পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনভেস্টিগেটিং চ্যানেল : কাতার ও তার উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে আকস্মিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার চাঞ্চল্যকর নেপথ্য কারণ প্রকাশ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি)। এফটি-র মতে, সউদী আরব ও তার মিত্রদের সাথে কাতারের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পিছনে যা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে তা হচ্ছে কাতার ইরান ও আল-কায়দার শাখা সংগঠনগুলোকে ১শ’ কোটি ডলার দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। জিম্মি মুক্তি লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, ইরাকে এক শিকার ভ্রমণে গিয়ে অপহরণকৃত কাতারের রাজ পরিবারের সদস্যদের মুক্তির জন্য এ অর্থ দেয়া হয়। এ গোপন লেনদেন হচ্ছে দোহার সাথে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার নাটকীয় ঘটনার পিছনের অন্যতম কারণ।
এ অর্থ প্রদানের বিশদ বিবরণে বলা হয়ঃ আঞ্চলিক সরকারী কর্মকর্তাদের মতে, ইরানি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও তাদের সমর্থিত আঞ্চলিক শিয়াদের প্রায় ৭০ কোটি ডলার দেয়া হয়েছে। তারা আরো বলেন, ২০ থেকে ৩০ কোটি ডলার দেয়া হয়েছে সিরিয়ার ইসলামী গ্রুপগুলোকে। বেশীরভাগ পেয়েছে আল কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট তাহরির আল-শাম।
একজন আঞ্চলিক আরব কর্মকর্তা জানান, জিহাদি গ্রুপগুলোকে দেয়া মোট অর্থের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। তিনি বলেন, সুতরাং আপনি যদি ইরান ও তার প্রক্সিদের প্রদত্ত ৭০ কোটি ডলার যোগ করেন তাহলে কাতার এ চুক্তিতে আসলে ১শ’ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
ইরান সমর্থিত কট্টরপন্থী ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর কমান্ডাররা বলেন যে তাদের জানা মতে, তাদেরকে অর্থ দেয়ার পর (যার পরিমাণ তারা জানাননি) ইরান প্রায় ৪০ কোটি ডলার পেয়েছে। তারা এ লেনদেনের কিছু তথ্য শেয়ার করতে রাজি হন এ কারণে যে তাদেরকে ভাগের যে অর্থ দেয়া হয়েছে তাতে তারা খুশি নন।
ইরাকে ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়াদের এক সদস্য বলেন, তারা (ইরানিরা) বেশীরভাগ অর্থ নিয়েছে। এ ঘটনা আমাদের কয়েকজনকে হতাশ করেছে, কারণ চুক্তিতে এ রকম ছিল না।
ইরানি জিম্মিদের মুক্তির জন্য ওবামা প্রশাসনের গোপনে নগদ অর্থভর্তি ক্রেট নিক্ষেপের সাথে সংশয় সৃষ্টি না করার জন্য ফিনান্সিয়াল টাইমস বলে যে এ অঞ্চলের জঙ্গি গ্রুপগুলো ও সরকারী কর্মকর্তারা তাদের বলেছেন যে দোহা এক লেনদেনে এ অর্থ প্রদান করে যার ফলে দক্ষিণ ইরাকে যাওয়া কাতারের এক শিকার পার্টির ২৬ জন সদস্য ও সিরিয়ায় জিহাদিদের হাতে আটক ৫০ জঙ্গির মুক্তি নিশ্চিত হয়।
তাদের কথা অনুযায়ী কাতার মধ্যপ্রাচ্যের কালো তালিকাভুক্ত দু’টি শক্তিকে অর্থ প্রদান করে । তারা হচ্ছে সিরিয়ায় লড়াইরত আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপ ও ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সরকারী সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় এফ টি বলে যে এপ্রিল মাসে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি সংঘাত ও তিক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা পূর্ণ এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র গ্যাস সমৃদ্ধ দেশটির ভূমিকার ব্যাপারে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে যা ন্যূনতম পক্ষে বিভ্রান্তিকর। পোডেস্টা ই-মেইলের পর এটা সবার জানা এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরও নিশ্চিত করেছে যে সউদি আরব ও কাতার উভয়েই ইসলামিক স্টেট ও এ অঞ্চলের বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা দুই প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। এ প্রসঙ্গে আমাদের অক্টোবর ২০১৬ সালের পোস্টঃ
ফাঁস হওয়া এক ই-মেইলে যা ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট হিলারি ক্লিনটন তার বর্তমান নির্বাচনী ম্যানেজার জন পোডেস্টার কাছে পাঠিয়েছিলেন যিনি তখন ছিলেন বারাক ওবামার কাউন্সেলর, তাতে তিনি স্বীকার করেন যে কাতার ও সউদি আরব গোপনে আইএসআইএল ও এ অঞ্চলের অন্যান্য উগ্রপন্থী গ্রুপকে আর্থিক ও লজিস্টিক সমর্থন দিচ্ছে।
এ ই-মেইলটি পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তার সাময়িক বিমান হামলা শুরুর মাত্র কয়েকদিন পরই। তার পর দু’ বছর ধরে সে হামলা চলছে যা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসআইএসকে কিভাবে পরাজিত করা যায় তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত ৮ দফা পরিকল্পনার প্রতিনিধিত্ব করছে। হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলে বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিমান হামলা, প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় মিত্র যেমন কুর্দি বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে গোপন/ বিশেষ অভিযান সামগ্রীর সুষ্ঠু ব্যবহার করে এ ধরনের অত্যন্ত অনিয়মিত অথচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নিয়োজিত হওয়া।
কাতার ও সউদি আরবের ভূমিকা নিশ্চিত করে হিলারি সে সময় বলেন যে “আমাদের কূটনৈতিক এবং অধিকতর প্রচলিত গোয়েন্দা সম্পদ ব্যবহার করে কাতার ও সউদি আরবের উপর চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তিনি কুর্দি আঞ্চলিক সরকার বা কে আর জির প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি জোরদার করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, সুন্নী বিশে^র উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য সউদি ও কাতারিদের মধ্যে চলমান প্রতিযোগিতা ও ও মারাত্মক মার্কিন চাপকে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থানে আনতে হবে। একই পন্থায় অনুরূপ , বাস্তব মার্কিন অভিযানের হুমকি লিবিয়া, লেবানন , এমনকি জর্দানের উদারপন্থী শক্তিকে সহায়তা করবে যে সব দেশে ইরাকে আইএসআইএলের সাফল্যে বিদ্রোহীরা ক্রমবর্ধমানভাবে উৎসাহিত হচ্ছে।”
যেভাবেই হোক, গত বছরে এ খবর প্রকাশ আইএসআইএসের অর্থায়নের আরেক উৎস সউদি আরবের কাছে “খবর” হয়ে দেখা দেয় এবং সোমবার সউদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগে কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহন সংযোগ ছিন্ন করার বিস্ময়কর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এফ টি আরো উল্লেখ করে যে দোহা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দেয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং তার প্রতিবেশীদের অবরোধ ভিত্তিহীন কারণের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে বাতিল করে দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে জিম্মি মুক্তি চুক্তি বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেবে না। তবে কাতার সরকারের সাথে জড়িত এক ব্যক্তি স্বীকার করেন যে অর্থপ্রদানের ঘটনা ঘটেছে। ঐ ব্যক্তি প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ বা কাদের তা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানেন না।
সকল প্রকার বিতর্কিত গ্রুপের সাথে দোহার যোগাযোগের অতীত ইতিহাস আছে যার মধ্যে রয়েছে সুদানের দারফুর অঞ্চলের বিদ্রোহী থেকে আফগানিস্তানে তালিবান থেকে গাজার হামাস। কাতার নিজেকে নিরপেক্ষ বলে আখ্যায়িত করে যে কারণে তারা আঞ্চলিক বিরোধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু তার সমালোচকরা বিশেষ করে সউদি আরব ও ইউ এ ই অভিযোগ করে যে কাতার দু’পক্ষের সাথে খেলা জন্যই এ ধরনের মধ্যস্থতাকে ব্যবহার করে এবং উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোকে তারা অর্থ দেয়। অতি সম্প্রতি লিবিয়া ও সিরিয়ায় দিয়েছে। দোহার সমালোকদের মতে, জিম্মি মুক্তি চুক্তি তাদের এ ভূমিকার প্রমাণ।
এক বিস্ময়কর টুইস্টে এক এফ টি সূত্র যিনি সিরিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা এবং সিরিয়ায় জিম্মি মুক্তির ঘটনায় আল-কায়েদা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি বলেন,কাতার কিভাবে জিহাদিদের টাকা দেয় আপনি যদি তা জানতে চান তার জন্য জিম্মি মুক্তি লেনদেনের ঘটনাই যথেষ্ট। আর এটাই প্রথম নয়, যুদ্ধের শুরু থেকে অনেক ঘটনার মধ্যে এটি হচ্ছে একটি।
এফ টি-র সাথে যারা কথা বলেছেন তারা জানান, জিম্মি মুক্তি চুক্তি থেকে দেখা যায় যে কাতার কিভাবে জিম্মিদের জন্য অর্থপ্রদানকে সিরিয়ার জিহাদিদের দেয়ার জন্য ব্যবহার করেছে। কিন্তু কাতারের প্রতিবেশীদের জন্য বড় বিষয় যে তাদের প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী ইরানকে অর্থ প্রদান যাকে আরব বিশে^ বিরোধ সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
জিম্মি মুক্তি ঘটনার শুরু হয় যখন কাতায়েব হিজবুল্লাহ নামে পরিচিত ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া ২০১৫ সালে কাতারিদের অপহরণ করে। তিনজন ইরাকি মিলিশিয়া নেতা জানান যে জিম্মিদের ইরানে রাখা হয়েছিল।
কাতায়েব হিজবুল্লাহ একটি ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ , কিন্তু তাদের সাথে ইরানের প্রধান আঞ্চলিক প্রক্সি লেবাননের জঙ্গি শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহর সংযোগ রয়েছে। হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় ৬ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইরান সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাশারকে সাহায্য করছে।
সিরিয়ার বিদ্রোহী ও কূটনীতিকরা জানান, জিম্মি মুক্তি লেনদেন পৃথক একটি চুক্তির সাথে সম্পর্কিত , তাহল সিরিয়ার ৪টি শহর থেকে অপসারণের ঘটনা যার দু’টি জিহাদি বাহিনী দ্বারা ঘেরাও ও দু’টি শিয়া মিলিশিয়াদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল। একজন পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, এ ব্যবস্থা কাতারকে জিম্মি মুক্তির অর্থ প্রদানের বিষয়টি চাপা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, ইরান ও কাতার দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি চুক্তি আড়াল করার পথ খুঁজছিল ও শেষ পর্যন্ত তা পেয়ে যায়।
গ্রুপগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা বিরোধী দলের দু’ নেতার মতে, কাতার তাহরির আল-শামকে ১২ থেকে ১৪ কোটি ডলার দেয়ার জন্য অপসারণ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে। অন্য ৮ কোটি ডলার ইসলামী গ্রুপ আহরার আল শামকে দেয়া হয়।
এক সিরীয় বিদ্রোহী কমান্ডার বলেন, কাতারিরা যে কাউকে ও প্রত্যেককে টাকা দিতে পারে। কিন্ত কেন? তারা শুধু আমাদের ধ্বংস ডেকে এনেছে।
এ জিম্মি চুক্তির একটি বিভ্রান্তিকর অধ্যায় হল ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি এপ্রিলে বলেন, তার সরকার কাতারি বিমানগুলোতে অবৈধভাবে আসা কোটি কোটি ডলার আটক করেছে। এ অর্থ উল্লেখিত চুক্তির অংশ না অতিরিক্ত অর্থ তা পরিষ্কার নয়।
একজন ঊর্ধতন ইরাকি কর্মকর্তা বলেন, এসব অর্থ স্যুটকেস বোঝাই ছিল।
কাতার এখন আল কায়েদা ও আইএসআইএসকে অর্থপ্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত যা বহু বছর ধরেই জানা ছিল। এখন প্রশ্নঃ এর অর্থ কি এই যে এ অঞ্চল ও বিশ^্যাপী সন্ত্রাসবাদের আরেক দীর্ঘকালীন সমর্থক সউদি আরব রেহাই পেয়ে গেল?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।