Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

২ লাখ ব্যাগ রক্তসঙ্কট সচেতনতার অভাবে বাড়ছে না দাতা

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ময়মনসিংহ থেকে রিক্সাচালক আরাফাত হোসেন অসুস্থ্য মাকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসক জরুরী ভিত্তিতে দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের কথা বললেন। মায়ের রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। এই গ্রুপের রক্ত সচরাচর কম হওয়ায় আশেপাশের কোন বøাড ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছিল না। উৎকণ্ঠায় দিশেহারা আরাফাত এদিক সেদিক ছোটাছুটি করেন। পকেটে যৎসামান্য টাকা থাকায় ভালো বøাড ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নেয়ার সাহসটুকুও পাচ্ছিল না সে। ঘটনাচক্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয়। তিনি জানালেন বাঁধনের কথা। এরপর টিএসসির বাঁধন কার্যালয়ে গেলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে দুই ব্যাগ রক্তের বন্দোবস্ত হয়।
শুধু আরাফাত নয়, হাজার হাজার মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াচ্ছে বাঁধন, সন্ধানী, কোয়ান্টাম, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব, কনিকাসহ অর্ধ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ধনী-গরিব, জাতি-গোষ্ঠি নির্বিশেষে জীবনের প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় আত্মার বাঁধনে জড়িয়েছে সংগঠনগুলো। আর এসব সংগঠন এবং ব্যক্তিকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণে বিশ্বব্যাপি আজ (১৪ জুন) বিশ্ব রক্ত দাতা দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। রক্তের অভাবে যাতে বড় ধরনের বিপর্যয় না আসে এ জন্য দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত দিতে হবে, এখনই দিতে হবে প্রায়শই দিতে হবে’।
সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। পাওয়া যায় ৭ লাখ। বাকী ২লাখ ব্যাগ রক্তের অভাবে অনেক মুমূর্ষু রোগী অকালে মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। যদিও স্বেচ্ছায় রক্তদানে সক্ষম যুবসমাজের সামান্য একটি অংশ রক্তদান করলেই এ চাহিদা পূরণ হয়ে যায় তবুও আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা অবিশ্বাস্যরকম কম। অধিকাংশই মেটানো হয় পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে। এছাড়া কিছু রক্ত পাওয়া যায় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। যা একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর। তাই রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণে সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আসাদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত দরকার হয়। এর মধ্যে ৭ লাখ পাওয়া যায়। যার ৭০ শতাংশ পরিবার-আত্মীয়ের মাধ্যমে। বাকী ৩০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে মেটানো হয়। সঙ্কট থেকে যায় প্রায় ২ লাখ ভ্যাগ। তিনি বলেন, রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। প্রতি ৪মাস অন্তর রক্তদিলে কোনভাবেই শরীরের ক্ষতি হয় না। সবাই রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হলে দেশে রক্তদাতার সংকট হতো না। তিনি এ বিষয়ে সচেতনতা এবং ন্যাশনাল বøাড সেন্টার গঠন করে এর মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের সেবা দেয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন জনবলের অভাবে ধুকতে থাকা সরকারের নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কর্মসূচিকে কার্যকর করার তাগিদ দেন।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন। সংগঠনটি ২০১৬ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৭ জনসহ গত ২০ বছরে প্রায় ১২ লাখ মানুষের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করছে। তৈরী করেছে অসংখ্য স্বেচ্ছায় রক্তদাতা। সংগঠনটি ২০১৬ সালে ৫৭ হাজার ৪৭২ ব্যাগসহ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে দান করে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। পারোক্ষভাবে রক্তদানের পরিমান এর কয়েকগুণ হবে।
রক্তদানের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান এবং কোয়ান্টাম বø­াড সেন্টারের কনসালট্যান্ট ডা. মুন্শী হাবিবুল্লাহ জানান, শারীরিকভাবে সুস্থ ১৮ থেকে ৫৭ বছর বয়সের মধ্যে কোন পুরষের ৪৮ ও নারীর ৪৫ কেজি ওজন হলে সে ১২০ দিন অন্তর অর্থাৎ ৪ মাসে এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারবে। এভাবে প্রতি এক বছরে ৩ বার রক্তদানে মানব দেহের লোহিত কণিকাগুলোর ক্ষমতা বাড়িয়ে নতুন কণিকা তৈরির হার বৃদ্ধি করে থাকে। এমনকি রক্তদেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাতার শরীরে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
তিনি জানান, প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের ৮ ভাগের ১ ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি ক্ষয় হয়। যা স্বাস্থ্যবানদের ওজন কমানোর জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। নিয়মিত রক্তদাতা হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক ও ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি মুক্ত থাকে। তবে আমাদের সমাজে একটা ভুল ধারণা আছে রক্তদান করলে অসুস্থ্য হওয়া, মুটিয়ে বা শরীর শুকিয়ে যায়। মেডিকেল সাইন্সের মতে এর কোন ভিত্তি নেই বরং রক্তদান করলে শারীরিকভাবে বিভিন্ন উপকার ও মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়।
বাধঁনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র মো. ফরিজুল ইসলাম বলেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় বাঁধনের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হবে আন্তর্জাতিকমানের রক্তকেন্দ্র। যেখানে কম খরচে সেবা পাবে প্রান্তিক মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ