Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমেরিকা থেকে ছুটে আসা তিন ভাই না ফেরার দেশে

স্বজনদের ঈদ আনন্দে বিষাদের ছায়া

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : বন্দর নগরীর চৈতন্যগলি বাইশমহল্লা কবরস্থানে সারিবদ্ধ তিনটি কবর। তিন কবরে চির নিন্দ্রায় শায়িত হলেন প্রকৌশলী আক্তার বিন জামান ইরশাদ (২৮), তার ছোট ভাই জাওয়াত বিন জামান জিয়াদ (২২) ও ফুফাত ভাই মোঃ সাদমান আলম (১৯)। স্বজনদের কান্না আর আহাজারির মধ্যেই গতকাল (সোমবার) দুপুরে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। রোববার বিকেলে নগরীর হালিশহর টোল রোডে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন আমেরিকার গ্রীনকার্ডধারী ওই সম্ভাবনাময় তিন যুবক। তিনজনের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। থামছে না স্বজনদের আহাজারি। সবার প্রশ্ন সড়ক দুর্ঘটনায় এভাবে আর কত প্রাণ যাবে। সুদূর আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে ছুটে এসেছিলেন স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু ঈদ আসার আগেই মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারা তিনজনই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্বজনদের ঈদ আনন্দ ঢেকে গেল বিষাদের কালোছাঁয়ায়।
ইরশাদ, জিয়াদ, সাদমান তিনজনই আমেরিকায় থাকেন। ঈদের ছুটি শেষে তাদের তিনজনেরই আমেরিকার ফ্লোরিডায় ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই তারা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশে এসেছিলেন তারা। তিন ভাই মিলে প্রাইভেট কারে চড়ে যাচ্ছিলেন ঈদের কেনাকাটা সারতে। মার্কেটে পৌঁছার আগেই টোল রোডের জালিয়াপাড়ায় তাদের প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। তাদের এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে সবার ঈদ আনন্দ এখন মাটিতে মিশে গেছে। তিনজনের বাসায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। স্বজনদের কান্নায় কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। সন্তানহারা বাবা-মাকে সান্ত¦না দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা।
ইরশাদ ও জিয়াদ নগরীর সদরঘাট মালুম মসজিদ এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামারুজ্জামানের দুই পুত্র। দুই সন্তানকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি এবং তার স্ত্রী। ইরশাদ ঢাকার আইইউবি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর চলে যান আমেরিকার ফ্লোরিডায়। সেখানে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এরমধ্যে গ্রিনকার্ডও পেয়ে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ছোট ভাই জিয়াদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। এরপর তিনিও পাড়ি জমান আমেরিকায়। বড় ভাইয়ের ব্যবসা দেখার পাশাপাশি পড়ালেখা করছিলেন সেখানে। তিনিও আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী। জিয়াদ ছয় মাস আগে দেশে আসেন। এক সপ্তাহ আগে দেশে আসেন ইরশাদ। কথা ছিল ঈদ শেষে দুই ভাই ফিরে যাবেন ফ্লোরিডায়। সাথে নিয়ে যাবেন বাবা-মাকেও।
তাদের ফুফাত ভাই সাদমান অনেক আগেই আমেরিকায় যায়। এক বছর আগে দেশে আসে সে। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সাদমান। ঈদ শেষে দুই মামাতো ভাইয়ের সাথে তারও আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তার বোন এবং মাও তার সাথে আমেরিকায় যেতে সবকিছু চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন। সাদমানের পিতা মোঃ আলমগীর হোসেন মারা যান অনেক আগে। মায়ের আদরে বড় হয় সাদমান। তার একমাত্র বোন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। পিতাহারা একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে হতবিহŸল হয়ে পড়েছেন সাদমানের মা। তাদের গ্রামের বাড়ি মদুনাঘাটে। তবে মালুম মসজিদের পাশে নানার বাড়ির কাছেই তাদের বাসা।
ইরশাদ ও জিয়াদের চাচা এবং সাদমানের মামা শামসুল হুদা মিন্টু জানান, ঈদের কেনাকাটা সারতে তিন ভাই প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়। জিয়াদ ভালো গাড়ি ড্রাইভ করত। সে-ই গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইরশাদ ও জিয়াদ স্পটেই মারা যায়। সাদমানকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। তিনি বলেন, সাদমানের বাবা নেই। তার আনিকা আলম নামে এক বোন আছে, শিক্ষানবিশ আইনজীবী। মা, মেয়ে, ছেলে তিনজনই ঈদের পরপর আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল। মিন্টু জানান, ২০০৭ সালে তার এক ভাগিনা ইঞ্জিনিয়ার রাজিবও প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় মারা যান। রাজিব অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এরপর মালয়েশিয়ায় নোকিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। দেশে এসে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারা যায় রাজিব ও তার এক বন্ধু। ১০ বছর পর ফের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের পুরো পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিল।
এদিকে রোববার রাতেই তিনজনের লাশ দারোগাহাট সড়কের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে তখন স্বজনদের আহাজারি আর মাতম চলছিল। সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে সাদমানের মা নাজমুন নাহার বাকরুদ্ধ। একসাথে সবাই ইফতারি করবেন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলেন। কিন্তু কে জানত, আর কখনো পরিবারের সাথে ইফতারি করার সুযোগ হবে না সাদমানের। মা ইয়াসমিন আকতারের দুই ছেলে ইরশাদ ও জিয়াদের লাশ যখন আঙিনায় আনা হয় তখন তিনি জ্ঞান হারান। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ছেলের লাশ উদ্ধার করে আসে বাবা কামারুজ্জামান। বাড়িতে এসে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। গোটা বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের কান্নার রোল। বাদ জোহর চৈতন্যগলি কবরস্থানে তিনজনের দাফন হয়। অসংখ্য মানুষের অশ্রæ আর কান্নায় চিরবিদায় নেন এ তিন যুবক।
এদিকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সম্ভাবনাময় মেধাবী তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। গতকাল এক শোক বাণীতে তিনি বলেন, তিন যুবকের মৃত্যুতে তাদের পরিবারের পাশাপাশি দেশ তিন মেধাবীকে হারালো। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফও তিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।



 

Show all comments
  • Kawsir ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৪৭ এএম says : 0
    it's a very sad news
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Hussain ১৩ জুন, ২০১৭, ১:১৮ পিএম says : 1
    খুব কষ্ট পাইলাম ভাষায় প্রকাশ করার মত না। তাদের মা বাবা কে আল্লাহ যেন এই শোক সইবার ক্ষমতা দান করেন আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Shams Huda ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩০ পিএম says : 0
    All three of them I know are gone please keep your prayers to all three of them
    Total Reply(0) Reply
  • Shahin Ahmed ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩১ পিএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ তাদের কে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কর।ও আমি ও আমরা এ রকম দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যু থেকে পানাহ চাই, আমিন।ছুম্মা আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Aziz ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩১ পিএম says : 0
    ইননালিলাহে ওয়া ইননাইলাহে রাজিউন আমি সোকাহত পরিবার কে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি
    Total Reply(0) Reply
  • Shashi Moon ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩২ পিএম says : 1
    আল্লাহ্ তাদের জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক । আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • pabel ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩৪ পিএম says : 0
    এত কষ্ট পেলাম , কি আর বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি
    Total Reply(0) Reply
  • Sumona Rahman ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৩৪ পিএম says : 0
    I m speechless
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir ১৩ জুন, ২০১৭, ২:৫৭ পিএম says : 0
    আমি সোকাহত পরিবার কে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি,আল্লাহ্ তাদের জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক । আমি ও আমরা এ রকম দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যু থেকে পানাহ চাই ,আমিনI
    Total Reply(0) Reply
  • harun ur rashid ১৩ জুন, ২০১৭, ৪:২৮ পিএম says : 0
    i pray their eternal peace of their departed soul. Allah help their family to bear the sadness. every death bear a lesson for living person that once nobody exist here. so, preparation need, how to face there?
    Total Reply(0) Reply
  • ZAS ১৪ জুন, ২০১৭, ৩:৩৩ পিএম says : 0
    সোকাহত পরিবার কে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি,শোক সইবার ক্ষমতা দান করেন আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • babul ১৭ জুন, ২০১৭, ৮:৩৯ এএম says : 0
    This is a great sad news .Same news is going on again and again. I hope every body will concious to avoid accident.I hope their death give us great lesson. Their familly will give strength and their soul live in peace.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ