পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মে’র দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার পদত্যাগ
ইনকিলাব ডেস্ক : দলের ভেতরে বাইরে থাকা তীব্র অসন্তোষ সত্তে¡ও ব্রিটেনে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের লাইভ কাভারেজে এই খবর জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ কনজারভেটিভ দলের পক্ষে শিগগির ঘোষিত হতে যাচ্ছে থেরেসার নতুন নেতৃত্ব।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে ঝুলন্ত এই পার্লামেন্টকে ‘স্তব্ধ পার্লামেন্ট’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গঠিত হতে যাওয়া সরকারকে ইতিহাসের দুর্বলতম সরকার আখ্যা দিয়ে আভাস দেওয়া হয়েছে, খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে আসন্ন সরকারের ভবিষ্যত। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশের আগেই নিশ্চিত হয়ে যায়, আসন্ন পার্লামেন্টটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে যাচ্ছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো থেরেসা মে’কে পদত্যাগের আহŸান জানান বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিন। পূর্ববর্তী নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসন পাওয়া লেবার নেতা বলেন, আসন হারানো মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের যোগ্যতা হারিয়েছেন মে। ‘সবার প্রতিনিধিত্বকারী’ নতুন এক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তিনি মে কে পদত্যাগের আহŸান জানান। নিজ দলের অনেক এমপিও তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। তবে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান মে। বাকিংহাম প্যালেসে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাতের পর জানান, তাকে সরকার গঠনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেরেসা মে’র অবস্থান হবে খুবই দুর্বল এবং তিনি হয়তো বেশিদিন ক্ষমতায় টিকতেও পারবেন না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির(ডিইউপি) সমর্থন নিশ্চিত করে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিক নয়, ইস্যুভিত্তিক সমর্থন পাচ্ছে কনজারভেটিভরা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কোনও স্থিতিশীল সরকারের লক্ষণ নয়। তাছাড়া ব্রেক্সিটপন্থী, গর্ভপাত বিরোধী এবং এলজিবিটি প্রশ্নে নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট (ডিইউপি) পার্টির সঙ্গে ঐক্য নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে মে’র দলের অভ্যন্তরে। এর বাইরেও থেরেসাকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে রয়েছে নানান ধারার অস্বস্তি। সবমিলে থেরেসা মে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি সর্বোচ্চ ভোট এবং এককভাবে সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার কথা ভাষণে উল্লেখ করেন থেরেসা। দাবি করেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শুরু হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একমাত্র তারাই দেশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার নিশ্চয়তা দিতে পারে। থেরেসা মে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট আলোচনায় এই সরকার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছা পূরণ করা হবে।’
ব্রেক্সিট-বিরোধী আসনগুলোতে ভোটাররা কনজারভেটিভদের তুলনায় লেবার পার্টির এমপিদের ভোট দিয়েছেন যা এই ইস্যুতে জনগণের অবস্থান নমনীয় হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে। নির্বাচনের ফলকে তাই ব্রেক্সিট ম্যান্ডেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে থেরেসার নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন হারানোর পর শীর্ষ কনজারভেটিভ নেতৃত্ব মনে করছে, সফল ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মে ব্যর্থ হতে পারেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফেও তাই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মে’কে ঘিরে অস্বস্তির কথা উঠে এসেছে। বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে বরিস জনসন, আমবের রুড আর ডেভিড ডেভিস-এর নাম শোনা যাচ্ছে।
আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময় থেরেসা মে জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনায় যুক্তরাজ্য সরকারকে আরও শক্তিশালী করতেই এই নির্বাচন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে কনজারভেটিভরা ব্যর্থ হওয়ার ফলে থেরেসা মে’র নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। তিনি আশা করেছিলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় পার্লামেন্টে আরও বেশি আসন পাবে তার দল। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে দলটি ৩৩১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু আগাম নির্বাচনে থেরেসা-র দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ৩২৬ আসন পেতেই ব্যর্থ হয়।
নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকে জরিপে যে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছিল, ভোটের ফলে সে তুলনায় অনেক ভালো করেছে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন কনজারভেটিভদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন লেবার এমপিরা। ২৬১টি আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ২৯টি আসন বেশি পেয়েছে দলটি। নিজ আসনে জয়লাভের পর দেওয়া ভাষণে জেরেমি করবিন থেরেসা মে-কে পদত্যাগের আহŸান জানান। তিনি বলেন, তার দল দেশকে সেবা দিতে প্রস্তুত। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি), লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, গ্রিনপার্টি, ওয়েলস প্লেই কাইমরু দলের সঙ্গে কথিত প্রগতিশীল জোট গঠনে প্রস্তুত থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন পূর্ণ করতে পারছে না লেবার পার্টি। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা টিম ফ্যারন বলেছেন, যদি ‘এক বিন্দু আত্মসম্মানবোধ’ থেকে থাকে তাহলে থেরেসা মে-র ‘লজ্জিত ও পদত্যাগ করা উচিত।’
থেরেসা মে’র দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার পদত্যাগ
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী দুই উপদেষ্টা হলেন নিক টিমোথি ও ফিওনা হিল। গতকাল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। ৮ জুনের আগাম নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার পর এই পদত্যাগের ঘোষণা আসলো। এর আগে থেরেসা মে সতর্কতা জানিয়ে বলেছিলেন, যদি তিনি টিমোথি ও ফিওনা হিলকে বরখাস্ত না করেন তাহলে তাকে দলে নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে নিক টিমোথি জানিয়েছেন, নির্বাচনের হতাশ ফলাফলে তার ভূমিকার দায় স্বীকার করছেন এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
টিমোথি জানান, কনজারভেটিভ পার্টির বহুল সমালোচিত ইশতেহারে সামাজিক সেবার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য তিনি দুঃখিত। পদত্যাগের বিবৃতিতে টিমোথি জানিয়েছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পেছনে থেরেসা মে ও কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন কমে যাওয়া দায়ী নয়। এ জন্য দায়ী লেবার পার্টির অপ্রত্যাশিত জনসমর্থন বেড়ে যাওয়া।
বিবিসির সহকারী রাজনৈতিক সম্পাদক নরম্যান স্মিথ জানান, এই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগে থেরেসা মে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচক বলে পরিচিত ছিলেন এই দুই উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে থেরেসা মে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও ৩১৮টি আসন পেয়ে বৃহত্তম দলের অবস্থান ধরে রেখেছে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দলটিকে ঝুলন্ত সংসদ গঠন করতে হচ্ছে। থেরেসা মে ঘোষণা দিয়েছেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্টদের (ডিইউপি) সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গঠন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও কনজারভেটিভ পার্টির ভেতর থেকেও থেরেসা মে’র পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে।
‘সামাজিক মাধ্যম’-এর লড়াইয়ে লেবারদের জয়লাভ
এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লেবারদের ছিল ইতিবাচক, আশাব্যঞ্জক ম্যাসেজ’। কনজারবেটিভদের আক্রমণের চেয়ে ভোটারদের পক্ষে টানতে ফেসবুক ও টুইটারে ইতিবাচক প্রচারণাই হচ্ছে লেবারদের সাফল্যের চাবিকাঠী - এমনটাই বলছেন লেবারদের একজন ডিজিটাল কৌশল প্রণেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।