Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঈদকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর মেরামত হচ্ছে ৮৫ রেলকোচ

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : ঈদ সামনে রেখে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিক কর্মচারী আর কর্মকর্তারা। ঈদে ঘরমুখী মানুষদের বাড়তি সুবিধা দিতে ৮৫টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে কারখানাটিতে। কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই মেরামত হওয়া কোচগুলো হস্তাস্তর করা হবে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে। কারখানায় মেরামত হওয়া কোচগুলো দেশের বিভিন্ন রুটে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বাড়তি সুবিধা দেবে ঘরমুখো মানুষদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দম ফেলার ফুসরত যেন নেই শ্রমিক কর্মচারীদের। নির্ধারিত সময়ের পরেও যে যার মত কাজ করছেন কারখানার ২৯টি শপের শ্রমিক কর্মচারীরা। কেউবা কোচে রং, কেউবা ওয়েল্ডিং, কেউবা বৈদ্যুতিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারখানাটিতে।
আর তদারকিতে রয়েছেন সুপারভাইজার, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আর শপ ইনচার্জগন। তবে জনবল সংকট আর উপকরণ (কাঁচামাল) অভাবে ব্যাঘাত ঘটছে মেরামত কাজে।
কারখানার রং ঘরের শ্রমিক সহিদুল ইসলাম বলেন, রং ঘরে অন্তত ৫শ জন শ্রমিক প্রয়োজন। আমি ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদান করার সময় ১০০ জনেরও বেশি কর্মরত ছিল এখানে। কিন্তু এখন মাত্র ৪৫ জন রয়েছেন। আমাদের (৪৫ জন) পুরো বিভাগটির কাজ করতে হচ্ছে। কাজের ব্যস্ততায়ও মনে কষ্ট নেই তার। বললেন, ঈদে নির্বিঘেœ যাতে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে তাহলেই প্রাপ্তির সফলতা।
কারখানা সূত্র জানায়, রমজান মাসে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা, দুপুর দেড়টা টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যস্ত নিয়মিত (রুটিন কাজ) এবং ৪টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওভার টাইম হিসেবে কাজ করে থাকেন শ্রমিক কর্মচারীরা। তাছাড়া রমজান বাদে বছরের অন্যান্য সময়ে সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যস্ত নিয়মিত কাজ করেন শ্রমিক কর্মচারীরা।
তবে জনবল ঘাটতি না থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কোচ মেরামত করে দেয়া যেত মন্তব্য করে কারখানার (উপ-শপ) রং ঘরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ২২১জন শ্রমিক প্রয়োজন কিন্তু রয়েছে মাত্র ৬৭জন। এদের মধ্যে চলতি বছর চারজন যাবেন অবসরে।
কারখানার বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী মোল্লা জানান, কারখানায় মেরামত কাজ বছরের সব সময় হয় কিন্তু ঈদের সময় বাড়তি চাপ থাকে। কারণ যাত্রী পরিবহনে কারখানা থেকে অতিরিক্ত কোচ মেরামত করে দিতে হয় এবং সেটা টাইমফ্রেমের মধ্যে (নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে)। যার ফলে শ্রমিক কর্মচারী এমনকি কর্মকর্তারাও অতিরিক্ত সময় দিয়ে থাকেন ঈদকে সামনে রেখে।তিনি আক্ষেপ করে বলেন, জনবলতো বাড়ছে না, দিন দিন কমছে। সবাই যদি চলে যাওয়ার পর নতুন শ্রমিক আসে তাহলে তো কাজও শেখার বিষয়টি রয়েছে। সরকারের জনবল নিয়োগের বিষয়টি দ্রæত দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
কারখানার ওয়েল্ডিং শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, আমরাতো চলে যাচ্ছি। নতুন যারা আসবে তারা কার কাছে কাজ শিখবে। কাজ শেখা তো খুব সহজ ব্যাপার নয়। তবে নিজেদের কষ্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় অভাবের কারণে (প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি) কাজে ব্যাঘাত ঘটছে মন্তব্য করে ফিটার খালেকুজ্জামান বলেন, ঈদে যাত্রীসেবার জন্য আমরা নিবেদিত হয়ে কাজ করছি কিন্তু কাঁচামাল সঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সময়মত উপকরণ বা সরঞ্জমাদি থাকলে কাজে গতি বাড়তো। আমরা আউটটার্ন (বের হওয়া) দিতে পারতাম তাড়াতাড়ি। রেলওয়ে কারখানা সূত্র জানায়, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক বিভাগে ৩১৭১জন শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও দুই বিভাগে রয়েছে মাত্র ১২৬২জন। এদের মধ্যে যান্ত্রিকে ২৮৩৪জনের মধ্যে ১১০৮জন এবং বৈদ্যুতিকে ৩৩৭জনের মধ্যে ১৫৫জন রয়েছেন।
রেলকর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ অভাবের কারণে অনেক বিঘœ ঘটছে কারখানায় উৎপাদন ও মেরামত কাজে। মালামাল সংগ্রহ খাতে প্রতি বছর প্রায় ৩৯ কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২২ কোটি টাকা। এত কম টাকায় কাঁচামাল সরবরাহ করে উৎপাদন কাজ করা কষ্টকর ব্যাপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ