বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো: শামসুল আলম খান, বিশেষ সংবাদদাতা : ঘাগড়া চৌরাস্তা বাজার থেকে সুহিলা নতুন বাজার। দুই বাজারের দূরত্ব মাত্র ২৫০ গজ। এ বাজার দুটি’র বুকচিরে বয়ে গেছে সুতিয়া নদী। দুই বাজারের সংযোগ রক্ষায় এক সময় এ নদীর ওপরে ছিল কাঠের ব্রিজ। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ নিয়ে স্থানীয় কয়েক গ্রামের বাসিন্দাদের কষ্ট-বিড়ম্বনার গল্পও নেহায়েত কম নয়।
ফলে কয়েক যুগ ধরেই সুতিয়ার বুকে টেকসই ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠেছিল। অবশেষে বছর খানেক আগে তাদের সেই দাবি পূরণ হয়। ৫৪ লাখ টাকা খরচ করে নির্মিত হয় নতুন একটি আরসিসি ব্রিজ। এতে দুই বাজার তো বটেই আশেপাশের ৪ থেকে ৫ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষেরও স্বপ্নপূরণের উচ্ছ¡াস-আনন্দও কম ছিল না।
কিন্তু ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’র মতো তাদের এ আনন্দের রেশও টিকেনি বেশিদিন। ব্রিজের ঠিক সামনের সড়কটিতে ইতোমধ্যেই জুড়ে দেয়া হয়েছে আজদহা সীমানা প্রাচীর। ব্রিজ নির্মাণের পর সড়ক হাওয়া করার এমন অবাক কান্ড ঘটিয়ে বসেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক। তার দাবি, নিজের জমিতে তিনি রাস্তা দিবেন না।
তার জমির ঠিক উল্টো দিকেই সরকারি খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরও ভাঙবেন না। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিএনপি’র ওই নেতার এমন রশি টানাটানিতে যাতায়াতে নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার গ্রামবাসীকে। বুধবার সরেজমিনে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া চৌরাস্তা বাজার এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। বিএনপি নেতার খামখেয়ালিপনা আর উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার গলদের জন্যই প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ব্রিজ গচ্ছা যেতে বসেছে বলেও মনে করেন তারা।
দাপুনিয়া-চুরখাই বাইপাস সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার এগুতেই ঘাগড়া চৌরাস্তা বাজার। এ বাজারের সঙ্গে পাশের সুহিলা নতুন বাজারের চারিদিকে মাঝিহাটি, গোপালনগর, সোনাখালি, দলিরপাড়সহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় বিশ কী ত্রিশেক মানুষের বাস। এসব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষকে জীবিকার তাগিদে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। দুই বাজারের মাঝখানে সুতিয়া নদীর ওপর একটি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেসার্স তমাল এন্টার প্রাইজকে এ ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে তারা নির্মাণ কাজ শেষ করে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিন আগে হঠাৎ করেই স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক ব্রিজের সামনে যাতায়াতের রাস্তাকে নিজের জমি দাবি করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। স্থানীয়রা তাকে অনেক বুঝিয়েও নিবৃত্ত করতে পারেননি।
এ সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে ব্রিজ হেঁটে সুহিলা নতুন বাজারে যেতেই যেন পঙ্গপালের মতো ঘিরে ধরলো গ্রামের মানুষজন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মোমবাতির ব্যাগ নিয়ে শহরমুখী মোস্তফা কামাল ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠলেন, আমাদের ব্রিজ আছে ঠিকই। অথচ একটি বাইসাইকেলও চলার মতোও জায়গা নেই। এই সময়েও বিএনপি নেতা পাবলিককে নির্যাতন করে। কোথায় আছি আমরা?’
তার সঙ্গে কন্ঠ মেলালেন চা দোকানি ফজর আলী, কৃষক আব্দুল আউয়াল, সাইদুল ইসলাম, ওষুধ ব্যবসায়ী এমদাদুল হকসহ অনেকেই। তারাও বলেন, ৫০ থেকে ৬০ বছর যাবত আমরা এ রাস্তা ব্যবহার করে হেঁটে পারাপার হয়েছি। তখন মঞ্জু (বিএনপি নেতা) বাঁধা দেয়নি। ব্রিজ হবার পর রাস্তা বন্ধ করে বাউন্ডারি ওয়াল দিলো।’ তবে ওই বিএনপি নেতা মঞ্জুরুল হক বলেন, আমার সাফকাওলা ৪ শতাংশ জমির উপর দিয়ে ব্রিজের রাস্তা হয়েছে। এ কারণে বাউন্ডারী ওয়াল দিয়েছি। ব্রিজ নির্মাণের আগেই আমি একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি।’
তবে এ অভিযোগ ঠিক নয় দাবি করে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহম্মদ মুবিনুর রহমান বলেন, এ ব্রিজ নির্মাণের সময় তিনি বাঁধা দেননি। আপত্তিও তুলেননি। বিএনপি নেতা দাবি করেছেন রাস্তার পশ্চিম পাশে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেটি উচ্ছেদ করলে জনস্বার্থে তিনি তার নিজের জায়গা রাস্তার জন্য দিয়ে দিবেন।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার সাজুর শেল্টারে ব্রিজের রাস্তার পশ্চিমে সরকারি জমিতে পাকা দালানঘর তোলা হয়েছে। এ দোকানের ভাড়ার টাকা যায় চেয়ারম্যানের পকেটে। মূলত এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্ব›দ্ব রয়েছে। এ দ্ব›েদ্ব ওই বিএনপি নেতার পোয়াবারো অবস্থা।’
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম আহমদ বলেন, সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা থাকলে সেটি উচ্ছেদ করা হবে। এবং সেখান দিয়ে নতুন রাস্তা করা হবে। এটি উচ্ছেদের পর তিনি আমাদের জমি দিলে আমরা নিয়ে নিবো।’
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।