Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লাজুড়ে বাহারি ইফতারির ছড়াছড়ি পুষ্টিগুণ ও খাদ্যমান নিয়ে প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : কুমিল্লায় এখন বাহারি ইফতারির ছড়াছড়ি। প্রথম রমজান থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন নামিদামি ছোটবড় হোটেল রেস্তোরাঁসহ পাড়া-মহল্ল­ার অলিগলি ও রাস্তায় বাহারি নাম ও দামের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ইফতারের বিভিন্ন আইটেমের মধ্যে মুড়ি, ছোলা, ঘুগনি, আলুচপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি ও শরবত দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। বছরের পর বছর রোজাদারদের প্রতিদিনের ইফতারিতে এ কয়েকটি আইটেম থাকা অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হলেও হালআমলে এসব খাবারের কোনটিই এখন আর আগের মতো পুষ্টিমানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে রমজান মাসে ব্যবসায়িক মুনাফা লাভের জন্য ভেজাল ও নিন্মমানের খাবার তৈরির তথাকথিত ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে প্রায় প্রতিটি ইফতারি সামগ্রী তৈরিতে রাসায়নিক দ্রব্য, গাড়ির পোড়া মোবিল ও পোশাক-পরিচ্ছেদ রঙ করার নিন্মমানের ডাইং কালার ব্যবহৃত হচ্ছে। খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলেছেন, নগদ টাকায় ইফতারি কিনে খেয়ে মানুষ নিজেদের অজান্তেই বিভিন্ন রোগব্যাধি, খাদ্যনালী ও পাকস্থলির প্রদাহ, এসিডিটি বৃদ্ধি, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদিতে আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল ও ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে তারা ইফতারির আইটেমে এ ধরনের খাবার কম রেখে বেশি বেশি পানীয় শরবত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। মুড়ি লম্বা ও চকচকে সাদা করার জন্য চালের সঙ্গে হাইড্রোজ নামের এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে। এতে মুড়ি লম্বা ও ধবধবে সাদা আকার ধারণ করছে। বাহ্যিকভাবে দেখতে আকর্ষণীয় হলেও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো এ মুড়ি খেতে তেমন স্বাদ নেই। বরং বিস্বাদ ও তেতো। গত কয়েক বছর আগ পর্যন্ত মুড়ি ভাজায় জমিতে ব্যবহৃত ইউরিয়া সার ব্যবহৃত হতো। ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তা ধরা পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে হাইড্রোজ মিশিয়ে মুড়ি ভাজা হচ্ছে। জিলাপি ভাজতে ব্যবহৃত হচ্ছে গাড়ির পোড়া নষ্ট মবিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বাহিরে বিভিন্ন এলাকায় পোড়া মবিল পরিশোধনের কারখানা গড়ে উঠেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ড্রাইভারদের কাছ থেকে পুরনো মবিল কিনে এনে একটি চক্র এ কারখানায় পরিশোধন করে। শুধু রমজান মাস নয়, সারাবছর ওই কারখানায় গাড়ির পোড়া মবিল বেচাকেনা হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে ময়লা মবিল ছেঁকে পরিশোধন করে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর জন্য ‘খাবার মবিল’ নামে বিক্রি হয়। অতীতে জিলাপি তেলে ভাজা হতো। বর্তমানে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেলের বদলে পরিশোধিত মবিলে জিলাপি ভাজা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোকানিরা জানিয়েছেন, খাবার মবিলে ভাজা জিলাপি বেশ মচমচে হয়। এছাড়া ছোলা, ঘুগনি, আলুচপ, পেঁয়াজু, বেগুনি এ মবিলে ভাজা হয়। সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে না জানায় তা কিনে খায়। পেঁয়াজু, আলুচপ ও বেগুনিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ডাইং কালার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সামগ্রীতে ফুড কালার ব্যবহার করলেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কিছুটা কম থাকত। কিন্তু কাপড় রঙ করায় ব্যবহৃত ডাইং কালার ব্যবহৃত হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত বাস, রেলস্টেশনে বড় বড় ঢেকচির পানিতে হলুদ ও লাল রঙয়ের বরফ মিশ্রিত শরবত বিক্রি হয়। প্রচন্ড তাপদাহে ক্লান্ত হয়ে মানুষ এ শরবত পান করছেন। আরো জানা গেছে, এক সময় দেশে গিগজ ধানের মুড়ি উৎপাদন হতো। এ ধানের তৈরি মুড়ি খেতে ছিল খুবই সুস্বাদু। কিন্তু বাজার অর্থনীতির যুগে ইরিসহ বিভিন্ন ধরনের ধানের উৎপাদন শুরু হয়। এসব ধান আকারে ছোট ও দেখতে অস্বচ্ছ। এ কারণে হাইড্রোজ মিশিয়ে মুড়ি লম্বা ও বড় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তাইফুর রহমান বলেন, শহরে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী খোলামেলা রেখে বিক্রি হচ্ছে। এতে মশা, মাছি ও পোকার মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী কিভাবে তৈরি হচ্ছে, কি উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে তা সাধারণ মানুষ জানে না। বাইরের খাবার খেয়ে মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন- টাইফয়েড ও জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি ভাজা পোড়াজাতীয় খাবার পরিহার করে ইফতারে শরবত ও পানি বেশি করে পানের পরামর্শ দেন। ভেজাল মেশানো ইফতার সামগ্রী খেয়ে কি ধরনের অসুখ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যাস্ট্রিক, পেপটিক আলসার থেকে শুরু করে কিডনি বিকল এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। তবে তা নির্ভর করবে কি ধরনের ভেজাল খাবার তিনি গ্রহণ করেছেন। তারিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ ইফতার বা খাবার না খেয়ে থাকতে পারবে না। খাবারে ভেজাল মেশানো হচ্ছে কিনা তা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর হতে হবে। সাধারণত প্রায় সব পরিবারে সারাদিন রোজা শেষে ইফতারে যেসব আইটেম থাকে তার কোনটিই এখন আর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিভিন্ন ভেজাল মিশিয়ে ইফতার সামগ্রী ভাজা হচ্ছে। এসব খেয়ে স্বল্পমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি বিকল ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ