Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেট : নেতিবাচক কয়েকটি দিক

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ
এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে। সমালোচনা হচ্ছে ঘোষিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়াতেও। আশ্বাস দিয়েও করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোর এবং ব্যবসায়ীদের দাবি সত্তে¡ও করপোরেট করহার না কমানো নিয়েও সমালোচনা চলছে ব্যবসায়ী মহলে। স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই আমানত এখন কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনিতেই ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর সুদ কমছে। তার ওপর রয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ। এখন নতুন করে আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় আমানতের মূল টাকা কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আমানতকারীরা।
এক লাখ টাকার ওপর ব্যাংকের আমানত থাকলেই যে বর্ধিত আবগারি শুল্ক দিতে হবে অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে কেউ ভালো চোখে দেখছেন না। সমালোচনা রয়েছে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়েও। ২০১২ সালে করা এ আইন ঘোষিত বাজেটে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন আইনে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয় বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে; যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে সিপিডি। ব্যবসায়ীদের চাপে অর্থমন্ত্রী ভ্যাটের হার কমানোর কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ী সমাজে। এই ক্ষোভ মেটাতে নতুন আইনে অবশ্য এক হাজার ৪৩টি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর পরও প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে সমালোচনা চলছে।
বর্তমানে যে করমুক্ত আয়সীমা রয়েছে আড়াই লাখ টাকা এটি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছর আগে। তার পর থেকে আর পরিবর্তন হয়নি। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল, এবার বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রীও সে ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বাড়ানো হয়নি সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়সীমা। বাজেটে অর্থমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি এই মুহূর্তে কম, তাই অপরিবর্তিত রয়েছে করমুক্ত আয়সীমা।’ কিন্তু এই যুক্তি ধোপে টিকছে না। সমালোচনা হচ্ছে এটি পরিবর্তন না করা নিয়েও। করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে যেমন সমালোচিত হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী তেমনি করপোরেট কর না কমিয়েও সমালোচনা হচ্ছে বাজেটের।
করপোরেট করহার কম হলে বিনিয়োগ বাড়ে। এমনিতেই বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল অন্তত সেই স্থবিরতা কাটানোর জন্য যেন করপোরেট করহার কমানো হয়। কিন্তু সেই দাবি অর্থমন্ত্রীর কানে পৌঁছায়নি। তিনি গতবারের মতো এবারও করপোরেট করহার অপরিবর্তিত রেখেছেন। এর বাইরে বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায়ও সমালোচনা হচ্ছে।
বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি অর্জনের জন্য বেসরকারি খাতে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বিনিয়োগ লাগবে। আর সরকারি খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ লাগবে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা কীভাবে আসবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। কাক্সিক্ষত রাজস্ব আয় না হওয়ার পরও বছর বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। বাজেটের ব্যয় মেটাতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে মূসক বা ভ্যাট থেকে আয় ধরা হয়েছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে যেখানে ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা যায়নি সেখানে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা কীভাবে আদায় হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা।
বরাবরের মতো এবারও বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস ধরা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের আয়কে। লক্ষ্য দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অন্যান্য উেসর সব আয় ধরেও বাজেটে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। ঘাটতি মেটানো হবে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক সহায়তা ও অনুদান থেকে।
লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন