামলা রয়েছে কিংবা মহামান্য হাইকোর্টের স্ট্যাটাসকো বহাল রয়েছে এমনটি আমার জানা ছিল না। আর জানা থাকলে ইজারার তালিকা থেকে এটি বাদ দিতাম। কারণ এসব নিয়ে ঝামেলা হোক এটা আমরা চাই না। পুকুরটি সরকারি খাসে রয়েছে এমন তালিকা এসিল্যান্ড অফিস থেকে দিয়েছে।’ ইজারা বিজ্ঞপ্তির একটি শর্তে বলা আছে জলমহালের কোন দাগের বা জলমহালের ওপর আদালতের স্থিতি অবস্থা বা নিষেধাজ্ঞা আদেশ থাকলে তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা না হলেও তা ইজারা বহির্ভূত থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘এটি যেমন ঠিক তেমনি ১৯৫৯ সালের জলমহাল আইনে এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে থাকা পুকুর বা জলমহাল ইজারা দেয়ার বিধান রয়েছে।’ তবে লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ