Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পটিয়ার কাগজী লেবুর চাহিদা দেশ-বিদেশে

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গরম-রমজানে কোটি টাকা বিক্রি, চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি
এস. কে. এম. নুর হোসেন, পটিয়া থেকে : চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। কাগজী লেবু বিক্রয় করে চাষী ও বিক্রেতারা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় করছে। ১৯৮০-৮১ সালে পটিয়ার বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলে চাষীরা কাগজী লেবুসহ বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ করে। লেবু সাধারণত ৫ জাতের রয়েছে। এর মধ্যে কাগজী লেবু, পাতি, এলাচি, বাতাবি ও নতুন জাতের হাইব্রিট সিডলেস নামের একটি লেবুর চাষ বর্তমানে হচ্ছে। ৮৫ সালে পটিয়ার খরনা, হাইদগাঁও, কেলিশহর, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুর এলাকা, বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা, জৈষ্ট্র্যপুরা ও কানুনগো পাড়ার পাহাড়ী এলাকার ব্যাপক পরিমানে লেবুর চাষ গড়ে ওঠে। পটিয়াসহ আশে পাশের পাহাড়ী অন্যন্যা এলাকার লেবু চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের পটিয়াস্থ চক্রশালা রেলস্টেশনে জমা হত। ৮৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত এক নাগারে ১১ বছর ধরে চক্রশালা রেলস্টেশনে ১৬ নং ডাউন ট্রেন দিয়ে সন্ধ্যায় শত শত টুকরি কাগজি লেবুর চালান চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হতো। ফলে চক্রশালা রেল স্টেশনে কাগজী লেবুর বুকিং চার্জ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ লেবু খাতে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করতো। তখনকার সময়ে এক টাকা দিয়ে ৪/৫ টি লেবু পাওয়া যেতো। যে পরিমান লেবু উৎপাদন হতো সে লেবু দিয়ে বেভারেজ কোম্পানী জুস, আচার, জ্যাম, জেলিসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরী করতো। আবাহাওয়ার তারতম্যের কারণে গত ১৫/১৬ বছর ধরে লেবু বাগানে ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমনে লেবু বাগানের অনেক গাছ মরে যায়। ফলে দিনদিন পটিয়ার লেবুর উৎপাদন কমতে থাকে। এতে ব্যাপক হারে লেবু বিক্রি বন্ধ সহ বেভারেজ কোম্পানীর অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বাগানে নতুন করে কিছু গাছ সৃষ্টির ফলে ইদানিং লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চৈত্র- বৈশাখ মাসে লেবুর ফুল আসে। আষাঢ়- শ্রাবণে লেবুর ভরা মৌসুম সৃষ্টি হয়। চাষীরা জানিয়েছে পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি কমলমুন্সিরহাটে লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। চন্দনাইশ, বোয়ালখালীর দুই তিন স্পটে প্রতিদিন ২০/৩০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। এভাবে দুই মাস ধরে লেবুর মৌসুম চলে। এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রয় করে স্থানীয় চাষীরা। আর প্রায় ২০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এ লেবু বিক্রয়ের সাথে জড়িত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
চলিত বছর প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম ভালো থাকায় কৃষকেরাও মহাখুশি। রমজান, রোজা ও আবহাওয়া গরম থাকার কারণে লেবুর দাম চড়া থাকায় এবার চাষী ও খুচরা বিক্রেতারা ৩/৪ গুণ বেশি দাম পেয়ে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে।
খরনার লেবু চাষী নুর জানান, বাণিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদন ও বিক্রয় করার কারণে এ পাহাড়ের গ্রামগুলোকে লেবু গ্রামও অনেকেই বলে থাকেন। পাহাড় ও সমতল উর্বর জমি লেবু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের প্রতি অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুগুনাথ নাহা জানান, পটিয়ার ১০ হাজার একর পাহাড়ী ভূমিতে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। দেশের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবু উৎপাদন হয় পটিয়া উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু বাগান রোগমুক্ত করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ